কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সংশোধনের আলোচনায় বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া

কর্মী নিয়োগের জন্য করা সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) পরিবর্তন, অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ আরও নতুন সংযোজন কথা এসেছে বৈঠকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2023, 02:47 PM
Updated : 5 Feb 2023, 02:47 PM

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।

রোববার ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তিনি জানান, কর্মী নিয়োগের জন্য করা সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) পরিবর্তন, অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ আরও নতুন সংযোজন কথা এসেছে।

দুদিনের সফরে শনিবার ঢাকায় পৌঁছান মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইসমাইল। রোববার প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ব্রিফিংয়ে আসেন তিনি।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে চাই। আগামী দিনে দুই দেশের প্রতিনিধিরা বসবে। আমরা আগের করা সমঝোতা চুক্তি নিয়ে কথা বলেছি।

“দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করবেন যে এমওইউতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন আছে কিনা? আজকের আলোচনার একটা বড় অংশ নিয়ে ছিল এই চুক্তি। মালয়েশিয়া সরকার প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে চায় যাতে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।”

কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা চলতি মাসের মধ্যে হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী।

প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর নতুন চুক্তির আওতায় গতবছরের অগাস্টে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আবারও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হয়।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করেছিল প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

ওই চুক্তির আওতায় খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী, মালয়েশিয়া প্রান্তের সব খরচ নিয়োগকর্তাকে দিতে হবে, যার মধ্যে আসা-যাওয়ার বিমানভাড়াও রয়েছে।

নিয়োগকর্তা বেশিরভাগ খরচ বহন করায় শ্রমিকদের ঘাড়ে ব্যয়ের ভার তেমন থাকবে না বলেই আশা করেছিলেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ও সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন।

সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সে সময় বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োজন এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত প্রেরণের খরচ বহন করবে। পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় যাওয়ার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, কোভিড পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত খরচসহ সব ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি বহন করবে।

কর্মীদের কত টাকা খরচ হতে পারে, সেই প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী ইমরান আহমদ সে সময় বলেছিলেন, “আগেরবার কর্মী পাঠানোর সময় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আমরা নির্ধারণ করেছিলাম। এবার সেটা থেকেও কমে আসবে। তবে কত কমে আসবে সেটা এখনও হিসাব করি নাই। তবে নিশ্চিতভাবে কমে আসবে।”

কিন্তু ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেট হয়ে যাওয়ায় সেটা আর অল্প খরচে সীমাবদ্ধ থাকছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

মালয়েশিয়া যেতে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগছে- এ বিষয়ে এক প্রশ্নে মন্ত্রী গত জানুয়ারির শেষে ডিসি সম্মেলনের সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “এক হাতে তালি বাজে না। এখানে বাংলাদেশ, ওখানে মালয়েশিয়া। সিস্টেমের পার্থক্যের কারণে এরকম হচ্ছে। আমি খুশি না যে আমাদের প্রবাসীদের এত টাকা লাগছে।”

“আমরাও খবর রাখি। আমার জানা মতে, সাড়ে ৩-৪ লাখ টাকা লাগছে। তাদের মন্ত্রী আসছেন, আগামী সপ্তাহ নাগাদ তিনি চলে আসবেন। আলোচনা হবে, দেখি ফলাফল কী বের করতে পারি।”

সেই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইলের সঙ্গে বৈঠকে রোববার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। 

এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে সমঝোতা স্মারক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চাহিদা পূরণ করা; ব্যয় কমানো, বিদেশি কর্মীদের সম্মান রক্ষা করা। যদি বর্তমান প্রক্রিয়ায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো না যায়, আমরা পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত। সেজন্য আমরা আলোচনায় বসব।”

ইসমাইল জানান, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ১৫ লাখ বিদেশি কর্মী বৈধভাবে কাজ করছেন। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ বাংলাদেশি কর্মী। জনশক্তির ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার ১৫টি সোর্স কান্ট্রির মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে আছে।

রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামের আওতায় ২৭ জানুয়ারি থেকে মালয়েশিয়ায় থাকা অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার কাজ চলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এক সপ্তাহে বৈধকরণের যা অনুমোদন আমরা দিয়েছি, তার ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশি।”

রিক্যালিব্রেশন নিয়ে আলোচনার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, “রিক্যালিব্রেশনে উনারা কোনো জাত বিচার করবে না। যারা আছে ওখানে ওনারা যদি অ্যাপ্লাই করে ফি দিয়ে, তারা তাদের লিগ্যাল করে নেবে।”

ইমরান আহমদ বলেন, “আলাপের মধ্যে আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যা যা আছে সব কথাই হয়েছে। এখানে কস্টের ব্যাপার আছে, ওখানে যাওয়ার ব্যাপার আছে। সবকিছুই আলোচনা হয়েছে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এ সরকার কিন্তু নতুন সরকার। আগের সরকারের সঙ্গে আমাদের যা কিছু কথা হয়েছে, এখন কিন্তু বিরাট একটা পরিবর্তন আসবে। এ জিনিসটা তিনি (মালয়েশিয়ার মন্ত্রী) আশ্বস্ত করেছেন।”

এমওইউ পরিবর্তনের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে ইমরান আহমদ বলেন, “প্রয়োজন হলে আরও কিছু পরিবর্তন আসবে। অথবা যাতে আরও বেশি সহজ হয়ে যায়…। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিন্তু উনি এখনও দিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, যে দায়িত্ব নিয়ে তিনি কথা বলেছেন, আমরা ভালো কিছুই পাব।”

প্রবাসী কল্যাণ ভবনে মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠকের পর দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গেও বৈঠক হয় তার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সে সময় জানান, নতুন চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়ায় ৬৫ হাজার কর্মী নিয়োগ হয়েছে। আরও ১ লাখ ৩৫ হাজার সেখানে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

“তবে, বেশি টাকা খরচ নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। তারা এই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।”