“জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার দিক থেকে তামাক ব্যবসা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না,” বলেন অধ্যাপক মোস্তফা জামান।
Published : 15 Jul 2023, 10:30 PM
পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি ঠেকাতে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করতে চাইছে সরকার; এতে করে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে সম্পূর্ণ রূপে ধূমপান নিষিদ্ধ হবে।
পাশাপাশি আরও কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
খসড়াটি চূড়ান্তের পর সংশোধনীটি চলতি মাসে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থান করা হতে পারে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীর খসড়ায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা অন্তর্ভুক্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা। বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য বা প্যাকেট প্রদর্শন নিষিদ্ধের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে।
আরও যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে- তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা; সব ধরনের খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই সিগারেট, ভ্যাপিং, হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্টসহ এ ধরনের সকল পণ্য উৎপাদন, আমদানি ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে বছরে ১২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয় বিশ্বে। গ্লোব্যাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ‘আচ্ছাদিত’ কর্মস্থলে কাজ করেন- এমন প্রাপ্ত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ঢাকার ১১৮টি আবাসিক হোটেল ও ৩৫৫টি রেস্তোরাঁ, ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৫৩টি ট্রেনের ওপর সম্প্রতি একটি গবেষণা চালায়।
এতে দেখা গেছে, ৫২৬টি নমুনার মধ্যে মাত্র ৪১টিতে (৮ শতাংশ) ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা পাওয়া গেছে, যার একটিও পরিপূর্ণভাবে আইন মেনে করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে অধূমপায়ীদের সুরক্ষায় আইন সংশোধন করে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা’ বিলুপ্ত করে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। থাইল্যান্ড, নেপাল, তুরস্ক, যুক্তরাজ্যসহ ৬৭টি দেশ ‘ধূমপানের জন নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বাতিল করেছে।
খসড়া সংশোধনীতে ফেরি করে তামাকপণ্য বিক্রির নিষিদ্ধেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, “যেসব বিষয়ে সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশেই সেসব করে সফল হয়েছে। আমাদের দেশে আইন সংশোধন হলে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে।”
বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪৮ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে। এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষার জন্য খসড়া সংশোধনীতে বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চের সভাপতি এস এম মোস্তফা জামান বলেন, তামাক বছরে দেশের ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতার দিক থেকে এই ব্যবসা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
“ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। এর পেছনে ব্যয় করতে গিয়ে অধিকাংশ মানুষই নিঃস্ব হয়ে যান। আইন সংশোধন হলে সবার উপকার হবে।”
প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের আইনের অধিকতর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে এবং শিশু-কিশোরদের তামাকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে আইন সংশোধেনের মাধ্যমে ফেরি করে তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধ করার দাবি জানান।