অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও বিএনপি ও জামায়াতের প্রকাশ্যে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক পাহারায় রয়েছে পুলিশ।
Published : 01 Nov 2023, 11:22 AM
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অবরোধের দ্বিতীয় দিন রাজধানীতে নগর পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস চলাচল ও যাত্রী বাড়লেও দূরপাল্লার বাস চলতে দেখা গেছে হাতেগোনা কয়েকটি।
বুধবার সকালে নগরীর বিভিন্ন বাস স্টপেজে জমায়েত হওয়া যাত্রীদের মধ্যে কর্মস্থলমুখী মানুষই ছিল বেশি। গাজীপুরের মত আশেপাশের গন্তব্যে অনেকে ছুটলেও বাসগুলোতে অন্যদিনের মত ঠাসাঠাসি ভিড় ছিল না।
রাজধানীর শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ এলাকায় চলাচলকারী বাস ও মানুষের উপস্থিতি অবরোধের প্রথম দিনের চেয়ে ছিল বেশি। মতিঝিলের ব্যাংকপাড়া, পুঁজিবাজার, বেসরকারি অফিস ও সচিবালয়মুখী গুলিস্তানের এই রুটে সবচেয়ে বেশি যানবাহনের চাপ থাকে সকাল ৯টা পর্যন্ত।
একই পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনকরা বাসও চলাচল করে। যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার ব্যবহার করে এই রুটে গাজীপুরগামী বাসও চলাচল করে। সকালে এই পথে যাত্রীর চাপ দেখা গেছে বেশি।
ছবিঘর: অবরোধের দ্বিতীয় দিন
কাজলা এলাকায় সকাল ৯টার দিকে কথা হয় মাতুয়াইল মেডিকেল থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলাচলকারী বাস শ্রাবণ পরিবহনের চালক হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গতকাল গাড়ি চালাইনি। আজকা বের করলাম। এহন অফিসের যাত্রীদের ট্রিপ নিয়া যাইতাছি। রাস্তায় গাড়ি থাকলেও মাতুয়াইল থাইকা একটানে আইলাম, কুনো জ্যাম নাই।”
গুলিস্তান থেকে মগবাজার, সাতরাস্তা, তিব্বত ও মহাখালী হয়ে গাজীপুরের পথে ছুটতে দেখা গেছে গুলিস্তান-গাজীপুর পরিবহন, গাজীপুর পরিবহন, বলাকা ও আজমেরী গ্লোরীসহ কয়েকটি কোম্পানির বাস। তবে প্রতিদিন সকালে অফিস সময়ে মহাখালীর রাস্তায় যে যানজট থাকে, বুধবার ছিল না সেই পুরনো চেহারা।
অপরদিকে সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পথে চলাচলকারী বাসগুলোও তেমন ছাড়েনি। টার্মিনাল ও এর আশেপাশে অলস দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বাসগুলো। যাত্রীও ছিল কম।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলা বাসগুলোকেও টার্মিনালের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রতিদিনের মত ছিল না যাত্রীর চাপ।
ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহনের যাত্রাবাড়ী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক দেলাওয়ার হোসেন বলেন, “যাত্রী পাইলে বাস ছাড়া হচ্ছে। এক বাস ছাড়তে দেড়-থেকে দুই ঘণ্টার মত লাগছে।”
সকাল ৭টায় যে বাস বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল তা দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার ঢাকা থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশে ইলিশ পরিবহন চলাচল করলেও বুধবার তা ছিল বন্ধ। এই পরিবহনের যাত্রাবাড়ী কাউন্টারের কর্মী মোশাররফ হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মালিকের মানা, আইজ কোনো গাড়ি চলবে না। কাইলকা সিদ্ধান্ত নিবে চলব কিনা।”
ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ-খুলনা সাতক্ষীরা রুটের ইমাদ পরিবহনের সায়দাবাদ বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নাইম ইসলাম বলেন, “গতকাল সারাদিনে বাস চলেছে একটি। আজ সকাল ৭টায় একটি বাস গেছে। অনেকে ফোন করে আসছেন। টিকেট বিক্রি শেষ হলে বাস যাবে।”
সড়কে যানজট না থাকার কথা জানিয়ে নরসিংদী ও ঢাকার কলাবাগান রুটে চলাচলকারী বাস মেঘলা পরিবহনের সহকারী মো. রুবেল বলেন, “কোনো জ্যাম নাই। খালি সিগন্যালে দাঁড়াইছি আজ। সাইনবোর্ড থাইকা যাত্রী বেশি উঠতাছে।”
রাজধানীতে রাইড শেয়ার করা মোটরসাইকেলের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কাকরাইলে সংঘর্ষের পর হরতালের ডাক আসে। এরপর বিএনপি ও জামায়াত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার অবরোধের ঘোষণা দেয়। তবে অবরোধের মধ্যেও সারাদেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন চালু রাখার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
তিনদিনের এই অবরোধের প্রথমদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুর চালানো হয়। বুধবার সকালেও চট্টগ্রামে পোশাক শ্রমিকদের বহনকারী একটি বাস ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যাত্রী কম আর এমন সহিংসতার শঙ্কার কারণেই বাস ছাড়া নিয়ে সংশয়ের কথা বলছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা।
শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ এলাকায় অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও বিএনপি ও জামায়াতের তৎপরতা দেখা যায়নি। সড়কে ছিলেন না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। তবে বিভিন্ন পয়েন্টে সতর্ক পাহারায় ছিল পুলিশ।