“সেখানে কথা বলার মতো পরিবেশই নেই,” মেলার ‘লেখক বলছি’ মঞ্চের অবস্থান নিয়ে কবি শাহেদ কায়েস।
Published : 05 Feb 2023, 10:14 PM
ক্রেতা না বাড়লেও লোক সমাগম বাড়ায় একুশে বইমেলার পঞ্চম দিনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা। তবে অব্যবস্থাপনার নানা চিত্র দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থী ও লেখকেরা।
বিক্রয়কর্মীরা মনে করছেন, পহেলা ফাল্গুন থেকে বই বিক্রির ধুম শুরু হবে। তাছাড়া ছুটির দিনেও বই বিক্রি বেশি হবে।
এখনও প্রত্যাশিত বিক্রি শুরু হয়নি জানিয়ে চারুলিপি প্রকাশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ পারভেজ বলেন, “সাধারণত মেলার প্রথম সপ্তাহে একটু কমই বিক্রি হয়। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মেলায় বিক্রি বাড়ে এবং পহেলা ফাল্গুন থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি ভালো বিক্রি হয়। মেলার শেষ সপ্তাহেও ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছি।”
অন্যধারা পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী সাগর বলেন, "লোকজন মেলায় আসতে শুরু করেছে। এতে সমাগম বাড়ছে। মানুষ কম থাকলে তো মেলার আমেজ থাকে না।
“এবার মেলার শুরুর দিন থেকেই লোক সমাগম ভালো হচ্ছে। বিক্রিও ভালো হবে আশা করি।"
তবে মেলার অব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন কবি শাহেদ কায়েস।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ব্যবস্থাপনা দেখছি এবার মেলায়। করোনার মাঝেও যে মেলা হয়েছে, সেখানেও কিছুটা গোছানো ব্যাপার ছিল। এবার স্টল বিন্যাসের পরিবর্তন করা হয়েছে।
“কোনো স্টলের সারিতেই দিকনির্দেশিকা নাই। ফলে স্টল খুঁজে পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। করোনার পর এবার আরও নান্দনিক মেলা হবে বলে আশা ছিল। কিন্তু মেলার ব্যবস্থাপনা হতাশাজনক।“
এবার 'লেখক বলছি' মঞ্চটি করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব দিকের খাবার দোকানের কাছে। এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে শাহেদ কায়েস বললেন, "লেখকদের কথা বলার জন্য মঞ্চ করা হয়েছে এমন একটি জায়গায়, সেখানে খাবারের দুই স্টলের মাঝখানে। সেখানে কথা বলার মতো পরিবেশই নেই।"
বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরে সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় গিয়ে দেখা যায়- বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। পরে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলামকে ফোন করা হলে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে সেখানে বাতি জ্বলে।
ছোটকাগজের কর্মীরা জানান, মেলা শুরুর দুই দিন পর লিটলম্যাগ চত্বরে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। কিন্তু সন্ধ্যার পর পুরো মেলায় আলো জ্বললেও লিটলম্যাগ চত্বরে আলো জ্বালাতে ‘ভুলে যান’ আয়োজকেরা।
এ চত্বরে ৪০ নম্বর স্টলে কথা হয় থিয়েটার পত্রিকা ক্ষ্যাপার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাহবুব জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, "পুরো মেলায় আলো জ্বললেও লিটলম্যাগ চত্বরে কেন আলো জ্বলতে দেরি হয়? এই অবহেলা কেন?"
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মুজাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মেলার শুরুর পর যে সমস্যাগুলো হচ্ছে, আমরা সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করেছি।"
মেলায় রোববারও দেখা যায় ৩/৪ টি স্টলে চলছে নির্মাণ কাজ। ঋদ্ধি প্রকাশনের স্টল পঞ্চম দিনেও বন্ধ দেখা যায়।
এ বিষয়ে মুজাহিদুল বলেন, “পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে পরে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যার জন্য তারা কাজ শুরু করতে দেরি করেছে। আশা করি ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়া যেসব স্টল মেলার নিয়ম মানছে না, তাদের ব্যাপারে আমরা তালিকা করছি। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
কোভিড মহামারীর পর প্রথমবার মেলায় এসে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন অভিনেত্রী তনিমা হামিদ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তো বইমেলায় এসে প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা দিতাম। করোনার জন্য বিগত দুই বছর মেলায় আসা হয়নি। এবার এসে ভীষণ ভালো লাগছে।"
মেলায় এসে বন্ধু রেশমা আক্তারের উপন্যাস 'ধাওয়া' সংগ্রহ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, "আরও কিছু পছন্দের বই কিনব। মেলায় ঘুরতে খুব ভালো লাগছে।"
রোববার বিকেল ৩টায় মেলা শুরু হয়ে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। এদিন মেলায় ৭৩টি নতুন বই আসার কথা জানিয়েছে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ।
‘শিল্পী সমরজিৎ নিজের চিত্রভাষা নির্মাণ করেছেন’
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : সমরজিৎ রায় চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
শিল্পী হাশেম খান বলেন, “শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছিলেন নিষ্ঠাবান একজন শিক্ষক। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী এই শিল্পী চাটুকারিতাকে কখনও প্রশ্রয় দেননি বরং ভালোবাসা দিয়েই সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছিলেন। তিনি তার নিজের চিত্রভাষা নির্মাণ করতে পেরেছিলেন।"
প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জাহিদ মুস্তাফা বলেন, “বাংলাদেশের বরেণ্য শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী হাতে লেখা বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম নকশাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান লোগোসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের লোগোর প্রণেতা। তিনি ছবি আঁকতেন আমাদের দেশের রূপবৈচিত্র্যকে বিষয়বস্তু করে।
“মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও ছবি এঁকেছেন তিনি। এছাড়া নিসর্গ ও মানুষ ছিল তার প্রিয় বিষয়। গ্রামীণ দৃশ্যাবলি, সেই সঙ্গে তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্যাবলি তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। শিল্পী সমরজিৎ তার জীবনব্যাপী প্রগতিশীল আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করেছেন। শান্তির অন্বেষায় তার চিত্রপটে রং, রেখা, রূপ- সব একাকার হয়ে আছে।"
সমরজিৎ রায় চৌধুরীকে একাধারে প্রতিভাবান শিল্পী, অভিভাবকসুলভ শিক্ষক এবং বন্ধুবৎসল মানুষ বর্ণনা করে প্রাবন্ধিক বলেন, “পরম্পরা-নির্ভর শিল্পী হলেও তার চিত্রভাষায় আধুনিকতার ছোঁয়াও ছিল স্পষ্ট। শিল্প-সৃষ্টির ক্ষেত্রে আনন্দ ও লাবণ্য তৈরিতে তিনি বিশেষভাবে জোর দিয়েছিলেন। পরিচিত ও অপরিচিত দু’ধরনের মোটিফের ব্যবহার তার চিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। প্রকৃতি, মানুষ আর লালসবুজের বিন্যাস তার চিত্রকে বিশিষ্টতা দান করেছে।"
শিল্পী হাশেম খান বলেন, “শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী ছিলেন নিষ্ঠাবান একজন শিক্ষক। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী এই শিল্পী চাটুকারিতাকে কখনও প্রশ্রয় দেননি বরং ভালোবাসা দিয়েই সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের মন জয় করেছিলেন। তিনি তার নিজের চিত্রভাষা নির্মাণ করতে পেরেছিলেন।"
আলোচনায় অংশ নেন মইনুদ্দীন খালেদ ও মুস্তাফা জামান।
মেলার 'লেখক বলছি' অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কুদরত-ই-হুদা, বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, আবু সাঈদ তুলু, ফরিদুর রহমান।
মূলমঞ্চে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি আলতাফ হোসেন, আসলাম সানী ও মারুফ রায়হান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন মীর বরকত, ইকবাল খোরশেদ ও কাজী বুশরা আহমেদ তিথি।
এছাড়া ছিল ফয়জুল আলম পাপ্পুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন’-এর পরিবেশনা।
সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও প্রিয়াংকা গোপ। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সুবীর চন্দ্র ঘোষ (তবলা), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কী-বোর্ড), ফিরোজ খান (সেতার) ও হাসান আলী (বাঁশি)।
সোমবার যা থাকছে
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : কাজী রোজী এবং স্মরণ : দিলারা হাশেম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নাসির আহমেদ ও তপন রায়। আলোচনায় অংশ নেবেন আসলাম সানী, শাহেদ কায়েস, আনিসুর রহমান ও শাহনাজ মুন্নী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অসীম সাহা।