নওগাঁয় র্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা অনুসন্ধানে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।
রিটকারী আইনজীবী ব্যরিস্টার মনোজ কুমার ভৌমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।
আদালত কমিটি গঠনের এ নির্দেশনা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে বাস্তবায়ন করতে বলেছে। জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়েছে কমিটিতে।
তদন্ত শেষ করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
জেসমিনকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে জড়িত র্যাব সদস্যদের তদন্ত চলাকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
এছাড়া মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া এবং গ্রেপ্তার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক নিজেই তার রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর, শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে।
আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানে তার মৃত্যু হয়।
পরিবারের অভিযোগ, র্যাবের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। সেই অভিযোগ অস্বীকার করে র্যাব বলছে, ৪৫ বছর বয়সী ওই নারীকে আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
র্যাব হেফাজতে মৃত্যুর এই ঘটনায় হাই কোর্ট জেসমিনের লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করে। র্যাবের কে কে জিজ্ঞাসাবাদে ছিল, তাও জানতে চায়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে চিকিৎসক বলেন, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কারণ ‘মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ’।
জেসমিনকে আটকের পর তাকেসহ আরও এক যুবককে আসামি করে রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল।
জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় হলে ঢাকায় বাহিনীটির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে একটি চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল। এই অভিযোগে সেই সচিবের উপস্থিতিতে আটক করা হয় তাকে।
পরে জেসমিনকে আটকের অভিযানে থাকা ১১ সদস্যকে প্রত্যাহার করে র্যাব-৫ এর ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
এদিকে র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে ২৮ মার্চ এই রিট মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
জনস্বার্থে করা ওই রিট মামলায় স্বরাষ্ট্র সচিব, র্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার কমিটি করার আদেশ দিল হাই কোর্ট।