কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা কিশোরটির তথ্য বলছে, পোড়া লোহা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়। এ কারণে তাদের এলাকা থেকে অনেক তরুণ-কিশোর এখানে এসেছে লোহা সংগ্রহে।
Published : 05 Apr 2023, 08:21 PM
বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া উড়ছিল ৩০ ঘণ্টা পরেও।
এর মধ্যেই সেখানে ভিড় দেখা গেছে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষদের। পুড়ে যাওয়া টিন, শাটার, গ্রিল, কলাপসিবল গেইটসহ ধাতব অংশের খোঁজে ছিল তারা।
কেউ এসেছিলেন কাপড় কুড়াতে। শত শত কোটি টাকার পণ্য হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এদেরকে আর বাধা দেওয়ার কারণ দেখছেন না।
বুধবার দুপুরে ধ্বংসস্তূপে গিয়ে দেখা গেল, মোবাইল হাতে মানুষজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ লাইভ করছেন, কেউ করছেন ভিডিও। কেউ ভিডিও কলে থেকে গ্রামে বা প্রবাসে অবস্থানরত স্বজনকে ধ্বংসস্তূপ দেখাচ্ছিলেন। ব্যবসায়ী বা দোকানকর্মীরা আশপাশে থাকলেও সব হারিয়ে হাল ছেড়েছেন তারা।
সেখানে দেখা হলো কিশোর মাইনুদ্দীনের সঙ্গে। তার পিঠের বস্তাটা ভরে গেছে। তবু সঙ্গী আশরাফুল আরও কিছু লোহা সংগ্রহ করতে চায়।
কামরাঙ্গীরচর থেকে আসা কিশোরটির তথ্য বলছে, পোড়া লোহা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়। এ কারণে তাদের এলাকা থেকে অনেক তরুণ-কিশোর এখানে এসেছে লোহা সংগ্রহে।
তার সংগ্রহে পাওয়া গেল শাটার, গ্রিলের টুকরো, লোহার ক্যাশবাক্স, গলে যাওয়া ফ্যানের ভেতরের অংশ, সেলাই মেশিনের অবশিষ্টাংশ।
আরেক ছিন্নমূল তরুণ হৃদয়কে দেখা গেল সংগ্রহ করা রড-টিন নিয়ে রিকশায় তুলছেন। এগুলো লালবাগ-কামরাঙ্গীরচরের ভাঙারী ব্যবসায়ীদের কাছে বেচবেন তিনি। বললেন, “লোহার এখন অনেক দাম।”
মঙ্গলবার ভয়াবহ আগুনে ঘণ্টা ছয়েকের মধ্যে দেশে কাপড়ের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি এই মার্কেটটি ভস্মীভূত হয়। ঈদের আগে আগে যেখানে নিত্যদিন কোটি কোটি টাকার কেনাবেচা করে ব্যবসায়ীরা হাসিমুখে বাড়ি ফিরে ভবিষ্যত সমৃদ্ধির হিসাব করতেন, সেই তারা এখন ভগ্ন হৃদয়ে ক্ষতির হিসাব গুনছেন।
বঙ্গবাজারের সামনের রাস্তায় এখন আর পিচ-পাথর দেখা যায় না। পুরো পথের ওপর আধপোড়া কাপড় আর কাপড়।
এর মধ্যেই ছিন্নমূল নারী-পুরুষ আর শিশুদের ব্যবহারযোগ্য বস্ত্র খুঁজে ফিরতে দেখা গেল। নাম বলতে না চাওয়া এক নারী জানান, তারা দুজন এসেছেন লালবাগ থেকে।
মঙ্গলবার আগুন লাগার দিন তাদের এলাকার অনেকেই কাপড় কুড়িয়ে নিয়ে গেছেন। একদিন পরেও পাওয়া যাবে ভেবে এসেছেন তারাও। তবে ভাগ্য খুব একটা সুপ্রসন্ন ছিল না তাদের। দাগ লাগা দুটো জিন্স শুধু সংগ্রহ করতে পেরেছেন বলে জানালেন।
ব্যবসায়ী শফিউদ্দীন বলছেন, মঙ্গলবারও আগুনের মধ্যেই এভাবে কাপড় কুড়ানো মানুষের ভিড় তারা দেখেছিলেন এখানে। তখন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তাদের বাধা দেওয়া হয়। মাইকেও কাপড় ‘চুরি না করতে’ অনুরোধ করা হয়। তবে বুধবার তারা সব ‘দাবি’ ছেড়ে দিয়েছেন।
‘এখান থেকে ব্যবসায়ীদের সংগ্রহ করার মত আর কিছুই নেই; বলে তিনি মনে করছেন।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বঙ্গবাজার থেকে পুড়ে যাওয়া কাপড় সংগ্রহ করছে। সেই কাপড় পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে ব্যবহার করতে চায় তারা। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সহায়তা করতে এক কোটি টাকার একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ তারা নিয়েছে।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বঙ্গবাজারে আগুনে পোড়া একটি লুঙ্গি লাখ টাকায় কিনেছেন সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান খান। সামর্থ্যবান সবাইকে বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তাহসান বলেছেন, “আমরা সবাই যদি একটু একটু করেও এগিয়ে আসি, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো হয়ত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।”