জি কে শামীমের জামিন ‘নাম বিভ্রাটে’, আদেশ প্রত্যাহার

অস্ত্র ও মাদকের মামলায় ঠিকাদার জি কে শামীমকে দেওয়া জামিনের আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2020, 08:19 AM
Updated : 8 March 2020, 02:32 PM

এক মাস আগে শামীমের জামিন পাওয়ার খবর হঠাৎ প্রকাশিত হওয়ায় তুমুল আলোচনার মধ্যে রোববার হাই কোর্টের এ সিদ্ধান্ত এলো।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মুজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এদিন স্বপ্রণোদিত হয়ে অস্ত্র মামলায় শামীমের ছয় মাসের জামিন আদেশ প্রত্যাহার (রিকল) করে বলেছে, ‘নাম বিভ্রাটে’ হয়ত বুঝতে সমস্যা হয়েছিল।

পরে বিচারপতি মো রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চও মাদক মামলায় জামিন আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়। 

অস্ত্র মামলায় এদিন আদালতে শামীমের পক্ষে ছিলেন মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। আর রাষ্ট্রপক্ষে  ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. ফজলুর রহমান খান।

দুপুরে আদালত বসলে শুরুতেই এফ আর খান বলেন, “এই মামলায় (অস্ত্র মামলায়) জামিন আবেদনকারীর নাম লেখা আছে এস এম গোলাম কিবরিয়া। কিন্তু আদালতের ওই দিনের (৬ ফেব্রুয়ারি) কার্যতালিকায় নাম ছিল শুধু এস এম গোলাম।

এরপর জিকে শামীমের আইনজীবী মেহেদী আদালতকে বলেন, জামিন আদেশের দিন ওইসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এফ আর খান আদালতেই ছিলেন না।

বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, “কার্যতালিকায় নামের বিভ্রাট আছে। এ কারণে হয়তো বিভ্রান্তি হয়েছে। আমাদের হয়ত বুঝতে সেদিন ভুল হয়েছে। তাই আমরা জামিনের অর্ডারটি রিকল (প্রত্যাহার ) করলাম।”

ডিএজি ফজলুর রহমান শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, জি কে শামীমের জামিনের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের জানা নেই।

আর রোববার জামিন আদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর তিনি বলেন, “নাম নিয়ে বিভ্রাট হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ হয়ত তখন বুঝতে পারেনি।”

পরে একই ধরনের কথা বলেন বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাই কোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ডিএজি জান্নাতুল ফেরদৌস। ওই আদালত থেকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জি কে শামীমকে মাদক মামলায় এক বছরের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেওয়া হয়।

ডিএজি জান্নাত রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি নলেজে আসার পর আদালত আদেশ রিকল করেছেন।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। কোর্ট রিকল না করলে আমরা আপিল বিভাগে যেতাম।”

আদালতের আদেশ প্রত্যাহারের পর জিকে শামীমের আইনজীবী মমতজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী সাংবাদিকদের বলেন, তার মক্কেল গ্রেপ্তার হওয়ার সময় যেসব অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল সেগুলোর লাইসেন্স আছে। লাইসেন্সের শর্ত ভাঙলে সর্বোচ্চ সাজা ৬ মাস। আর জিকে শামীম চার মাস ধরে কারাগারে আছেন।

“আইন তো সকলের জন্যই সমান। কে গোলাম কিবরিয়া শামীম, কে জিকে শামীম তা বড় কথা নয়। আইন বিচার করবে অপরাধের, অপরাধীর বিচার করবে না। আইন বই দেখেই কিন্ত মাননীয় আদালত জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এই আসামির নাম কী এটা আদালত জানতেও চাননি, বুঝতেও চাননি। কোর্টের বোঝার দরকারও নাই। ”

তাহলে কেন আদেশ প্রত্যাহার করা হল- সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রপক্ষের কথা চালাচালির কারণে। আমরা কোনো তথ্য গোপন করি নাই। আইনের দৃষ্টিতে সে জামিন পাওয়ার হকদার। এই আসামি যদি জিকে শামীম না হয়ে অন্য কেউ হয়, সেও জামিন পাওয়ার হকদার।

“আজকে রাষ্ট্রপক্ষের মাথাব্যথার কারণ যেটা আমি বুঝতে পারলাম, এ জিকে শামীম বলেই তারা জামিন বাতিল করতে চেয়েছে।… চাঞ্চল্যকর বিবেচনায় আদালত আদেশ রিকল করেছেন।”

এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন কিনা জানতে চাইলে মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বলেন, “আদেশটি দেখে পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেব।”   

র‌্যাবের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানের নিকেতন থেকে গ্রেপ্তার হন বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া (জি কে) শামীম। যুবলীগ নেতা পরিচয়ে তিনি গণপূর্তের সব কাজের দরপত্র বাগিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকারি শ’ শ’ কোটি টাকার কাজ ছিল তার প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের হাতে।

শামীমকে গ্রেপ্তারের সময় জি কে বিল্ডার্সের অফিস থেকে নগদ প্রায় দুই কোটি টাকা, পৌনে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর, আগ্নেয়াস্ত্র ও মদ পাওয়ার কথা জানায় র‌্যাব।

তখন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছিল র‌্যাব। এর একটি অস্ত্র আইনে, একটি মাদক আইনে এবং একটি মুদ্রা পাচার প্রতিরোধ আইনে। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন করে আরেকটি মামলা।

এর মধ্যে অস্ত্র আইনের মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। আর মাদক আইনের মামলাটি বিচারের জন্য সম্প্রতি হাকিম আদালত থেকে দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ মাদক মামলায় এবং ৬ তারিখ অস্ত্র মামলায় হাই কোর্ট শামীমের জামিন মঞ্জুর করে। যেহেতু তিনি এখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন, সেহেতু জামিনের কাগজপত্র সেখানেই পাঠানো হয়। এরপর বিষয়টি শনিবার সংবাদমাধ্যমে এলে শুরু হয় আলোচনা।

রোববার হাই কোর্ট আদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জিকে শামীমের জামিন পাওয়ার বিষয়টি ‘দুঃখজনক’। এর পেছনে কারও গাফিলতি ছিল কিনা সেটা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।