রিভিউ খারিজ: অধ্যাপক তাহেরের দুই খুনিকে যেতে হবে ফাঁসিকাষ্ঠে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদকে ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2023, 08:04 AM
Updated : 2 March 2023, 08:04 AM

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের দুই আসামিসহ তিনজনের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।

সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের ফলে ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এবং নিহত অধ্যাপক তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর বাধা থাকছে না। অবশ্য তার আগে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন।

আর জাহাঙ্গীরের ভাই যাবজ্জীবন সাজায় দণ্ডিত আবদুস সালামকেও পুরো সাজা ভোগ করতে হবে।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আট সদস্যের আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।

শিক্ষক তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং দুই জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে গত বছরের ৫ এপ্রিল রায় দেয় আপিল বিভাগ।

সেই রায়ে অধ্যাপক তাহেরের এক সময়ের ছাত্র, পরে বিভাগীয় সহকর্মী মহিউদ্দন ও তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। আর সালাম ও তার আত্মীয় নাজমুলের যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকে।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পরে ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর ও সালাম। সেই রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিলেন আপিল বিভাগ।

আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এসএন গোস্বামী ও অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ নিখোঁজ হন। দুইদিন পর শিক্ষক কোয়ার্টারের বাসার বাইরে ম্যানহোলে তার লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় পর ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার হত্যা থানায় মামলা দায়ের করেন।

তদন্ত শেষে ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তাতে অধ্যাপক তাহেরের সহকর্মী মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীরেরে ভাই আবদুস সালাম, তাদের (জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালাম) বাবা আজিমুদ্দীন মুন্সী এবং সালামের আত্মীয় নাজমুলকে আসামি করা হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছিলেন, মহিউদ্দিন ও সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাহের আহমেদকে হত্যা করার কাজে লাগান। তবে মিয়া মহিউদ্দিন আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।

পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, তখনকার সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মহিউদ্দিন পদোন্নতি পেতে বিভাগে আবেদন করেছিলেন। পদোন্নতির ওই কমিটিতে ড. তাহেরও ছিলেন। তিনি মহিউদ্দিনের কয়েকটি প্রতারণা প্রাথমিকভাবে ধরে ফেলেন। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে পরে এই সব প্রতারণা প্রমাণিত হয়।

সেই অসন্তোষ থেকে মিয়া মহিউদ্দিন এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী তাহেরকে বাসায় হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ঢুকিয়ে রাখা হয়।

৩৯ জনের সাক্ষ্য ও জেরার পর ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর, সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এছাড়া সালেহী ও আজিমুদ্দিনকে খালাস দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হাই কোর্ট মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসির রায় বহাল রাখে এবং সালাম ও নাজমুলের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে আপিল বিভাগেও তা বহাল থাকে।

আপিল বিভাগের রিভিউ রায়ের সময়ে অধ্যাপক তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা আহমেদ, তাদের পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও শাকিলা রওশন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

Also Read: অধ্যাপক তাহের হত্যা: ২ আসামির মৃত্যুদণ্ড আপিলেও বহাল