Published : 06 Apr 2023, 10:20 PM
ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা বিদেশি পাঠ্যক্রমে পড়তে গিয়ে যেন নিজের ‘শেকড়’কে না ভোলে, তা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
তিনি বলেছেন, “এমন প্রতিষ্ঠান থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীরা যদি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি না জানে, তার শেকড়টা না জানে- তাহলে বিশ্বের অন্য এক প্রান্তের মানুষের মতোই তাকে থাকতে হবে। তাকে দেশটা চিনতে দিতে হবে, সে যেন শেকড়বিহীন মানুষ না হয়।
“তার নিজের জন্যই দেশকে, দেশের ইতিহাসকে চিনতে হবে। দেশের ভেতরের অন্তর্নিহিত যে শক্তি, সেটা জানলেই সে আত্মশক্তিতে বলীয়ান একজন মানুষ হয়ে বড় হবে।”
বৃহস্পতিবার ঢাকার বাড্ডার সাতারকুল এলাকায় গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এসটিএস গ্রুপের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল কারিকুলামে পাঠদান করতে যাচ্ছে।
দীপু মনি বলেন, “বিশ্বের নানা ভাষা থেকে যে আমার ভাষা সমৃদ্ধ ও বেগবান হয়েছে, আমাদের সাহিত্য যে এত সমৃদ্ধ- সেটা জানার জন্য তাদের বাংলাদেশকে জানতে হবে। এখানে যারা পড়বে তারা বাড়িতে, বন্ধুবান্ধব কিংবা সমাজে যে বাস্তবতা দেখে, এখানেও সেই ধারাবাহিকতার একটা বাস্তবতা দেখবে।
“কিন্তু এটাই কি বাংলাদেশ, এটা পুরো বাংলাদেশ না। যারা তার মতো সৌভাগ্যবান না, তাদের সাহায্যের জন্য- তাদের তুলে আনার জন্য তাকে বাংলাদেশকে জানতে হবে।”
সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদেরও এসব স্কুলে সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এই উদ্যোক্তারাই কিন্তু আইএসডি (ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা) করেছিলেন। সেখানে স্কলারশিপের সুযোগ ছিল, অনেকে সেই সুযোগ নিয়ে পড়েছে।
“আমি একজনের কথা মনে করতে পারি যে ৭৫ শতাংশ স্কলারশিপ নিয়ে পড়েছে। আমি যার কথা বলছি, সে আমার সন্তান। সুবিধাবঞ্চিত কিন্তু খুব মেধাবী যদি হয়, তাহলে আশা করি এই স্কুলেও আপনারা এই ব্যবস্থা রাখবেন। নিশ্চয়ই আপনাদের হিসেবের মধ্যে তা আছে।”
দীপু মনি বলেন, “এমন প্রতিষ্ঠান যত হবে, প্রতিযোগিতা তত বাড়বে, প্রতিযোগিতা বাড়লে আমরা ভালো মানের প্রতিষ্ঠান পাব। আমাদের শিক্ষার্থীরা দেশে বসে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা পাবে। কাজেই আপনাদের এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।”
দেশের শিক্ষাখাতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন আর কোনো স্কুলে ভাঙ্গা বেড়া, টিনের চালা নেই তা যেমন সত্যি; তেমনি সব স্কুলে খুব উঁচুমানের অবকাঠামো নেই- সেটাও সত্যি।
“তাই আমার যেসব স্কুলে এমন সুন্দর সুবিধা নেই, সেখানেও আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা সুযোগ তৈরি করতে পারছি কি না, স্বপ্ন দেখাতে পারছি কি না- সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “বাইরের বিনিয়োগ আসছে না কেন প্রধানমন্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করেন। এখন বাইরে থেকে যারা আসবে, তারা ভাবে ভালো স্কুল আছে কি না, তাদের বাচ্চারা কোথায় পড়বে। ভালো স্কুল, ভালো হাসপাতাল তাদের চাওয়া; এগুলো না থাকলে বর্তমান বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ডে ওরা আসবে না।”
এসটিএস গ্রুপের এই অংশীদার বলেন, “১৯৯৭ সালে আমরা এই গ্রুপ শুরু করি। তখনও বড় ব্যবসায়ী হইনি, হতে চাইছিলাম। প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালকে শিল্পখাত ঘোষণা করেছিলেন বলেই আমরা শুরু করতে পেরেছিলাম। গ্লেনরিচের চমৎকার ক্যাম্পাস দেখতে পেরে এবং স্কুলটি যে ধারণা নিয়ে কাজ করবে, তা জানতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, “এসটিএস আমাদের বেসরকারি খাতের শক্তির একটি নিদর্শন। আমার অনুরোধ থাকবে, যারা এই স্কুলের সাথে যুক্ত আছেন, তারা যেন আমাদের এখানে এমন পরিবেশ তৈরি করে- যাতে এই স্কুল থেকে যে শিক্ষার্থীরা বের হবে তারা যেন দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানে।
“ব্রিটিশ বা আমেরিকান কারিকুলাম পড়লেও যেন তারা দেশে টিকে থাকার জ্ঞানটাও অর্জন করে। যে সমাজে তারা থাকছে, সেই সমাজের সাথে যেন তারা তাল মেলাতে পারে। স্থানীয় রাজনীতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য বোঝার মত আত্মবিশ্বাস যেন তাদের মধ্যে তৈরি করা হয়। মানসিক বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক সচেতনতা এগুলোও যেন স্কুলিংয়ের অংশ হয়।”
অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় শিক্ষায় সাম্যের ওপর জোর দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মশিউর রহমান।
বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের ডেপুটি হাই কমিশনার ম্যাট ক্যানেল বলেন, “এসটিএস গ্রুপ প্রিমিয়াম কেমব্রিজ কারিকুলাম স্কুল উদ্বোধন করেছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের। এসটিএস গ্রুপের পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে গ্লেনরিচ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল চালু করার। এজন্য আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।”
এসটিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান বব কুন্দানমাল বলেন, “আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের তরুণদের বৈশ্বিকভাবে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থার সমপর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য তাদের প্রস্তুত করে তোলা।
“আর সে লক্ষ্যেই, আমরা ‘স্কুল অব লাইফ’ ধারণা ও উন্নত পাঠ্যক্রম নিয়ে এসেছি, যা তরুণদের ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে ভূমিকা রাখবে।”
স্কুলের অধ্যক্ষ রামেশ মুডগাল বলেন, "এসটিএস গ্রুপ এবং টিম গ্লেনরিচের জন্য এটি একটি স্বপ্নের প্রজেক্ট। বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষাখাতে এই স্কুলটি একটি নিদর্শন হতে যাচ্ছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসডিজি গোল অর্জন এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার জন্য বিশ্বমানের শিক্ষাদানের জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
“আমরা বিশ্বাস করি সব শিক্ষার্থী আলাদা এবং সবার নিজস্ব ক্ষেত্রে মেধা আছে। তাদেরকে একটি পরিপূর্ণ জীবন গড়ে দিতে আমাদের স্কুল কাজ করবে।"
গ্লেনরিচ স্কুলের তরফে জানানো হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ‘স্কুল অব লাইফ’ ধারণা নিয়ে কাজ করবে, যেখানে শিক্ষার্থীরা স্বস্তিদায়ক পরিবেশে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠ গ্রহণ করবে। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের সহযোগিতায় থাকবে ফ্রেঞ্চ ভাষার কোর্স, শেখানো হবে স্টেমরোবো রোবোটিকস। স্কুলের ম্যাথ ল্যাবের মাধ্যমে ‘ম্যাথ বাডি’ সুবিধা দেওয়া হবে, আর অ্যাসোসিয়েটেড বোর্ড অব রয়্যাল স্কুলস অব মিউজিক সঙ্গীতের পাঠদান করবে।