সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এই ‘জাগরণ’র পেছনে কাজ করেছে, বলছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
Published : 15 Aug 2023, 12:36 AM
গত এক দশকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত হয়েছে বহু ভাস্কর্য, যা বাংলাদেশে ভাস্কর্য শিল্পে জাগরণ ঘটিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এই ‘জাগরণ’র পেছনে কাজ করেছে, বলছেন বঙ্গবন্ধু বিষয়ক শিল্পকর্ম নিয়ে কয়েক বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক মলয় বালা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাস্কর্য তো অনেক ব্যয়বহুল শিল্পমাধ্যম। এখানে পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। সরকার সহযোগিতা করার কারণে এখন ভাস্কর্য অনেক হচ্ছে। গত এক দশকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অনেক বেশি হচ্ছে, একটা জাগরণ ঘটেছে।”
গত এক দশকেই কেন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের জোয়ার তৈরি হল- এই প্রশ্নে মলয় বালা বলেন, “পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তো অনেক বছর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী পক্ষ রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। তখন ভাস্কর্য মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে তুলে আনার কাজটি নানাভাবেই কঠিন ছিল।
“তাছাড়া সামাজিকভাবে ভাস্কর্যকে হেয় করে নানা মন্তব্য তো রয়েছেই। এখনও কেউ কেউ ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে অপপ্রচার চালায়। তাছাড়া আর্থিক সংকুলানও একটা বড় বিষয়। এখন যেহেতু সরকার বা বেসরকারিভাবেও অনেকে সহযোগিতা করছে, এজন্যই বেশি কাজ হচ্ছে।”
দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর কতটি ভাস্কর্য?
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশুরা হোসেন মনে করেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাস্কর্যের সংখ্যা সহস্রাধিক হবে।
'শত ভাস্কর্য ও ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু' নামে অ্যালবামের সম্পাদক মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক জানান, দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ৮ জন আলোকচিত্রী প্রায় ৩০০ ভাস্কর্য, টেরাকোটা ও ম্যুরালের আলোকচিত্র সংগ্রহ করেন এবং ওই সংগ্রহ থেকে উৎকর্ষ বিবেচনায় ১০০টি ভাস্কর্যের আলোকচিত্র অ্যালবামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দুজন ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান ও নাসিমুল খবির এসব আলোকচিত্র নির্বাচনে তাকে সহযোগিতা করেন।
বাছাই করা ভাস্কর্য ও ম্যুরালগুলোর খুলনা বিভাগে ২১টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২টি, ঢাকা বিভাগে ৪১টি, বরিশাল বিভাগে ৩টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫টি, রংপুর বিভাগে ৪টি, রাজশাহী বিভাগে ৯টি, সিলেট বিভাগে ১টি এবং বহির্বিশ্বের ৪টি উল্লেখযোগ্য।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত অ্যালবাম থেকে জানা যায়, ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে ১৯৯৪ সালে স্থাপন করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, পরে ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধুর রিলিফ ভাস্কর্য ও আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এসব শিল্পকর্ম তৈরি করেছেন শিল্পী ইকবাল হাবিব, এহসান খান, ইশতিয়াক জহির তিতাস। ভাস্কর কবির আহমেদ মাসুম চিশতী ও মুজিবুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার রিলিফ ভাস্কর্য, যার শিল্পী শ্যামল চৌধুরী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভে রয়েছে রিলিফ ভাস্কর্য, যেটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছেন মোহাম্মদ ইউনুস, মুকুল মুকসদ্দীন, শিশির ভট্টাচার্য, ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ ও শ্যামল চৌধুরী।
শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে রিলিফ ভাস্কর্য, যার ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আছে ‘রাজারবাগ ৭১', যার ভাস্কর মৃণাল হক। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল, যার শিল্পী আবদুল আজিজ।
ফার্মগেইটের কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল, যার শিল্পী কিরিটি রঞ্জন বিশ্বাস, শেখ ওয়ালিউর বায়োজিদ ও রিয়ন ইসলাম। নরসিংদীর সাহেপ্রতাপ মোড়ে স্থাপিত রয়েছে বঙ্গবন্ধুর তর্জনী ভাস্কর্য 'মুক্তির ডাক'।
এছাড়া মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকে আবক্ষ ভাস্কর্য, যার ভাস্কর মাহমুদুল হাসান সোহাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে আবক্ষ ভাস্কর্য, যার ভাস্কর শ্যামল সরকার। আগারগাঁওয়ের বাংলামোটরের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ভবনে স্বাধীনতাযুদ্ধের রিলিফ ভাস্কর্য, যার ভাস্কর আজহারুল ইসলাম। ঢাকা ক্লাবে রিলিফ ভাস্কর্য, যার ভাস্কর শফিউল আলম বাবু। জগন্নাথ হলের সামনে সড়ক দ্বীপে রয়েছে শামীম শিকদারের ভাস্কর্য স্বাধীনতার সংগ্রাম।
তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল, ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের কারা স্মৃতি জাদুঘর, গুলশানে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে, মতিঝিলে উত্তরা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, গুলশানে সিটি ব্যাংকেও রয়েছে বঙ্গবন্ধুর রিলিফ ও আবক্ষ ভাস্কর্য।
তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাস্কর্য নির্মাণের হিড়িকে মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
মাশুরা হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেখানেই মুর্যাল বা ভাস্কর্য করা হবে, তার জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।”
সারা দেশে যে সহস্রাধিক ভাস্কর্য ও ম্যুরাল তৈরি হয়েছে, সেগুলোর কতগুলো অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
অনুমোদনহীন যেসব কাজ ইতোপূর্বে হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কী করা হবে- জানতে চাইলে মাশুরা হোসেন বলেন, “আমরা চিন্তা করছি। তবে এখন আর অনুমোদনহীন কাজ কোথাও স্থাপন করা যাবে না।”
মলয় বালা বলেন, “শিল্পীরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা আর আবেগ থেকে যেমন ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন, আবার ভাস্কর্য নির্মাণের নামে শিল্পমানহীন অনেক কাজও ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।
“বিশেষ করে মুজিব জন্মশতবর্ষে অনেকেই নানা জায়গায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ভাস্কর্য ও মুর্যাল তৈরি করার উদ্যোগ নেন। কেউ কেউ অদক্ষ শিল্পীর মাধ্যমে নির্মাণ করেন এসব ভাস্কর্য ও মুর্যাল, যা জনমনে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।”
ধোলাইরপাড়ে ভাস্কর্যটি এখনও হয়নি
টানা আড়াই বছর আগে কাজ বন্ধ হওয়ার পর রাজধানীর ধোলাইর পাড় সড়ক দ্বীপে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বেদিতে কাজ শুরু হয়নি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন হবে কি না, তা নিয়ে অস্পষ্টতা এখনও কাটেনি।
সড়ক বিভাগের পরিকল্পনা ছিল পদ্মা সেতু পেরিয়ে রাজধানীতে ঢোকার পথেই চোখে পড়বে জাতির পিতার ভাস্কর্য। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাস্কর্যটি নির্মাণের কাজ শুরু করে সড়ক বিভাগ। লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরেই ভাস্কর্যটি স্থাপন করার।
তবে ইসলামী কিছু দলের বিরোধিতার মধ্যে সেই কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২০ সালের নভেম্বরে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন এবং পরে হেফাজতে ইসলামের ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা শুরুর পর টানা আড়াই বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাজ করার জন্য ভাস্কর্যটির চতুর্পাশে যেমনভাবে টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল, এখনও সেভাবেই আছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের পোস্টার ব্যনারে ছেয়ে গেছে টিনের ঘেরাওটি।
আওয়ামী লীগের এ নিয়ে কী ভাবনা- জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “এখানে কোনো জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী, ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরোধিতাকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। বঙ্গবন্ধুর এই ভাস্কর্য আরও আগে কাজ শেষ করা দরকার ছিল, যে কোনো কারণে দেরি হয়েছে। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, অতিদ্রুত এই ভাস্কর্যটির কাজ যেন শেষ করা হয়।”
‘মুক্তির অগ্নিপুরুষ’ জাদুঘরের স্টোর রুমে
ঢাকার শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বছরখানেক আগেও ছিল বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য, নাম ‘মুক্তির অগ্নিপুরুষ’। এর ভাস্কর উত্তম ঘোষ। তবে কিছুদিন ধরেই সেখানে আর ভাস্কর্যটি দেখা যাচ্ছে না।
উত্তম ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ভাস্কর্যটি জাদুঘরের স্টোর রুমে পড়ে আছে।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভাস্কর্যটি মানস্পন্ন হয়নি, যে কারণে তারা এটি নিতে রাজি নন।
জাতীয় জাদুঘরের সচিব (যুগ্ম সচিব) গাজী মো. ওয়ালি-উল-হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় জাদুঘর তো অনেক আগেই উত্তম ঘোষকে চিঠি দিয়ে এই শিল্পকর্মটি জাদুঘর নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এটি সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে চিঠিতে। কিন্তু তিনি এটি সরিয়ে নেননি।"
২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ‘হাসুমণির পাঠশালা’ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ শিল্পকর্ম প্রদর্শনী এবং গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানেই প্রদর্শিত হয় ‘মুক্তির অগ্নিপুরুষ’ ভাস্কর্যটি।
সেই আয়োজনে ভাস্কর্যটি প্রশংসিত হলে কবি নির্মলেন্দু গুণসহ শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকে এটিকে জাদুঘরে স্থায়ীভাবে রাখার জন্য পরামর্শ দেন। তখন জাদুঘরে দায়িত্বরত মহাপরিচালকও ভাস্কর্যটি নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। এরপর উত্তম ঘোষ এটি জাদুঘরের সামনে অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা করেন।
ভাস্কর্যটি কোথায় বসানো হবে, তার জন্য একটি উপকমিটি গঠন করে জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। সেই কমিটি ভাস্কর্যটি মানসম্পন্ন হয়েছে কি না, তা বিবেচনা করে দেখার সুপারিশ করে। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পী হাশেম খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটিতে শিল্পী রফিকুন নবী, ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান ও শিল্পী নিসার হোসেন ছিলেন।
২০২১ সালে ভাস্কর্যটি মানসম্পন্ন হয়নি জানিয়ে তা সরিয়ে নিতে ভাস্কর উত্তম ঘোষকে চিঠি দেয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। সেই চিঠিতে বলা হয়, “ভাস্কর্যটিতে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব, বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত চেহারা, তার বক্তৃতা বিশেষ করে সাতই মার্চের ভাষণের অভিব্যক্তি, ভাস্কর্যটির উপাদান, গুণগত মান, নান্দনিকতা ও শিল্পমান একেবারেই সন্তোষজনক নয় বিধায় ভাস্কর্যটি জাদুঘরের জন্য সংগ্রহ বা জাদুঘরের কোনো স্থানে প্রদর্শন মোটেই উপযুক্ত নয়।”
উত্তম ঘোষ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে’ ভাস্কর্যটি জাদুঘর প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে নিতে চাপ দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব এতে কাজ করেছে বলে উত্তমের দাবি।
তিনি বলেন, “শান্তিনিকেতনে নিসার হোসেনের সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। ভাস্কর্যটির অনেকেই প্রশংসা করেছেন, এটা নিসার হোসেনের সহ্য হয়নি। শিল্পী শাহাবুদ্দীন থেকে শুরু করে, কবি নির্মলেন্দু গুণ, অধ্যাপক অলক রায়, অধ্যাপক মলয় বালা, ভাস্কর রাশাসহ অনেকেই বলেছেন, ‘মুক্তির অগ্নিপুরুষ’ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে করা সেরা কাজগুলোর একটি। নিসার হোসেন সেটি পছন্দ করেননি। আর আমি হাশেম খানের ছাত্র নয়, যার জন্য আমি নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছি।”
উত্তমের অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যাপক নিসার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যথাযথ নিয়ম না মেনেই উত্তম ঘোষ এই শিল্পকর্মটি জাদুঘরে স্থাপন করতে চাইছেন। কাজটি খুব বেশি মানসম্পন্নও হয়নি, যার জন্য জাদুঘরের গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তেই এটি সরিয়ে নিতে তাকে চিঠি দেওয়া হয়। এটি একটি প্রদর্শনীতে আনা হয়েছিল। জাদুঘর তো এটি ক্রয়ও করেনি, আর তাকে দিয়ে এটি তৈরিও করায়নি। তার কাজটি এখানে স্থাপন করতে হলে তো যথাযথ নিয়ম মেনেই করতে হবে। তিনি নিয়ম না মেনেই চাপাচপি করছেন, এটা তো হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিছু করতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের অনুমোদন লাগে। শিল্পকর্ম করতে হলে আগে মডেল জমা দিতে হয়, অনুমোদন পেলে তারপর শিল্পী সেই কাজটি করেন। তাছাড়া জাতীয় জাদুঘর এই শিল্পকর্মটি নেবে কিনা, সেটি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়। এরপর টেন্ডার হয়, সেখানে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই ভালো কাজটি জাদুঘর নেবে। কিন্তু উত্তম ঘোষের কাজের ক্ষেত্রে তো এসবের কিছু হয়নি।
“একটি প্রদর্শনীতে কাজটি ছিল, সেখান থেকে এখন উত্তম তার কিছু লোকজন দিয়ে চাপ তৈরি করছে, এটি যেন জাদুঘরে নেওয়া হয়। কিন্তু জাদুঘরের কমিটি কাজটি মানসম্পন্ন হয়নি বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারপরও উত্তম ঘোষ অনেক দিন ভাস্কর্যটি জাদুঘরের সামনে রেখে দিয়েছেন। তাকে চিঠি দেওয়ার পরও সেটি সরাননি।”
প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন