জি কে শামীম আদালতে, অস্ত্র মামলার রায়ের অপেক্ষা

জি কে শামীমের পাশাপাশি তার সাত দেহরক্ষীও এ মামলার আসামি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2022, 05:18 AM
Updated : 25 Sept 2022, 05:18 AM

বিতর্কিত ঠিকাদার এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে অস্ত্র মামলার রায়ের জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছে।

ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক শেখ ছামিদুল ইসলাম রোববার দুপুর ১২টার পর এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সালাহউদ্দিন হাওলাদার জানিয়েছেন।

জি কে শামীমের পাশাপাশি তার সাত দেহরক্ষীও এ মামলার আসামি। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে তাদের কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর আদালতের হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ উপ-পরিদর্শক সাদিকুল ইসলাম।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সালাহউদ্দিন হাওলাদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ মামলায় আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করছি।”

অস্ত্র মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের তিনটি ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। জি কে শামীমের বিরুদ্ধে বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে প্রদর্শনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড।

আসামি পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি’। রায়ে আসামিরা খালাস পাবেন বলে তাদের প্রত্যাশা।

মামলার আসামিরা হলেন: জি কে শামীম এবং তার সাত দেহরক্ষী দেলোয়ার হোসেন, মুরাদ হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, সহিদুল ইসলাম, কামাল হোসেন, সামসাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম।

২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলায় তাদের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল আদালত। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে গত ২৮ অগাস্ট বিচারক রায়ের জন্য দিন ঠিক করে দেন। 

২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই প্রথম শামীমের বিরুদ্ধে কোনো মামলার রায় হতে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা রয়েছে। 

Also Read: অস্ত্র মামলায় জি কে শামীমের সাজা জানা যাবে রোববার

Also Read: জি কে শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার রায় ২৫ সেপ্টেম্বর

Also Read: অস্ত্র মামলায় জি কে শামীমের বিচার শুরু

Also Read: জি কে শামীমের অফিসে বিপুল টাকা, মদ, অস্ত্র

Also Read: জি কে শামীম ও তার দেহরক্ষীরা অস্ত্র মামলায় অভিযুক্ত

Also Read: জি কে শামীমের জামিন ‘নাম বিভ্রাটে’, আদেশ প্রত্যাহার

অভিযোগ ও গ্রেপ্তার

যুবলীগের সমবায় সম্পাদক হিসেবে পরিচয়দানকারী জি কে শামীমের পূর্ণ নাম এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম।

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। গণপূর্ত ভবনে ঠিকাদারি কাজে তার দাপটের খবর বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছে।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালায় র‌্যাব।

অভিযানে ওই ভবন থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানানো হয় অভিযান শেষে।

তখনই শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় তিনটি মামলা করে র‌্যাব।

এর মধ্যে অস্ত্র ও মুদ্রা পাচার মামলায় সবাইকে আসামি করা হলেও মাদক আইনের মামলায় শুধু শামীমকে আসামি দেখানো হয়। প্রত্যেক মামলাতেই তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মামলা হওয়ার এক মাসের মাথায় ২০১৯ সালের ২৬ অক্টোবর অস্ত্র আইনের মামলায় শামীম ও তার দেহরক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব ১ এর উপ পরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক।

সেখানে বলা হয়, জি কে শামীম একজন চিহ্নিত ‘চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, অবৈধ মাদক এবং জুয়ার ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচিত। তার অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও তিনি শর্ত ভঙ্গ করে তা অবৈধ কাজে ব্যবহার করে আসছিলেন।

তার দেহরক্ষীদের উচ্চ বেতনভোগী ‘দুষ্কর্মের সহযোগী’ হিসেবে বর্ণনা করে অভিযোগপত্রে বলা হয়, “তারা অস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করেছেন। এর মাধ্যমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে বিভিন্ন বড় বড় টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসাসহ স্থানীয় বাস টার্মিনাল ও গরুর হাট-বাজারে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।”

গ্রেপ্তারের সময় র‌্যাব সদর দপ্তর, সচিবালয়ে ও কয়েকটি হাসপাতালের নতুন ভবনসহ অন্তত ২২টি নির্মাণ প্রকল্পের  ঠিকাদারি কাজ শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।