এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তা শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
Published : 16 Nov 2023, 06:41 PM
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি এখনও গভীর নিম্নচাপ হিসেবে থাকলেও মধ্যরাতে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে তা শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "এখনও এটি গভীর নিম্নচাপ অবস্থায়ই রয়েছে। তবে আজ (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতের দিকে এটির ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।”
গভীর এ নিম্নচাপ যদি শেষ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়, তবে এটির নাম হবে ‘মিধিলি' (MIDHILI)। এ নাম মালদ্বীপের দেওয়া।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন বোর্ডের সভা শেষে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এ ঘূর্ণিঝড়ের হালনাগাদ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ভোর নাগাদ গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এটি বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ও চট্টগ্রামে আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
এনামুর জানান, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল হলে এর বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৬৪ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এটি সর্বোচ্চ ৯০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগ নিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে।
আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলেও এটা হবে খুবই দুর্বল ঘূর্ণিঝড়। বাতাসের গতিবেগ ৫০-৭০ কিলোমিটারের মাঝেও থাকবে কি না, সন্দেহ আছে। ঘূর্ণিঝড় হিসেবে সৃষ্টি হতে না হতে এটি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কারণ ইতোমধ্যে মেঘ চলে আসছে।”
গভীর এই নিম্নচাপের কারণে ইতোমধ্যে দেশের উপকূল অঞ্চলে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা রয়েছে। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে মঙ্গলবার রাত থেকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিকালে আবহাওয়াবিদ বজলুর বলেন, “মেঘ চলে আসায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫-১০ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় হোক, না হোক, আজ রাতে এবং কাল সারাদিন সারাদেশে বৃষ্টি হবে।”
এদিকে এদিন বেলা ১১টার দিকে আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা জানিয়েছিলেন, এই গভীর নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে বৃষ্টি হচ্ছে, তা সারাদেশে শীত নামিয়ে আনবে।
এ নিয়ে তিনি বলেন, "আমাদের ভৌগোলিক কারণে শীত আসার আগে এরকম দুই একটা নিম্নচাপ সাধারণত প্রতিবার-ই তৈরি হয়। এর কারণ, এই সময়ে সূর্যটা আস্তে আস্তে দক্ষিণ দিকে চলে যায়। তখন সমুদ্র উত্তপ্ত হয় এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আর যখন এ রকম কোনো সিস্টেম আসে, তখন মেঘ আসে এবং বৃষ্টি হয়।
"বৃষ্টি হলে মেঘ কেটে যায়, আকাশ ক্লিয়ার হয়ে যায়। আসলে শীতের পূর্বশর্তই হল আকাশ ক্লিয়ার থাকতে হবে। সে হিসেবে বলা যায়, এই বৃষ্টির পর হালকা শীত শীত অনুভূতি হতে পারে। তবে দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়সহ প্রান্তিক পর্যায়ে কিন্তু ইতোমধ্যে শীত পড়তে শুরু করেছে।"
তবে তিনি এও জানান, এই নিম্নচাপটা কেটে যাওয়ার পর দুই-চারদিনের ব্যাবধানে আবারও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, "দুই-চারদিন গ্যাপ দিয়ে মাসের শেষ দিকে আবার একটা নিম্নচাপ হতে পারে। সেটা না হলেও ছোটখাটো একটা কনভেকশন হতে পারে। তখন আরেকবার বৃষ্টি হতে পারে। নভেম্বর এভাবেই যাবে।"
এদিন সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপটি সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে।
এ গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালণশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সেইসঙ্গে এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে।
সেকারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।