বিআরটিসির প্রথম দিন থেকেই বাস চালানোর ঘোষণা থাকলেও তা স্থগিত করা হয় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।
Published : 26 Jan 2024, 04:34 PM
যানজট আর সিগন্যালমুক্ত সড়কে এতদিন ছিল প্রাইভেটকারের রাজত্ব। এবার শুরু হলো সাধারণ মানুষের চলার সুযোগ। ফার্মগেট থেকে উত্তরার পথে বাসে করে এই চলাচলে যাত্রীদের মধ্যে দেখা গেল আনন্দের ছটা।
সোমবার ফার্মগেট থেকে উত্তরার পথে বিআরটিসির বাস সেবা উদ্বোধনের পর দেখা গেল এই চিত্র। গোটা পথে তারা কথা বলছিলেন যানজট ঠেলে চলার ভোগান্তির কথা। গোটা যাত্রাপথেই চলছিল ভিডিও আর ছবি তোলার চেষ্টা।
গত ৩ সেপ্টেম্বর দেশের দীর্ঘতম উড়াল সড়কটি চালুর পর থেকে সেটি ছিল মূলত প্রাইভেট কারের দখলে। বাস চলার সুযোগ থাকলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলো ‘যাত্রী পাওয়া যাবে না’ ভেবে যানজট ঠেলে চলছে নিচের সড়ক দিয়েই।
বিআরটিসির প্রথম দিন থেকেই বাস চালানোর ঘোষণা থাকলেও তা স্থগিত করা হয় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। তবে দুই সপ্তাহ পর এলে আকাঙ্ক্ষিত এই সুযোগ।
বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে ফার্মগেইটের খেজুর বাগান থেকে প্রথম দ্বিতল বাসটি উত্তরার জসিমউদ্দীন বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
তেজগাঁও ওভারপাস ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওতে উঠে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনের র্যাম্প ধরে বিমানবন্দর সড়কে নামতে বাসটি সময় নেয় ২০ মিনিট।
এক্সপ্রেস ওয়ের আগে ও পরে মিলিয়ে যাত্রাপথে সময় লাগে ৪৭ মিনিট। কর্মদিবসে স্বাভাবিক সময়ে দেড় ঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় লাগে এমনিতে।
তবে সময় আরও কম লাগতে পারত। কারণ, শুরুর যাত্রায় বাসগুলো চলেছে ধীরে। ভিডিও ধারণ এবং ছবি তোলার জন্য এক্সপ্রেসওয়ের কয়েকটি জায়গায় গতি কমান চালক। ফেরার পথে সব মিলিয়ে সময় লাগে ৩২ মিনিট। কারণ, সেই পথে বাস চলেছে স্বাভাবিক গতিতে।
বেলা ১২টা ৪৩ মিনিটে জসিম উদ্দিন কাউন্টার থেকে ছাড়ার পর ১২টা ৫৪ মিনিটে কাওলা টোলপ্লাজা পার হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সেটি। বেলা ১টা ১১ মিনিটে ফার্মগেট নেমে চার মিনিট সময় নেয় খেজুরবাগানের কাউন্টারে আসতে।
ফেরার পথে বাসের যাত্রী মোশাররফ হোসেন রিপন রোববার জানেন এই পথে বাস চলবে সোমবার থেকে।
তিনি বলেন, “খোঁজ রাখছিলাম কখন উদ্বোধন হবে। ১১টার দিকে জসিম উদ্দিন কাউন্টারে ছিলাম। আমরা যারা প্রাইভেটকার ব্যবহার করি না তারা বিষয়টি নিয়ে বেশ আগ্রহী। খুব কম সময়ে ফার্মগেট চলে আসলাম, সময় সাশ্রয়ী হবে এটা।”
প্রথম দিন বেশ কিছু ঘাটতিও দেখেছেন এই যাত্রী। যেমন, কোথায় কোথায় কাউন্টার আছে, টিকেট কোথায় পাওয়া যাবে, এসব বিষয়ে ধারণা ছিল না যাত্রীদের।
আরেক যাত্রী সাবিকুন নাহার বলেন, “প্রথম বাসের যাত্রী হিসেবে এই অনুভুতি প্রকাশ করার মত না। রাস্তায় চলাচল করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়, সময় লাগে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে দুর্ভোগ কমবে, সময় বাঁচবে।”
আবুল বাশার নামে একজন বলেন, “নিচের সড়ক দিয়ে গেলে যানজটে পড়তে হত, অনেক সময় নষ্ট হত। অফিসে দেরি হওয়ায় বকাঝকা শুনতে হত। এখন কোনো সমস্যা হবে না, কম সময়ে যাওয়া যাবে।”
বাসের চলাচল উদ্বোধন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী
বলেন, “মানুষ যেন ফার্মগেট থেকে সহজেই বিমানবন্দর ও উত্তরা যেতে পারে সেজন্যই এই বাস সেবা চালু করা হল। আমরা কয়েকদিন পর্যবেক্ষণ করব। পরে সেবা আরও বাড়ানো হবে।”
ফার্মগেটের থেকে উত্তরার পর্যন্ত ভাড়া ঠিক হয়েছে নিচের সড়কের মতোই ৪০ টাকা। বিমানবন্দরে নেমে গেলে ভাড়া ৩৫ টাকা।
বাস সেবা চালুর পর দুই ঘণ্টার মধ্যে খেজুর বাগান কাউন্টারে আড়াইশর মতো টিকেট বিক্রি হয়।
প্রাথমিকভাবে আটটি দ্বিতল বাস দিয়ে এ সেবা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে শুরু হবে এই যাত্রা। চলবে রাত পর্যন্ত।
(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)