বাসন্তী-লালের সাজপোশাকে কারো হাতে গোলাপ, কারো মুঠোয় কুড়ানো পলাশ, মাথায় বাহারি ফুলের টায়রা; বসন্তের প্রথম দিনে রাজধানীবাসী মেতেছে ভালোবাসার উদযাপনে।
Published : 14 Feb 2023, 06:00 PM
শীতের হিমকে আনুষ্ঠানিক বিদায় দিয়ে ভালোবাসার দিনে চলে এসেছে ফাল্গুনী সমীরণ; পাতাঝরা পলাশ আর শিমুলের ডালে ডালে যে রঙ লেগেছে, তারই উৎসব চলছে নগরজুড়ে।
একদিকে ঋতুরাজ বসন্ত, অন্যদিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে, একই দিনে দুই উদযাপনে আনন্দের জোয়ার বইছে তরুণ প্রাণে।
বাসন্তী-লালের সাজপোশাকে কারো হাতে গোলাপ, কারো মুঠোয় কুড়ানো পলাশ, মাথায় বাহারি ফুলের টায়রা; বসন্তের প্রথম দিনে রাজধানীবাসী মেতেছে ভালোবাসার উদযাপনে।
মঙ্গলবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এমন সাজ-সাজ আয়োজনে ভিড় বাড়তে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলায়, যেন ছোট-বড় সকলের আলাদা এক দিন।
বইমেলা এলাকায় দেখা মিলল দুই তরুণীর, যারা এসেছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে। গোলাপী আর গোলাপীর মাঝে নীল শাড়ি পরা দুই তরুণীর একজন হৃদিকা দেবী, অন্যজন শ্রাবন্তী দাস।
জানালেন, দুজনে খুব ভালো বন্ধু। এসেছেন বইমেলায়, কিন্তু মেলা খোলার সময় না হওয়ায় তারা বাইরে অপেক্ষা করছেন। তাতে অবশ্য ‘খারাপও লাগছে না’।
তেজগাঁও কলেজের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রাবন্তী বললেন, “আমরা আসছি সাড়ে ১১টার দিকে। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি। একসাথে থাকলে কোনোকিছুতেই আমাদের বিরক্ত লাগে না। আর এখন তো গরম নাই। হালকা বাতাস, ছায়ায় বসে আছি। ভালোই লাগছে।”
দুজনের একইরকমের সাজ-পোশাকের কারণ জানতে চাইলে ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজে বিএসসি নার্সিংয়ের শিক্ষার্থী হৃদিকা বললেন, “আসলে আমরা একসাথে যেখানেই যাই, আমাদের জামাকাপড়ের কালার কীভাবে কীভাবে যেন মিলে যায়। আমরা কেউ জানতাম না, কে কী রঙের শাড়ি পরবে। বের হয়ে দেখি মিলে গেছে।”
ভালোবাসা দিবসের প্রসঙ্গ তুলতেই হৃদিকার ভাষ্য, “আমরা সিঙ্গেল, এই বাঁধাহীন জীবন খুব উপভোগ করছি। আর ভালোবাসা দিবস তো শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য না, বন্ধুদের জন্যও।“
পুরান ঢাকার লিজা আক্তার ও ইসাসিন কবিরের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। লিজার কথায়, “এটা আমাদের সেকেন্ড অ্যানিভার্সারি। গতবছর এই দিনে ও আমায় প্রপোজ করেছিল। তাই এই ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র ব্যাপারটাই আলাদা আমাদের কাছে।”
সারাদিনের পরিকল্পনাও বললেন এই তরুণী। জানালেন, “এখানে এলাম, একটু ঘুরব-ফিরব। দুপুরে আশপাশেই কোথাও খাব। বিকালে ওর জন্য একটা সারপ্রাইজ রেখেছি। এভাবেই কাটাব।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় সবার সাজ-পোশোকে লাল-হলুদের ছটা থাকলেও কালো শাড়ি-পাঞ্জাবিতে আলাদা নজর কাড়ছিলেন রাইসা ইসলাম ও অপূর্ব হাসান। রাইসার পরনে কালো জর্জেট শাড়ি, খোঁপায় সাদা ও হলদে ফুল।
কাছে গিয়ে তাদের ব্যতিক্রমী সাজের কারণ জানতে চাইলে রাইসা বললেন, “আজ সবাই তো হলুদই পরবে। সেটা ভেবেই আমরা কালো রঙের ড্রেস বাছাই করছি।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় অপেক্ষমাণ রুনা ও আমিরুল ইসলাম দম্পতি দুজনেরই পরনেই ছিল হলুদ, একজন শাড়ি, অন্যজন পাঞ্জাবি। রুনার হালকা কাঁচা-পাকা চুলে শোভা পাচ্ছিল লাল গোলাপ। ষাটোর্ধ্ব আমিরুল ইসলামেরও মাথা ভরা পাকা চুলে।
আমিরুল হাসতে হাসতে বললেন, “শুধুই তো ভালোবাসা। আর কদিনই বা বাঁচব। যত পারা যায়, তত বেশি জীবনকে উপভোগ করে নেওয়া উচিত। জীবনের পুরোটাই তো বাচ্চাদের জন্য দিলাম। ওরা সবাই এখন বাইরে সেটেলড।”
পহেলা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে সবাই শাড়ি-পাঞ্জাবি পরেছেন এমন নয়। প্রতিদিনের আরামদায়ক পোশাকেও ঘুরতে বেড়িয়েছেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তানহা হলুদ কুর্তি পরে বন্ধুদের সঙ্গে বসেছিলেন টিএসসি প্রাঙ্গনে। তিনি বললেন, “সকালে ক্লাস ছিল। তাই অত সকালে উঠে শাড়ি পরে রেডি হতে পারিনি, কুর্তি পরেছি।
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী প্রতিবছরের মত এবারো জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষৎ এর উদ্যোগে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় নাচ, গান, আবৃত্তিতে বরণ করে নেওয়া হয় ঋতুরাজ বসন্তকে। বিকাল ৩টা থেকে বকুলতলার পাশাপাশি উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির বঙ্গবন্ধু মুক্ত মঞ্চ এবং পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে চলবে বসন্তবরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৩ ফেব্রুয়ারিকে ঘিরেই আয়োজিত হতো এ বসন্ত বরণ উৎসব। কিন্তু ৮ ফাল্গুন এবং ২১ ফেব্রুয়ারিকে মেলানোর জন্য বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের ফলে ২০২০ সাল থেকে পহেলা ফাল্গুন এবং ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ ১৪ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে পালিত হচ্ছে।