যে নারী ফোন করে পার্লারের সেবার কথা বলে ডেকে নিয়েছিলেন, তাকে এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।
Published : 13 Oct 2022, 12:35 PM
রাজধানীর ধানমণ্ডির এক বাসায় পার্লারের সেবা দিতে গিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর ‘দলবদ্ধ ধর্ষণের’ শিকার হওয়ার ঘটনায় রিয়াদ নামের এক যুবকসহ তিনজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটককে বলেন, রিয়াদের শুক্রাবাদের বাসতেই ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে। এ কাজে আরও একজন নারীকে রিয়াদ ব্যবহার করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
“ধর্ষণে জড়িত তিনজনকেই শনাক্ত করা গেছে। যার বাসায় ঘটনাটি ঘটেছে সেই রিয়াদ নিউ মডেল কলেজের শিক্ষার্থী। তবে যে নারী ফোন করে পার্লারের হোম সার্ভিসের জন্য ডেকে এনেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি।“
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, রিয়াদ তার বন্ধুদের নিয়ে মোটরসাইকেলে করে এলাকায় বেশ প্রভাব নিয়ে চলাফেরা করেন। এলাকায় তিনি ‘টিকটক রিয়াদ’ নামে পরিচিত।
জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, “ আমরা যখন চিহ্নিত করে ফেলেছি, তখন গ্রেপ্তার হবেই।”
ধানমণ্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ রিয়াদের বাসাটি শনাক্ত করেছে বুধবার রাতে।
“বাসাটি শেরেবাংলা নগর থানায় পড়েছে। রিয়াদ তার বন্ধুদের নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ওই নারী বলেছেন, ধর্ষণের সময় অন্যদের মুখে তিনি রিয়াদের নামটি বারবার শুনেছেন।“
পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহমুদও বলেছেন, ওই বাসার রিয়াদ তার বাবা-মা ও বোনের সঙ্গে থাকেন। কিন্তু ঘটনার সময় তারা বাসায় ছিলেন না।
“তবে ঘটনার সময় এক বৃদ্ধার ওই বাসায় থাকার তথ্য দিয়েছেন ওই নারী, যিনি পাশের কক্ষে ছিলেন। রিয়াদ নামের ওই যুবকসহ তার বন্ধুরা যে টিকটক করে, তার প্রমাণ বাসায় পাওয়া গেছে।”
ধর্ষণের শিকার ওই নারী স্বামীর সঙ্গে সাভারে থাকেন। তার স্বামী রাইড শেয়ারের গাড়ি চালান। সংসারে কিছু বাড়তি আয়ের জন্য তিনি অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে পার্লারের হোম সার্ভিস দিতেন, যদিও তার নিজের কোনো পার্লার নেই।
ওই নারীর অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পার্লারের কাজের জন্য একটি ফোন আসে এবং ধানমণ্ডি ২৮ নম্বর সড়কে যেতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ওই বাসায় গেলে এক নারী তাকে নিয়ে এক ভবনের দোতালায় যান এবং সেখানে গিয়ে দেখেন ওই নারী ছাড়াও তিন যুবক সেখানে আছেন।
ওই যুবকরাই তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করেছেন সেই নারী। তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলে তার স্বামী পুলিশকে জানিয়েছেন। সাত মাস আগে তাদের বিয়ে হয়।
ওই নারীর বরাত দিয়ে তার স্বামী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিন যুবকের হাতে তার স্ত্রীকে তুলে দেওয়ার সময় ওই বাসায় থাকা সেই নারী বলেন, “আমার কাজ আমি করেছি, এবার তোমাদের কাজ কর।” এরপর রিয়াদ তার হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। সে সময় তাদের কাছে অস্ত্রও ছিল।
ঢাকায় পার্লারের হোম সার্ভিস দিতে গিয়ে ‘ধর্ষণের’ শিকার নারী
রাত ৮টার কিছু পর থেকে প্রায় ১০টা পর্যন্ত সেখানে ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে বলে ওই নারীর ভাষ্য।
পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু জানিয়েছেন, মঙ্গলবার পার্লারের হোম সার্ভিস নেওয়ার জন্য যখন ফোন আসে, তখন সাভারে আরেক এক বন্ধুর বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন ওই দম্পতি। ফোন পেয়ে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী তার স্বামীর অনুমতি নিয়ে সাভার থেকে ধানমণ্ডিতে যান।
ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি স্বামীকে ঘটনা জানান। পরে স্বামী এসে তাকে নিয়ে সাভারের বাসায় চলে যান।
বুধবার সকালে আত্মীয়স্বজনের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয় ওই নারীকে।