ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “যাদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে-আপনারাও কিন্তু একজন ক্রীড়াবিদকে চাকরি দিতে পারেন বা আপনাদেরও একটা ক্রীড়া সংগঠন থাকতে পারে।“
Published : 05 Aug 2023, 05:02 PM
পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া খেলাধুলা ও সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব নয় মন্তব্য করে দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাসস জানিয়েছে, শনিবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) পুরস্কার-২০২৩ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এক কথা বলেন।
শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকীতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খোলোয়াড়রা দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খোলেয়াড়দের প্রতি ব্যবসায়ীদের দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।
“যাদের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে- আপনারাও কিন্তু একজন ক্রীড়াবিদকে চাকরি দিতে পারেন বা আপনাদেরও একটা ক্রীড়া সংগঠন থাকতে পারে। ছড়িয়ে থাকা প্রতিভাগুলোকে আপনারা কুড়িয়ে আনেন এবং তাদের একটু সুযোগ করে দেন। আপনারা দেখবেন বাংলাদেশের জন্য এরাই সব থেকে বেশি সুনাম বয়ে আনবে। তারাই তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম সব জায়গায় তুলে ধরতে পারবেন। সেক্ষেত্রেও আপনাদের (ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তা) এই সহযোগিতাটুকু কিন্তু দরকার,” বলেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্রীড়াবিদদের জন্য ‘ক্রীড়া ফাউন্ডেশন’ করে গেছেন, যাকে পরবর্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে সরকার। সেখান থেকে বর্তমানে প্রায় ৫০০ জনকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
এই ফাউন্ডেশনে অনুদান দিতেও বিত্তবানদেরকে এগিয়ে আসার তাগিদ দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “যারা বিত্তশালী আছেন তাদেরকেও আমি বলব ক্রীড়াসেবীদের কল্যাণে এই ফাউন্ডেশনে আপনারাও অনুদান দেবেন। কারণ, আমি জানি আপনাদের অনেক পুরনো খেলোয়াড় রয়েছেন যারা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং তাদের চিকিৎসার কোনো সুযোগ থাকে না।”
খেলা ও খোলোয়াড়দের উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগের কথা তুরে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যতক্ষণ আছি, দিয়ে যাচ্ছি। যাদের ঘর নাই, তাদের ফ্লাট তৈরি করে দেওয়া বা জমি দেওয়া, খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রদান বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা বা চিকিৎসা করিয়ে বিদেশ থেকে আনা- সব করে যাচ্ছি।
“চিরদিনতো আর আমি থাকব না, হয়তো এভাবে আর কেউ আন্তারিকতার সাথে করবেও না। কাজেই তাদের ভবিষ্যৎ যাতে নির্ভার থাকে এবং ভবিষ্যতে তারা ভালো কিছু করে চলতে পারে সেজন্যই আজকে আমাদের যারা বিত্তশালী আছেন তাদের আহ্বান করব, আপনারা একটু উদ্যোগ নেন বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তারাও একটু উদ্যোগ নেন।”
দেশে খেলাধুলার ভিত্তি কামালের হাত ধরেই
বক্তব্যে শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা ও বহুমুখী প্রতিভার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “শেখ কামাল আজকে বেঁচে থাকলে আমাকে হয়তো এত বড় দায়িত্ব নিতে হতো না।”
বাবা-মা ভাইসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হারানোর স্মৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এই মাসটা আমাদের শোকের মাস। এদিনটি কামালের জন্মদিন। কামাল আমার ছোট, আমরা পিঠাপিঠি দুই ভাই-বোন। খেলার সাথি, আন্দোলন-সংগ্রামেও একসঙ্গে ছিলাম।”
শেখ কামালের জীবনযাপনের ধরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “তার ব্যক্তিত্ব ছিল অসাধারণ। সে অত্যন্ত বিনয়ী, নির্লোভ, নিরহংকারী ও সদালাপী ছিল। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সন্তান হিসেবে সে কখনই পরিচয় দিত না।
“শেখ কামালের সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল প্রবল। কিন্তু কখনো নেতা হবার চেষ্টা বা কোনো পদে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে পয়সা বানানোর চিন্তা কখনো তার মাথায় ছিল না। বরং এ ব্যাপারে সে অত্যন্ত সতর্ক ছিল। পারিবারিকভাবে, সামাজিকভাবে সে অনেক দায়িত্বশীল ছিল এবং পড়াশোনায়ও মনোযোগী ছিল।”
দেশে খেলাধুলার ভিত্তি শেখ কামালের হাত ধরেই এসেছিল বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আজকে খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। যার ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিল শেখ কামাল, এতে কোনো সন্দেহ নাই। তার যে বহুমুখী প্রতিভা, এই বহুমুখী প্রতিভাটা বিকশিত হওয়ার আগেই চলে গেল এই পৃথিবী থেকে। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, ব্যাডমিন্টনের মতো বিভিন্ন খেলার সঙ্গে জড়িত থাকায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে শেখ কামালের অবদান জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শেখ কামাল আবাহনী লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে দেশের ফুটবল খেলার উৎকর্ষ সাধনে বিশেষ অবদান রেখেছেন “
খেলাধুলার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে শেখ কামালের সম্পৃক্ততার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
পুরস্কার পেলেন যারা
ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিতে ১০ জন ক্রীড়াবিদ ও দুইটি সংস্থার হাতে ‘শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার-২০২৩’ পুরস্কার তুলে দেন শেখ হাসিনা। পুরস্কার হিসেবে প্রত্যককে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়।
আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় হকি দলের প্রথম অধিনায়ক আবদুস সাদেক। কৃতি খেলোয়াড়/ক্রীড়াবিদ হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ এবং ভারত্তোলনে সাউথ এশিয়ান স্বর্ণ পদক পাওয়া জিয়ারুল ইসলাম।
উদীয়মান খেলোয়াড়/ক্রীড়াবিদ হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মুহতাসিন আহমেদ হৃদয় এবং হকি খেলোয়াড় আমিরুল ইসলাম। ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন কালসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মালা রানী সরকার এবং তৃণমূলের হকি সংগঠক ফজলুল ইসলাম।
ক্রীড়া অ্যাসোসিয়েশন/ফেডারেশন/ক্রীড়া সংস্থা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ আর্চারী ফেডারেশন। ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক/স্পন্সর হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।
ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে খন্দকার তারেক মো. নুরুল্লাহ এবং ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার আতাহার আলী খান।
একই অনুষ্ঠান থেকে প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু ক্রীড়া শিক্ষা বৃত্তি’র কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। তিনি ‘শেখ কামাল: ক্ষণজন্মা এক নক্ষত্র’ নামের একটি বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ কামালের জীবন ও কর্মকাণ্ডের ওপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়।
এছাড়া সকালে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট এবং একটি উদ্ধোধনী খামও প্রকাশ করেন।