মহামারীকালে খাদ্য সংকটে ছিলেন ৬৩% রোহিঙ্গা নারী ও কিশোর-কিশোরী

গবেষণার তথ্য বলছে, কোভিডের লকডাউনে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও সংকটে ছিলেন রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরীরা

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2022, 03:36 PM
Updated : 5 Oct 2022, 03:36 PM

কোভিড মহামারীর সময় ৬৩ শতাংশের বেশি রোহিঙ্গা নারী ও কিশোর-কিশোরী খাদ্য সংকটে ভুগেছে এবং প্রায় ৮৭ শতাংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগেছে বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিকে স্কুল অব রিসার্চ বলছে, ৫৬ শতাংশ রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরী পড়াশোনা থেকে ঝরে গেছে।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এশিয়া প্যাসিফিক স্টাডিজে সম্প্রতি ওই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। ইউনিসেফ তাদের উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন রিসার্চ লাইব্রেরিতেও গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছে।

এই গবেষণা প্রবন্ধের অন্যতম লেখক ডা. সুস্মিতা দে পিংকি বলেন, শরণার্থীরা এমনিতেই নানা সংকটের মধ্য দিয়ে জীবন পার করে। কোভিড মহামারীর কারণে সেই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

“এমন প্রেক্ষাপট থেকেই আমরা রোহিঙ্গা নারী এবং কিশোর-কিশোরীদের ওপর কোভিড-১৯ এর আর্থসামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব কেমন পড়েছে তা অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছি।”

বিকে স্কুল অব রিসার্চ জানিয়েছে, শরণার্থী বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন এবং তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাত্ত্বিক এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিয়ে প্রকাশিত খবরও তারা বিশ্লেষণ করেছে।

গবেষণার ফল বলছে, রোহিঙ্গা নারী এবং কিশোর-কিশোরীর খাদ্য সংকট ও পুষ্টিহীনতার পাশপাশি কোভিড মহামারীর প্রভাব পড়েছে রোহিঙ্গা কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষাগ্রহণেও।

এছাড়া মহামারীর লকডাউনে ৩৮ শতাংশ নারী ক্যাম্পের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ল্যাট্রিন ব্যবহারে সংকটে ভুগেছেন। যে সংকট নারী ও কিশোরীদের আরও বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে মাসিকের সময়।

গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, সাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা, খাদ্য, পানি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোভিডকালে নারীরা বেশি সমস্যায় ভুগেছেন। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী এবং বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোরীরা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি নিয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে৷

রোহিঙ্গাদের ওপর কোভিডকালীন এই মহামারীর মানসিক প্রভাবের তথ্যও এসেছে এই গবেষণায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪৪ শতাংশ রোহিঙ্গা পরিবারের ক্ষেত্রে চলমান উদ্বেগের সাথে অতিরিক্ত শঙ্কা যুক্ত করেছে মহামারী। ৩৬ শতাংশ রোহিঙ্গা নারীর আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেড়েছে নির্যাতন।

বিকে স্কুল অফ রিসার্চের পাঁচ জন গবেষক দুই বছর ধরে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক বিজন কুমার। সহযোগী হিসেবে কাজ করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সুস্মিতা দে পিংকি ও ডা. অরিন্দম সিং পুলক।

এছাড়া ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষক সাইয়েদা রায়হানা কামাল এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাশেন্দা আজিজ এই গবেষণা প্রকল্পে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

বিকে স্কুল অব রিসার্চের পরিচালক বিজন কুমার বলেন, “বাংলাদেশ সরকার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তারপরও তারা নানা ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে।

“এই সংকট নিরসনে আমরা এই গবেষণা থেকে দুই ধরনের সুপারিশ করেছি। প্রথমত, কোভিডকালীন রোহিঙ্গা নারী ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া। দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারক এবং বিশ্ব রাষ্ট্রনায়কদের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকে একযোগে কাজ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।”

২০১৫ সালে কয়েকজন তরুণ গবেষকের হাত ধরে পথচলা শুরু করে বিকে স্কুল অফ রিসার্চ। ২২টি দেশের ৫৫ জন গবেষক এবং তিন শতাধিক তথ্য-সংগ্রাহক নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই সংগঠন কাজ করছে।

টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, নারী ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, মানসন্মত শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, অভিবাসন ও শরণার্থী, পরিকল্পিত নগরব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করা এই সংগঠনের ২০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী ও বইয়ে।