পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীর গতি কিংবা ব্যর্থতার পরিচয় দিলে কর্মকর্তাদের ‘মান অবনমন’ করার হুঁশিয়ারি দেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
Published : 15 Feb 2024, 11:37 PM
জ্বালানির চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি কমিয়ে আনার কার্যকর উপায় বের করতে দেশের বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছে রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস কোম্পানি পেট্রোবাংলা; যা প্রশংসা পেয়েছে অতিথিদের।
রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির ডাকে সাড়া দিয়ে গ্যাস খাত বিষয়ক এক কর্মশালায় তারা এ খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বিভিন্ন পরামর্শও দিয়েছেন।
তারা এ খাতের উন্নয়নে দেশি উৎসকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পিত ও দ্রুত নতুন কূপ খনন, পার্বত্য অঞ্চলকে কূপ খননের আওতায় নিয়ে আসা, সমুদ্রে কূপ খনন কাজ শুরু করা, পর্যাপ্ত দক্ষ লোকবল নিয়োগ, দাপ্তরিক জটিলতা কমানো এবং কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে পেট্রোবাংলার প্রধান কার্যালয়ে গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহ পরিস্থিতি, ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও খনন কার্যক্রম বিষয়ক এক কর্মশালার আয়োজন করে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেয় পেট্রোবাংলা।
কাজে গতিশীলতা আনতে কোম্পানিটির প্রথম অন্তর্ভূক্তিমূলক এমন উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ কর্মশালা আয়োজনের প্রশংসা করেন অতিথিরা।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার ইসলাম ও পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক মেহেরূর হাসান।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম, অধ্যাপক এএসএম ওবায়দুল্লাহ, অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, সহযোগী অধ্যাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হুসেন মো. সায়েম, অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন, বুয়েটের অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান ও অধ্যাপক মো. ইজাজ হোসেন।
কর্মকর্তাদের মধ্যে পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল ই-ইলাহী, বাপেক্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্তুজা আহমেদ ফারুক (চিশতী) ও মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান, বাপেক্সের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাসের চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে। ২০২৯-৩০ সালের দিকে গ্যাসের চাহিদা হতে পারে ৬ হাজার ৬৫৫ এমএমসিএফডি। অন্যদিকে নিজস্ব খনিতে মজুদ কমে যাচ্ছে। বিকল্প জ্বালানির চিন্তাও করতে হচ্ছে।
বর্তমানে গ্যাসের ২০ শতাংশ চাহিদা আমদানি করে মেটানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশি গ্যাস আমদানি করা এলএনজির সঙ্গে মেশানোর পর গ্যাসের প্রতি কিউবিক মিটারের মূল্য ২৪ দশমিক ৮০ টাকা দাঁড়াচ্ছে। গড়ে বিক্রয় করা হয় প্রতি কিউবিক মিটার ২১ দশমিক ৪১ টাকা। দেশি গ্যাসের যোগান বাড়লে এ ঘাটতি কমে আসবে। তাছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসভিত্তিক সবগুলো কেন্দ্র চালাতে পারলে সেখানেও ভর্তুকি প্রায় ৭০ ভাগ কমে আসবে।
পেট্রোবাংলা ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। তাছাড়া আরও ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীর গতি কিংবা ব্যর্থতার পরিচয় দিলে কর্মকর্তাদের মান অবনমন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন প্রতিমন্ত্রী।
“প্রতিটি কাজের টাইম লাইন থাকা বাঞ্ছনীয়। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে সংশ্লিষ্টদের সরিয়ে দিয়ে সেখানে অন্যদের দায়িত্ব দেওয়ার প্রচলন করতে হবে। পেট্রোবাংলাসহ অন্যান্য কোম্পানিগুলো নিয়ে যেসব সমালোচনা হয় সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।”
কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪ হাজার ৯৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০৩০ সালের মধ্যে এ চাহিদা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৬ হাজার ৬৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০৩৫ সালে ৭ হাজার ৩৯৯ মিলিয়ন ঘনফুট ও ২০৪১ সালে ৭ হাজার ৭৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট।
এমন চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে দেশি কূপ থেকে ২ হাজার ১৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। ২০২৫ সালে এ উৎপাদন বেড়ে ২৪২৭ মিলিয়ন ঘনফুট হতে পারে। তখন এলএনজি থেকে পাওয়া ৯৮০ মিলিয়ন ঘনফুট মিলিয়ে মোট সরবরাহ হবে ৩ হাজার ৪০৭ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, অনেকগুলো দাপ্তরিক জটিলতার কারণে অনেক সময় অনুসন্ধান কাজ ও কূপ খনন পিছিয়ে যায়। কূপ খননের আগে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি কিংবা ডিপিপি প্রণয়নের ব্যাপারগুলো কাজের গতি কমায়। বার বার চেষ্টা করেও এগুলো দূর করা যায়নি।
পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল ই-ইলাহি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে গুরুত্ব দিয়ে কূপ খনন পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, কূপ খনন কিংবা গ্যাস অনুসন্ধানের মতো কাজে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। একটা কূপে গ্যাস পাওয়া না যাওয়ার অর্থ হচ্ছে পরের কূপে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা। কোনো কূপে গ্যাস না পাওয়ার অর্থই কিন্তু ব্যর্থতা নয়।