কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪ দফা ‘পরামর্শ’ দিয়েছে হাই কোর্ট।
Published : 22 Feb 2023, 06:16 PM
দেশের বর্তমান কোম্পানি আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন এবং প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির মালিকানা সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪ দফা ‘পরামর্শ’ দিয়ে রায় প্রকাশ করেছে হাই কোর্ট।
টপ টেন ফেব্রিক্স অ্যান্ড টেইলার্স লিমিটেডের মালিকানা নিয়ে কোম্পানি আইনে দায়ের করা একটি মামলার নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২৫ অগাস্ট এই রায় দেয় বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।
২৩২ পৃষ্ঠার সেই পূর্ণাঙ্গ রায় বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ের পাশাপাশি আদালতের পর্যবেক্ষণও সেখানে দেওয়া হয়েছে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলেছে, বিদ্যমান কোম্পানি আইন অনেক ক্ষেত্রেই প্রয়োগের অনুপযোগী। ১৯৯৪ সালে আইনটি সামান্য সংশোধন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ১৯১৩ সালের আইনটিই রয়ে গেছে। ১০৯ বছরের পুরনো কোম্পানি আইনের কারণে অনাকাঙ্খিত কোম্পানি বিরোধের উদ্ভব হচ্ছে। উন্নত দেশ হতে হলে অবশ্যই ১০৯ বছরের পুরনো কোম্পানি আইন আমূল পরিবর্তন অপরিহার্য।
বিচারক তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কয়েক লাখ প্রাইভেট ও পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য একটি মাত্র কোম্পানি আদালত। অসংখ্য কোম্পানি বিরোধের জন্য একটি কোম্পানি বেঞ্চ থাকার কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রম চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারলে কোম্পানিগুলো নিজে উন্নত হয়ে দেশকেও উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
“আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের মত আমাদের কোম্পানি আইনকে ঢেলে না সাজালে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে উঠতে অনেক সময় লেগে যাবে। উন্নত ও যুগোপযোগী কোম্পানি আইনেই উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে উঠবে।”
রায়ে হাই কোর্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ১৪টি পরামর্শ দিয়েছে।
# ভারতের কোম্পানি আইনের আদলে আইনটি সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন ও আইনটির হালনাগাদ করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
# মামলার সংখ্যানুপাতে প্রত্যেক জেলায় এক বা একাধিক কোম্পানি ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
# প্রত্যেক বিভাগে একটি করে কোম্পানি আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
# কোম্পানি আইনের অধীনে অপরাধের জন্য বিশেষ ফৌজদারি আদালত প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
# যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও কার্যসমূহের পরিদপ্তরকে (আরজেএসসি) আধুনিকীকরণ ও পরিদপ্তরটির আইনি কাঠামো শক্তিশালী করতে পদক্ষেপ নেওয়া।
# ‘কর্পোরেট ল কোড’ বাংলায় প্রকাশ করে তা প্রত্যেক কম্পানির কার্যালয়ে রাখার ব্যবস্থা করা।
# পদ সৃষ্টি করে প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন স্থায়ী আইন কর্মকর্তা ও অভিজ্ঞ আইনজীবীকে পরামর্শক রাখা বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নেওয়া।
# প্রত্যেক জেলায় ‘কোম্পানি, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা’ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। বছরে অন্তত একবার প্রত্যেক কোম্পানির কর্মকর্তার জন্য সে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করা।
# প্রত্যেক কোম্পানিতে একজন নিরপেক্ষ পরিচালক, সচিব, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা করা।
# পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে কোম্পানিতে সার্বক্ষণিক সচিব রাখা বাধ্যতামূলক করতে পরিপত্র জারি করা।
# কোম্পানির নিবন্ধনে যে শহরের কথা উল্লেখ থাকবে, সে শহরে বার্ষিক সাধারণ সভা বাধ্যতামূলক করতে পরিপত্র জারি করা।
# শেয়ারবাজারসংক্রান্ত আইনের সঙ্গে সংঘাত, এজিএমে অনাহুত পরিস্থিতি এড়ানো ও আয়কর দাখিল সহজ করতে পদক্ষেপ নেওয়া।
# এজিএমে বা অন্য কোনো উপলক্ষে অংশীদারদের উপহার, উপঢৌকন, নগদ অর্থ দেওয়া নিষিদ্ধ করে এবং এজিএম করতে না পারলে কোম্পানির নিবন্ধন বাতিলের বিধান রেখে বিধি প্রণয়ন করা।
# আরজেএসসিতে লাভ-ক্ষতি-উদ্বৃত্তের হিসাব, আয়কর বা কর দাখিলের বিধি-বিধান করা।
এসব পরামর্শের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যসচিব ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যানকে রায়ের অনুলিপি পাঠাতে বলা হয়েছে।