ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: জজ আদালতে প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন আবেদন

আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৬ অগাস্ট দিন রেখেছে, ওই সময় পর্যন্ত জামিনে থাকবেন মতিউর রহমান।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2023, 08:25 AM
Updated : 3 May 2023, 08:25 AM

রমনা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় হাই কোর্টের আগাম জামিনের মেয়াদপূর্তির আগেই ঢাকার জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান।

বুধবার তিনি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আছাদুজ্জামানের আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিননামা দাখিল করেন এবং আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য ১৬ অগাস্ট দিন ধার্য করেন।

ওই সময় পর্যন্ত মতিউর রহমান জামিনে থাকবেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছন তার আইনজীবী প্রশান্ত কুমার কর্মকার।

আদালতে প্রথম আলো সম্পাদকের জামিন আবেদন বিষয়ে শুনানি করেন আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ২ এপ্রিল মতিউর রহমানকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়।

স্বাধীনতা দিবসে এক সংবাদ প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, জাতির জন্য মানহানিকর’ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ ও প্রচারের অভিযোগে ২৯ মার্চ মধ্যরাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন আইনজীবী মশিউর মালেক। 

ওই মামলায় পত্রিকাটির নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া নাম উল্লেখ না করে একজন ‘সহযোগী ক্যামেরাম্যানকে’ আসামি করা হয় মামলার এজাহারে। পরে জামিনে মুক্তি পান শামস।

একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।”

Also Read: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: প্রথম আলো সম্পাদকের ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন

Also Read: জামিন নাকচ, সাংবাদিক শামস কারাগারে

Also Read: প্রথম আলো সম্পাদককে ‘হুকুমের আসামি’ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

Also Read: বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আবার বিতর্কে

Also Read: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবিলম্বে স্থগিত করুন: জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান

ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাত্তর টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদনও প্রচার করা হয়।

সোশাল মিডিয়ায় ওই ফেটোকার্ড ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলন।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিন পর বুধবার সকালে খবর আসে, শামসকে তার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘সিআইডি’ পরিচয় দিয়ে। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া তেজগাঁও থানায় শামসকে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। পরের রাতে রমনা থানায় মামলা করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মশিউর মালেক।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ৩১ ও ৩৫ ধারায় দায়ের করা এ মামলায় ‘প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী মশিউর মালেক অভিযোগ করেছেন, স্বাধীনতা দিবসের দিনে প্রথম আলো ‘অসৎ উদশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও রাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে জনমনে ‘অসন্তোষ’ সৃষ্টি হয়েছে এবং দেশে ‘অস্থিতিশীল পরিবেশ’ সৃষ্টি হয়ে ‘আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটার উপক্রম’ হয়েছে।