“মুক্তিযোদ্ধাদের যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচারও ইনশাল্লাহ বাংলার মাটিতে হবে,” বলেন তিনি।
Published : 07 Nov 2022, 06:02 PM
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের হত্যার বিচারও হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেছেন, “কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, কথায় কথায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরূপ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া; এই ষড়যন্ত্র, এই রক্তের হোলি খেলা যারা করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।”
৭ নভেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ উপলক্ষে সোমবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক প্রতিবাদ সভায় একথা বলেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর অস্থির পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁক বদলের দিন হিসেবেই স্থান নিয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার জিয়াউর রহমান। ৩ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি।
৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দখল করেন রাষ্ট্রক্ষমতা।
জিয়া মুক্ত হওয়ার পর সামরিক আদালতে কথিত বিচারে তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। ওই সময়ে খালেদ মোশাররফ ও তার সঙ্গী মেজর হায়দারকে হত্যা করা হয়। পরে সামরিক আদালতে বিচারের নামে হত্যা করা হয় অনেককে, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।
এই দিনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে পালন করে। আওয়ামী লীগ এই দিনকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’, বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে।
ওই রাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, “ওই (৭) নভেম্বর রাতে একটি বিমান নামল। আমার বাসা যেহেতু মনিপুরীপাড়ায়, সবই দেখলাম। পরে শুনলাম ‘ক্যু’ হয়েছে। ক্যুটাই তো বুঝলাম না। কীভাবে হল?
“সেনাপ্রধান, বিমানবাহিনীর প্রধান কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান সবই তো আছে। তাহলে ‘ক্যু’ হল কীভাবে? এই ‘ক্যু’র নাম করে কারও বাবা, কারও দাদাকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের কোথায় দাফন করা হয়েছে, তাও স্বজনরা জানেন না।”
অনুষ্ঠানে সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের ছেলে নুরে আলম বলেন, “আমার বাবা বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট ছিলেন। একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়, তোমার বাবা কনভিক্টেড। তাকে (দেলোয়ার হোসেন) কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, “আর কোনো খবর জানি না বাবার। তবেপরে একজন গবেষকের লেখায় জানতে পারি, আমার বাবাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লাশ তো পাইনি।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। তাদের মৃত্যুর পরে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের লাশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা তাদের (ক্যুর নামে যারা স্বজন হারিয়েছেন) ভাগ্যে জোটেনি।
“এই হত্যার বিচার স্বজনরা চাচ্ছেন। তারা একটি রিট আবেদন করেছেন, সেটাও বোধ হয় রুল জারি হয়েছে। আশা করি, এর বিচার এই স্বজনরা জীবিত থাকতেই দেখে যাবে।”
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের দাবি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সেই দাবি পূরণ করে দেখিয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করিয়ে দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
“আমি আশা করি, মুক্তিযোদ্ধাদের যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচারও ইনশাল্লাহ বাংলার মাটিতে হবে। সেই বিচারটাও আমরা দেখতে পাব।”
৭ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ড তদন্তে কমিশন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “৭ নভেম্বর যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের হত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, দেশকে যখন উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে গেছেন, যখন ন্যায়বিচার সুবিচার প্রতিষ্ঠিত করছেন, তখনই তার বিরুদ্ধে আবারও ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদের বিচারপতির (এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক) গাড়িকে তখনই আক্রমণ করছে।
“মীরজাফরকে যেমন মানুষ আজীবন মীরজাফর বলে ঘৃণ্য ব্যক্তি হিসেবে...ঠিক সেভাবে যারা ক্যু করছে, যারা অন্যায়ভাবে .. যারা অন্যায়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের খুন করেছে, শাহাদাত বরণ করতে বাধ্য করেছে, তাদেরও বিচার হবে।”
অনুষ্ঠানে ১৯৭৫ সালে ৭ নভেম্বরে নিহত কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজাহার, মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ্এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বক্তব্য দেন।