যুক্তরাষ্ট্র বলছে, তারা শরণার্থীদের একটি অংশকে আশ্রয় দেবে।
Published : 06 Dec 2022, 09:13 PM
তৃতীয় দেশে পুনর্বাসনের অংশ হিসাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশকে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন আটকে থাকার প্রেক্ষাপটে এই উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস।
যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও প্রত্যাবাসনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, ২০১৭ সালের আগে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, তাদের আগে নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে।
চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয় এই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সফরে কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকের পর নয়েস সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘায়িত হওয়া রোহিঙ্গা সংকটের গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হচ্ছে তাদেরকে নিরাপদে, স্বেচ্ছা ও সম্মানজনকভাবে নিজ দেশে ফেরানো এবং তা হতে হবে টেকসই। এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও যুক্তরাষ্ট্র সবাই চায়।
“যখন সেই সমাধান হচ্ছে না, তখন অন্য সমাধান প্রয়োজন। বিশেষ করে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ তাদের জন্য বাড়তি সমাধান দরকার। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের চিহ্নিত করার জন্য ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে কাজ করতে পেরে এবং তাদেরকে তৃতীয় দেশে স্থানান্তর চেষ্টা করতে পেরে আমরা আনন্দিত।”
জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয় এই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের পুনর্বাসন বাড়ানো বাইডেন প্রশাসনের অগ্রাধিকার। অন্য যেসব সরকার ও অংশদীর রাষ্ট্রের সঙ্গে আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করছি, এটা তাদেরও অগ্রাধিকার।
“দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি উদ্বুদ্ধ করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যাব। কাজ করব, যাতে নিরাপদে নিজ দেশে ফেরার আগে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের জন্য অন্য সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়।”
নয়েসের বক্তব্যের কিছু সময় পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, “প্রত্যাবাসনই হচ্ছে সমাধান।
“(রোহিঙ্গাদের) একটা অংশ যাবে। এগুলো ওদের একটা দায়বদ্ধতা মেটানোর জন্য। রোহিঙ্গা কেবল আমাদের মাথাব্যথা না, সবার মাথাব্যথা, বিশ্ব নেতাদের মাথাব্যথা। তারা দেখাবে যে আমরা কিছু রোহিঙ্গাকে সাহায্য করেছি।”
যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের একটি অংশ সে দেশে আশ্রয় দিতে চাইলেও সেই সংখ্যাটি কত, তা এখনও স্পষ্ট হয়নি।
মোমেন বলেন, “অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমেরিকা এবং অনেকগুলো বন্ধুপ্রতীম দেশ ওদেরকে মানবিক সাহায্য করেছে। আমাদের দেয় না, ওদের দেয়। এটা ঠিক আছে। এখন কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে তার দেশের লোকদের বলতে পারবে, আমরা তো নিয়েছি কয়েকজনকে। বলবে না কতজন।”
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ অনেক আগে থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও কম সংখ্যা ও রোহিঙ্গা ঢলের শঙ্কায় বিবেচনায় নিয়ে তাতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ সরকার।
তবে, প্রত্যাবাসন আটকে থাকার মধ্যে বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের নেওয়ার প্রস্তাব বেশ কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশকে দিয়ে আসছে সরকার।
আগে রাজি না হলেও এখন অবস্থান পরির্বতনের বিষয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, “আমরা রাজি হয়েছি, প্রথম যেদিন আমি মন্ত্রী হয়েছি সেদিন থেকেই। আগে ধারণা ছিল, এটা হলে রোহিঙ্গা আরও আসবে।”
অল্প সংখ্যায় পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ২০১৭ সালের অগাস্টে রোহিঙ্গাদের ঢলের আগে থেকে থাকা ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের নেওয়ার শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ।
মোমেন বলেন, “আমরা রাজি হয়েছি, একটা শর্ত আছে আমাদের। মিয়ানমার বলেছে ২০১৬ সালের পর যারা এসেছে, তাদেরকে ভেরিফাই হওয়ার পর নিয়ে যাবে। কিন্তু তার আগে যারা এসেছেন, প্রায় ২৯ হাজার ইউএনএইচসিআরের ক্যাম্পে ছিল। আমরা আগে বলেছি, আগে যেগুলো ছিল, মিয়ানমার যেগুলো নেবে না, ওদেরকে নেওয়ার জন্য।”
মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে মুসলমান জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ইতিহাস বেশ আগের। ২০১৭ সালে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা একবারেই আসে। তার আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখের বেশি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে থেকে কক্সবাজারে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি ২০১৭ সালের পর আসা শরণার্থীদের মধ্যে যারা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ তাদেরকেও পাঠাতে রাজি আছে বাংলাদেশ।
কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, পুনর্বাসনের জন্য প্রথম দফায় ৬০ জনের মতো রোহিঙ্গার একটি তালিকা নিয়ে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অল্প কিছুদিনের মধ্যে তারা ক্রমান্বয়ে যাবেন। প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন হলে যাচাইবাছাইয়ের পর আরও রোহিঙ্গাকে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যাবাসন হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যার বিষয়ে এক প্রশ্নে সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র একটা বড় সংখ্যায় রোহিঙ্গাদের নেবে।
“এই সংখ্যাটা হাজারের, ডজনের নয়। ইন সাইজেবল নাম্বার, (যে প্রস্তাব) আমরা অন্য কোনো রাষ্ট্র থেকে পাইনি। তবে, কানাডায় তো কিছু মানুষকে নেওয়া হয়েছে, অন্য অবস্থান থেকে নেওয়া হয়। প্রতি বছরে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিবেন, হাজারের সংখ্যায়।”