পুলিশ উপ কমিশনার আজিমুল হক জানান, এ ঘটনায় জড়িত এক নারীসহ আরও দুজনকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
Published : 13 Oct 2022, 04:07 PM
ঢাকার ধানমণ্ডিতে এক বাসায় পার্লারের সেবা দিতে গিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর ‘দলবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার হওয়ার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; যাদের একজন রাজধানীর একটি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে রিয়াদ (২৪) ও ইয়াছিন হোসেন সিয়াম (২৩) নামের ওই দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রিয়াদ ধানমণ্ডির নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। গ্রেপ্তার সিয়াম ও ধরা না পড়া আরেক যুবক বখাটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার রাতে ‘ধর্ষণের’ ওই ঘটনায় এ দুজনকে গ্রেপ্তারের খবর জানাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার আজিমুল হক সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি জানান, ওই ঘটনায় জড়িত এক নারীসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সেই নারীকে রূপসজ্জার জন্য হোম সার্ভিসে ডেকে নিয়ে যাওয়া সেই নারীসহ বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পার্লারের কাজের জন্য একটি ফোন আসে। এক নারী তাকে ধানমণ্ডি ২৮ নম্বর সড়কে যেতে বলেন।
তিনি সেখানে উপস্থিত হলে তাকে অদূরে শুক্রাবাদের একটি ভবনের দোতালায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই যুবকরা তাকে ভয়ভীতি দেখায় এবং মারধর ও ধর্ষণ করে।
সাত মাস আগে বিয়ে হওয়া ওই নারী পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে তার স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন।
ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ রিয়াদের বাসাটি শনাক্ত করে বুধবার রাতে।
“বাসাটি শেরেবাংলা নগর থানায় পড়েছে। রিয়াদ তার বন্ধুদের নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ওই নারী বলেছেন, ধর্ষণের সময় অন্যদের মুখে তিনি রিয়াদের নামটি বারবার শুনেছেন।“
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককে বলেছিলেন, ধর্ষণের ঘটনায় যে তিন যুবক ছিল বলে তারা অভিযোগ পেয়েছেন, তাদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে।
তবে যে নারী এ ঘটনায় রিয়াদকে সহযোগিতা করেছেন বলা হচ্ছে, তাকে এখনও শনাক্ত করা যায়নি।
পরে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিউ মডেল কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদ তার বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে এলাকায় বেশ প্রভাব নিয়ে চলাফেরা করেন। এলাকায় তিনি ‘টিকটক রিয়াদ’ নামে পরিচিত।
ভুক্তভোগী ওই নারী সেবা দিতে ধানমণ্ডি ২৮ নম্বরে গেলে রিয়াদই তাকে শুক্রবাদের ওই বাসার নিচ থেকে দোতলায় নিয়ে যান। সেখানে তিনি বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে থাকেন। তবে ঘটনার সময় তারা বাসায় ছিলেন না বলে উপ কমিশনার আজিমুল হক জানান।
তিনি জানান, ভুক্তভোগী নারী তাদের বলেছেন তাসলিমা নামের এক নারী ‘মুখে ফেসিয়াল’ করার জন্য তাকে প্রথম ফোন করে।
“পরে পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে তাসলিমা নামের যে নারীর কথা বলা হচ্ছে, সেটা রিয়াদের ফোন থেকেই করা হয়েছে। অন্য কোনো ফোন থেকে নয়।”
তাসলিমা নামে ফোনকারীর প্রকৃত পরিচয় এবং রিয়াদ তথ্য গোপন করার চেষ্টা করছে কি না- এসব তথ্য জানার চেষ্টা চলছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপ কমিশনার বলেন, “শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে। রিমান্ড পাওয়া গেলে, তাদের কাছে এসব তথ্য জানার চেষ্টা করা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুজন জানিয়েছে তারা তিন বন্ধু মিলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী স্বামীর সঙ্গে হাজারীবাগে থাকেন। ঘটনার দিন তিনি স্বামীর সঙ্গে সাভারে বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ওখানে থাকাবস্থায় পার্লারের কাজের জন্য ফোন পান।
সংসারে কিছু বাড়তি আয়ের জন্য তিনি অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে পার্লারের হোম সার্ভিস দিতেন, যদিও তার নিজের কোনো পার্লার নেই। এ ব্যাপারে তার স্বামী সহায়তা করতেন।
রাত ৮টার কিছু পর থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত সেখানে ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে বলে ওই নারীর ভাষ্য।
ওই নারীর স্বামী একটি জুতা কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার স্ত্রীর ফোনটি নষ্ট। অনলাইনে তার ফোন নম্বারও দেওয়া আছে।
“কাজের জন্য ফোন আসার পর আমার ফোনটি নিয়ে সে (স্ত্রী) চলে যায়।”
অভিযুক্তরা তার স্ত্রীর মোবাইল ফোন রেখে দেয় বলেও জানান তিনি।
ভুক্তভোগীর স্বামী এও জানান, তার স্ত্রী গাবতলী এসে ফোন করে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তিনি এসে স্ত্রীকে নিয়ে সাভারে বন্ধুর বাসায় যান। এরপর পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়।
পরে বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয় ওই নারী।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়ক বিলকিস বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বৃহস্পতিবার ওই নারীর ফরেনসিক ও ডিএনএ পরীক্ষা করানো হয়েছে।
এছাড়া অভিযুক্তদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এসব নমুনার প্রতিবেদন পাওয়ার পর দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যাবে।