“দুর্গা পূজায় মানুষের এই যে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস, তা দেখতে ভালো লাগে,” বললেন এক দর্শনার্থী।
Published : 21 Oct 2023, 11:16 PM
শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নয়, মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে শারদীয় দুর্গোৎসবে অংশ নিচ্ছেন অন্যরাও।
সকালে নবপত্রিকা স্থাপন, কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজায় মহাসপ্তমীর যে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছিল; সন্ধ্যায় উপচেপড়া ভিড়ে মণ্ডপ রূপ নেয় জনসমুদ্রে। এ দিন দর্শনার্থীদের আনন্দ উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি মণ্ডপে মণ্ডপে সন্ধ্যার বিশেষ পূজাও অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকেশ্বরী কেন্দ্রীয় পূজা মণ্ডপ, রমনা কালী মন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মানুষের বাধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাস। কেউ এসেছেন দেবীর কাছে প্রার্থনা করতে, কেউবা এসেছেন কেবলই দুর্গাকে দেখতে।
বিকালে মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দিরে রিফাত আরা তন্বীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন তার স্বামী অপু মেহেদী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মেহেদী বলেন, “শনিবার ছুটির দিন, এজন্য ঘুরতে বেরিয়েছি। দুর্গা পূজায় মানুষের এই যে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস, তা দেখতে ভালো লাগে।
“আর মণ্ডপে দেবী দুর্গার যে মূর্তি তৈরি করা হয়, নানা অবয়বের এসব শিল্পকর্মও মুগ্ধ করে। এজন্য প্রতিবছরই দুর্গোৎসবে ঘুরতে বের হই। আর পরিচিত বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজিও তো বাড়তি আনন্দও যোগ করে।”
সন্ধ্যায় খামারবাড়ি মণ্ডপে প্রবেশ পথ থেকেই ভিড়ের মধ্যে ঠেলে মণ্ডপে দেবীর কাছে পৌঁছাতেই লেগে গেল ১৫ মিনিট। মণ্ডপ প্রাঙ্গণে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দেবী দর্শনের পর দর্শনার্থীদের বাইরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছিল মাইকে।
মণিপুরী পাড়ার অমিত সাহা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছিলেন এ মণ্ডপে। তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে রুমকি সাহা বায়না ধরেছেন মণ্ডপের খুব কাছে গিয়ে ছবি তুলবেন। স্বেচ্ছাসেবীদের অনুরোধ করা হলেও রুমকিকে উপরে উঠতে দেওয়া হয়নি।
স্বেচ্ছাসেবক সুমন চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন উঠলে তো সবাই উঠতে চাইবে। এমনিতেই ভিড় অনেক বেশি। সবার স্বার্থেই কাউকে এখন উপরে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না।
“দিনের বেলায় ভিড় কম ছিল, তখন অনেকে এসে ছবি তুলেছেন। সন্ধ্যার পর তো লোকজনের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে যায়।”
হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যে এসেছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। যাবেনও ঘোড়ায় চড়ে। এর ফল ‘ছত্রভঙ্গ’।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রাজিব চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘোটকে দেবীর আগমন এবং গমন অশুভের বার্তা দিচ্ছে, তবে ভক্তের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলেই মিলবে শান্তি।”
মহাসপ্তমীর সকাল থেকেই মণ্ডপে আসা পুণ্যার্থীরা জানান, তারা দেবীর কাছে বিশ্ব শান্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন।
খামারবাড়ি মণ্ডপে কথা হয় পুলক দেবনাথের সঙ্গে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এবার তো দেবী অশুভের বার্তা নিয়ে এসেছেন। বিশ্বজুড়ে যে রক্তপাত চলছে, চারদিকে যে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি চলছে, তার থেকে মুক্তির জন্য আমরা দেবীর কাছে প্রার্থনা করি। দেবী যেন তার অপার মহিমায় আমাদের প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে শান্তি ফিরিয়ে দেন। অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভশক্তির যেন জয় হয়।”
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ত্রেতাযুগে ভগবান রাম তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমনের সময়ই দুর্গোৎসব।
রাম শরৎকালে দেবীকে আহ্বান করেছিলেন বলে এ পূজা শারদীয় দুর্গাপূজা নামে পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন।
দেশজুড়ে এবার ৩২ হাজার ৪০৭টি মন্দির-মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। রোববার মহাঅষ্টমী। আর অষ্টমী পূজার মূল আকর্ষণ কুমারী পূজা। ঢাকার মধ্যে রামকৃষ্ণ মিশনে বড় আকারে কুমারী পূজা হয়। কুমারী পূজায় মাতৃরূপে দেবী দুর্গারই আরাধনা করা হয়।
অষ্টমী ও নবমী শেষে মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের।