সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে শিশুটিকে নিয়ে এক নারীকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
Published : 31 Aug 2023, 07:32 PM
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ঘুমন্ত মায়ের পাশে থাকা তিন দিন বয়সী একটি ছেলে ‘চুরি হয়েছে’ বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে ‘ভ্যাকসিন দেওয়ার গেইটে’ এক নারীর কোলে দেখা গেছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
ভোলা সদর উপজেলার শান্তির হাট গ্রামের রাজমিস্ত্রী হিরন মিয়া তার স্ত্রী শাহীনা বেগমকে নিয়ে ঢাকার রূপনগর এলাকার ভাড়া বাসায় থাকেন। গত মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শাহীনা শিশুপুত্রের জন্ম দেন। তার নাম রাখা হয় আব্দুল্লাহ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলের গাইনি বিভাগের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মায়ের পাশে রেখে কাপড় মেলতে যান তার দাদী। শিশুটির মা তখন ঘুমিয়ে ছিলেন।
ফিরে এসে দাদী মোর্শেদা বেগম আর শিশুটিকে পাননি। হিরন মিয়া ও শাহীনা দম্পতির এটিই প্রথম সন্তান। সন্তান হারিয়ে শাহীনা পাগলপ্রায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি, একটি শিশু গাইনি ওয়ার্ড থেকে মিসিং হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা ইতোমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি। তারা অলরেডি কাজ করছে।
“নবজাতকের স্বজনদের উপস্থিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমাদের সিসিটিভির ফুটেজ দেখাচ্ছি শনাক্ত করা জন্য।”
পরিচালক বলেন, “আমাদের এখান থেকে কোনো বাচ্চা ছাড়পত্র ছাড়া বের হতে পারে না। প্রতিটি গেইটেই আনসার মোতায়েন করা রয়েছে। এ শিশুটি কীভাবে বের হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
শাহবাগ থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন শিশুটির পরিবারের সাথে কথা বলে ঘটনা জেনেছেন এবং সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখেছেন।
তিনি বলেন, “আমরা পুরো বিষয়টি তদন্ত করছি। এখনি কিছু বলিতে চাই না।”
শিশুটির বাবা হিরন মিয়া জানান, জন্মের পর শিশুটি তার মায়ের দুধ পাচ্ছিল না। তাই পাশের বেডের আরেক প্রসূতির কাছে নিয়ে তাকে দুধ খাওয়ানো হয়েছিল।
পাশের বেডের নুসরাত নামের ওই প্রসূতি জানান, তার সন্তান জন্মের পর থেকে ঢাকা মেডিকেলের এনআইসিইউতে ভর্তি। এ কারণে তিনি পাশের বেডের শাহীনার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে দুধ খাইয়ে শিশুটিকে দাদি মোর্শেদার কাছে দিয়ে তিনি এনআইসিইউতে নিজের বাচ্চার কাছে যান। সে সময়ে শিশুটির মা বেডে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে এসে নুসরাত শোনেন, শিশুটিকে পাওয়া যাচ্ছে না।
শিশুটির দাদি মোর্শেদা বেগম জানান, বাচ্চাটিকে তার মায়ের পাশে রেখে তিনি বারান্দায় কাপড় মেলতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন শিশুটি বিছানায় নাই। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সেখানে গেইটে ডিউটিরত আনসারদের বিষয়টি জানান মোর্শেদা।
সেই ওয়ার্ডে বিকেলে ডিউটিরত আনসার সদস্য মিঠুন বলেন, “দুপুর আনুমানিক সোয়া ২টার দিকে শিশুটির দাদি আমাকে বলেন, আধা ঘণ্টা ধরে তারা বাচ্চাটা পাচ্ছেন না। তিনি যে সময়ের কথা বলছেন, সে সময়ে মাসুদ নামে আরেকজন আনসার সদস্য ডিউটিতে ছিলেন। আমার সময়ে কোনো বাচ্চা নিয়ে কাউকে যেতে দেখিনি।”
এদিকে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা জানান, সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে, এক নারী জরুরি বিভাগের পাশে ভ্যাকসিন দেওয়ার গেইট দিয়ে শিশুটিকে নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছেন। ওই গেইটটি দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা হয়।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, “দুপুরের সব ভিডিও শিশুটির স্বজনদেরও দেখানো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা দেখে শনাক্ত করে ব্যাবস্থা নেবে।”