কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকার নাখালপাড়ার ব্যবসায়ী এ টি এম আলমগীরের সন্তান।
Published : 16 Feb 2023, 11:32 PM
স্বজন হারানোর কোনো মাতম নেই, নিস্তব্ধতা গোটা বাড়িজুড়ে। সবাই কথা বলছেন নিচু স্বরে। কান্নাকাটি থামিয়ে বাবা-মা এখন ছোট সন্তানটির মুখটি শেষ বার দেখার অপেক্ষায়।
ঢাকার পশ্চিম নাখালপাড়ায় ‘জুবিলেশন’ নামের বাড়িটিতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে বৃহস্পতিবার। এই বাড়িরই ছেলে আরিয়ান আলম দীপ্ত, যিনি তিন দিন আগে কানাডায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
‘জুবিলেশন’ এ বাবা-মার সঙ্গেই থাকতেন দীপ্ত। তার স্পর্শ জড়ানো বাড়িটিতে এখন তার স্মৃতি খুঁজে ফিরছেন অন্যরা।
এই ভবন নির্মাণের সময় থেকে কাজ করছেন বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দীপ্তরা যখন এই ভবনে এল, তখন সে সবে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
চোখের সামনে বড় হওয়া দীপ্তর এমন মৃত্যুতে কাঁদছেন মনজুরুলও।
ঢাকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ‘মাস্টারমাইন্ড’ ও পরে অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর শেষ করে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর কানাডায় যান দীপ্ত।
সেখানে গিয়ে প্রথমে একটি কলেজ থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে তিনি টরন্টোর হাম্বার কলেজে ভর্তি হন। লক্ষ্য ছিল চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হওয়া।
দীপ্তর বাবা আবাসন ব্যবসায়ী এ টি এম আলমগীর ছেলের শোকে অনেকটা অসুস্থ।
তিনি বলেন, “আমরা যে একটাবার ছেলেটার মুখ দেখব, তারও উপায় নেই। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নেই। ওর মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।”
আলমগীর জানালেন, তার এক মেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গেছেন ভাইয়ের লাশ দেশে ফেরানোর জন্য।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কানাডার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে টরোন্টোতে গাড়ি দুর্ঘটনায় দীপ্তসহ তিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিহত হন। প্রাণ হারানো অন্য দুজন হলেন- শাহরিয়ার খান ও অ্যাঞ্জেলা বারৈ।
দুর্ঘটনায় পড়া গাড়িটি চালাচ্ছিলেন আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নিবিড় কুমার। গুরুতর আহত হয়ে এখন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন তিনি। নিবিড়ের বাবা বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ দুর্ঘটনার খবর শুনে স্ত্রীকে নিয়ে কানাডায় গেছেন।
এদিকে তিন তরুণ-তরুণীর মৃত্যুতে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও শোক বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে সিবিসি নিউজ।
ন্যাশনাল বাংলাদেশি-কানাডিয়ান কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজিয়া হাসান সিবিসিকে বলেন, “এটা খুবই শোকের অধ্যায়, খুবই বিরাট ক্ষতি।”
শীতকালে সড়কগুলোর পরিস্থিতি পাল্টে যায়, এই দুর্ঘটনা কানডায় পড়তে আসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সেই বার্তা দিয়ে যায় উল্লেখ করে নাজিয়া বলেন, “আমি প্রত্যেক তরুণ শিক্ষার্থীকে বলতে চাই, আপনারা যখন রাতে গাড়ি চালাবেন, তখন খুবই সাবধান থাকতে হবে। এখানকার সড়কের অবস্থা বাংলাদেশের মতো নয়।”
শীতকালে উত্তর আমেরিকার সড়কগুলোর ওপর বরফের স্তর জমে তা খুবই পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। গত বছর শীতে টরন্টোর ৪০১ নম্বর হাইওয়েতে কার ও ট্রাক্টর-ট্রেইলারের সংঘর্ষে পাঁচজন ভারতীয় শিক্ষার্থী নিহত হন।
দীপ্তদের গাড়ি দুর্ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে সিবিসি লিখেছে, খুবই উচ্চগতিতে চলতে থাকা বিএমডব্লিউ গাড়িটি একটি কংক্রিট র্যাম্পের উপর দিয়ে উড়ে এসে একটি খালে পড়ে আবার একটি কংক্রিটের দেওয়ালে ধাক্কা খায়। এরপর গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়।