ইকবাল হোসাইন নামের ওই ব্যক্তি ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর ইকবাল নাম নিয়ে কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিজেকে ‘পীর’ হিসেবে জাহির করে আসছিলেন।
Published : 19 Jun 2023, 03:53 PM
কুমিল্লার দেবিদ্বারে সাত বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
ইকবাল হোসাইন নামের ওই ব্যক্তি ইকবাল হোসাইন শাহ সুন্নি আল কাদেরী ওরফে মাওলানা প্রফেসর ইকবাল নাম নিয়ে কুমিল্লার দেবিদ্বারে নিজেকে ‘পীর’ হিসেবে জাহির করে আসছিলেন।
র্যাব বলছে, কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে কোনো চাকরি না পেয়ে পীর বনে যান ইকবাল। রোববার ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ২ জুন প্রতিবেশী ৭ বছরের শিশুটিকে লিচু খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে ‘ধর্ষণ করেন’ ইকবাল। এরপর পরিবারটিকে নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে আইনগত ব্যবস্থা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন।
৬ জুন শিশুটির মা দেবিদ্বার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় রোববার ‘ভণ্ড পীর’ ইকবালকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, “গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২ জুন দুপুর ১২টার দিকে শিশুটি ইকবালের বাড়ির পাশের মাঠে খেলছিল। এসময় পীর ইকবাল শিশুটিকে লিচু দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নিজের কথিত আস্তানায় নিয়ে ধর্ষণ করে।
“এক পর্যায়ে শিশুটি পালিয়ে বাড়িতে এলে তার মা তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। লোক জানাজানি হলে ইকবাল এবং তার অনুসারীরা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ভিকটিমের পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়।”
ঘটনার পাঁচদিন পর শিশুটির মা মামলা করলে ইকবাল নিজের আস্তানা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। প্রথমে কক্সবাজার এবং পরে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপন করেন তিনি। সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুরে এক পরিচিতের বাসায় লুকিয়ে থাকা অবস্থায় তিনি র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।
র্যাব মুখপাত্র জানান, কুমিল্লার একটি কলেজ থেকে স্মাতক শেষ করে বিভিন্ন কলেজে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকতা করতেন ইকবাল। সে কারণে স্থানীয় লোকজন তাকে ‘প্রফেসর’ বলে ডাকত।
“কোনো স্থায়ী চাকরি না পেয়ে সহজে টাকা উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে একপর্যায়ে তিনি পীর বনে যান। বেশভূষা ও চলাফেরায় পরিবর্তন এনে পীরের লেবাস ধারণ করে নামের শেষে ‘শাহ সুন্নি আল কাদেরী’ উপাধি যুক্ত করে ধর্মীয় বয়ান দিতে থাকেন।”
র্যাব কর্মকর্তা বলছেন, গ্রেপ্তার ইকবাল কুমিল্লার চান্দিনা এলাকার তথাকথিত একজন পীরের মুরীদ এবং একটি দরবার শরীফের অনুসারী ও প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে দাবি করতেন।
“মূলত প্রতারণার উদ্দেশ্যে তিনি নিজের বাড়িতে একটি ‘পীরের আস্তানা’ গড়ে তোলেন। তবে ধর্মীয় বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় তিনি শুদ্ধভাবে আরবি পড়তে পারতেন না। বিভিন্ন ইসলামিক বই মুখস্থ করে ও মোবাইলে ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্য শুনে শুনে সপ্তাহে একদিন তার আস্তানায় আসর বসিয়ে ধর্মীয় বিষয়ে বক্তব্য দিতেন।
“নিজের আস্তানার বাইরেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পেতেন তিনি। তবে তার আস্তানায় আসা লোকজন মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ করত বলে জানা যাচ্ছে। ইকবাল নিজেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের এবং তার আস্তানার বিভিন্ন আইডি ও পেইজ খুলে চটকদার ধর্মীর কথা-বার্তা বলে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতেন। এভাবে কিছু অন্ধ ভক্তও জুটিয়ে ফেলেন।
ভক্তরা তাকে হাদিয়া হিসেবে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকার ও গবাদি পশু দিত জানিয়ে কমান্ডার আল মঈন বলেন, “এর আগেও কয়েকবার অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন, পরে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অঙ্গীকারনামা দিয়ে ছাড়া পান।”