পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, “আইসিজে গতকাল রায় দিয়েছে। এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাই।”
Published : 27 Jan 2024, 06:33 PM
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা বন্ধে বাংলাদেশ প্রয়োজনে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
শনিবার বাংলাদেশ সফররত ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, “আপনারা জানেন সাউথ আফ্রিকার আপিলের প্রেক্ষিতে আইসিজে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস) গতকাল রায় দিয়েছে। এই রায়কে আমরা স্বাগত জানাই।
“সাউথ আফ্রিকার আপিলকে আমরা ইতোপূর্বে সমর্থন জানিয়েছি। ফিলিস্তিনে যে গণহত্যা হচ্ছে, এটি আইসিজের রায়ে বলা হয়েছে এবং সেখানে গণহত্যা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আমি মনে করি, এই রায় ফিলিস্তিনে গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ যেটি সংঘটিত হচ্ছে, সেটি বন্ধ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
“ভবিষ্যতে সাউথ আফ্রিকাকে যদি আরও সমর্থন জোগাতে হয়, সেখানে যে কোনো ধরনের সমর্থন দিতে বাংলাদেশ প্রস্তুত আছে।”
আগের দিন এক রায়ে গাজার যুদ্ধে গণহত্যার মত অপরাধ ঠেকাতে এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সহায়তা দিতে ইসরায়েলকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আইসিজে।
তবে ইসরালের সামরিক অভিযান বন্ধের যে আদেশ দক্ষিণ আফ্রিকা চেয়েছিল, তাতে সায় দেয়নি জাতিসংঘের এ সর্বোচ্চ আদালত।
১৭ বিচারকের এ আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বলেছে, গাজা অভিযানে ইসরায়েলের বাহিনী যাতে গণহত্যার মত কিছু না ঘটায়, দেশটিকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।
এই আদেশ বাস্তবায়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এক মাসের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে আইসিজেকে জমা দিতে বলা হয়েছে ইসরায়েলকে।
এ মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে আইসিজেতে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা। জরুরি ভিত্তিতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশ চাওয়া হয় সেখানে, যে অভিযানে ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে।
‘ব্রিটিশ এমপিরা এসেছেন সম্পর্কোন্নয়নে’
শনিবার পাঁচ দিনের সফরে বাংলাদেশে আসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল।
যুক্তরাজ্যের সাবেক টেক অ্যান্ড ডিজিটাল ইকোনমি বিষয়ক মন্ত্রী পল স্কলি এমপির নেতৃত্বে আসা এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন লেবার পার্টির এমপি বীরেন্দ্র শর্মা, নিল কোয়েল ও অ্যান্ড্রু ওয়েস্টার্ন।
প্রতিনিধি দলে রয়েছেন হাউস অব কমন্সে বিরোধীদলীয় হুইপ ডমিনিক মফিট, কুইন্স কমনওয়েলথ ট্রাস্টের উপদেষ্টা জিল্লুর হোসেন ও কানেক্টের সিইও ইভেলিনা বানিয়ালিভাও।
হাছান মাহমুদ বলেন, “সম্পর্ক উন্নয়ন ও গভীর করতেই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্যররা বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের পার্লামেন্টের সঙ্গে ইউকে পার্লামেন্টের সম্পর্ক কীভাবে আরো ঘনিষ্ঠ করা যায়, সেটিও তাদের একটি উদ্দেশ্য।”
বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর অনুরোধ
বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা, এই প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের দেশে বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর জন্য আমি তাদেরকে অনুরোধ করেছি। বিশেষ করে বাংলাদেশের কমিউনিটি যারা ওখানে (যুক্তরাজ্যে) আছেন, যারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার সামর্থ্য রাখেন এবং অনেকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।”
গত সেপ্টেম্বরে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সাড়ে তিনশ প্রতিনিধি নিয়ে ঢাকায় হওয়া সম্মেলনের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “সেটির সূত্র ধরে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। বিশেষ করে আইসিটি সেক্টর, এগ্রিকালচার সেক্টর, এই সমস্ত সেক্টরে ইনভেস্টমেন্টের জন্য যে সম্ভাবনা আছে, সেই কথাটা বলেছি।”
রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি তাদেরকে বলেছি প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। তারাও আমার সঙ্গে একমত।”
যুক্তরাজ্য লেবার পার্টির এমপি বীরেন্দ্র শর্মা বলেন, “ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের গভীর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা মালিক-ভৃত্য নই, আমরা অংশীদার৷
“অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করব, উন্নয়ন ও বিনিয়োগ নিয়েও উভয়পক্ষ একসঙ্গে কাজ করব। আমরা এই সফরে প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করব।”