রোজায় বেশি কিনে ঘরে মজুদ করবেন না: প্রধানমন্ত্রী

“বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি,” বলেন শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2023, 12:05 PM
Updated : 13 March 2023, 12:05 PM

রোজার মাস সামনে রেখে দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য সংগ্রহ করে রাখা আছে জানিয়ে সবাইকে বেশি কিনে মজুদ করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে সোমবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকের একটা প্রবণতা থাকে, ‘জিনিসের দাম বেড়ে যাবে, আমরা অনেক কিনে ঘরে মজুদ করি’। দেখা গেল যে এত নুন কিনে মজুদ করে ফেলছে যে তা গলে পানি হয়ে গেল। বা এত পিঁয়াজ কিনে রেখে দিল যে পচে গেল। এটা যেন কেউ না করে।

“আমি বিশেষ করে বলব, কেউ এভাবে মজুদ করতে যাবেন না, যখন যেটুকু দরকার, সেটা বাজার থেকে নেবেন। আর নিজেদের ঘরে উৎপাদন করেন। যে যা পারেন, উৎপাদন করেন, আমাদের তাহলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। আমাদের প্রচেষ্টা আছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেই সাথে কিছু আছে, মজুদকারী, তারা মজুদ করে রাখার চেষ্টা করে। আর আমাদের কিছু কিছু বিরোধী দল তো আছেই, সব জয়গায় ঝামেলা পাকানোর জন্য একটা চেষ্টা। কথায় কথায় কোনো একটা কথা ছড়ালো, মিথ্যা একটা ধুঁয়া তুললো।

সবাইকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, “এগুলো তো হবেই, এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। মানুষের যাতে কষ্ট না হয় রমজান মাসে, তার জন্য যথাযথ চেষ্টা আমরা করছি।”

রমজান মাসে চালের কোনো অভাব হবে না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, দেশে ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য আমাদের মজুদ আছে। এক কোটি পরিবারকে ফেয়ার প্রাইস কার্ডে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ডাল, তেল, চিনি এগুলো তারা কিনতে পারছে। এখন ছোলাও তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

“আর তার থেকে আরেকটু কম আয়ের যারা, প্রথমে ৫০ লক্ষ ধরেছিলাম, প্রয়োজনে এক কোটি লোক যদি পাওয়া যায়, তাদেরকেও আমরা ওই কার্ডের মাধ্যমে এই পণ্যগুলো, মাত্র ১৫ টাকা কেজিতে কিনতে পারবে।

“আর যারা একেবারেই কর্মক্ষম না, মানে কাজ করতে পারনে না, আমরা তো ভিজিডি ভিজিএফের মাধ্যমে মাসে ৩০ কেজি চাল দিয়ে দিচ্ছি। এভাবে কোনো স্তরের মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা করেছি।”

সবাই সহযোগিতা করলে বাংলাদেশে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না বলে আশ্বস্ত করেন সরকারপ্রধান।

মূল্যস্ফীতির সমস্যা নিয়ে সব দেশকেই যে ভুগতে হচ্ছে, সে কথা ‍তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিশ্বে প্রত্যেকটি পণ্যের মূল্যস্ফিতি এত বেশি যে, আমাদের দুইশ ডলার দিয়ে যে গম কিনতে হত তা ছয়শ ডলার। ভোজ্য তেল, চিনি, জ্বালানি তেল সব কিছুরই কিন্তু দাম বেড়েছে। তার পরেও কিন্তু আমরা সাধ্যমত ক্রয় করে নিয়ে এসেছি। পরিবহন খরচ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি।

“অনেক উন্নত দেশে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে যে, একটা পরিবার তিনটার বেশি টমেটো কিনতে পারবে না, এক প্যাকেটের বেশি ডিম, হয়ত এক প্যাকেটে ৪ বা ৮টা থাকে, এক লিটার বা দুই লিটারের বেশি তেল কিনতে পারবে না। আমরা কিন্তু এখনও সেই পর্যায়ে যাইনি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রমজানে দ্রব্যমূল্য যেন না বাড়ে ইতোমধ্যে আমরা যা যা প্রয়োজনীয় সবই কিন্তু আমরা ক্রয় করে আনছি, যত দামেই হোক। যেহেতু আন্তর্জাতিক পর‌্যায়ে মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে আমাদের পরনির্ভরশীলতা কটিয়ে ওঠা নিজেদেরই দায়িত্ব।”

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “জ্বালানি খাতে কাতারের সাথে সহযোগিতার বিষয়টা কিন্তু দীর্ঘ দিনের। প্রথম কাতারে গিয়েছিলাম ২০১০ এ, তখন আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি আছে। প্রায় চৌদ্দ বছরের চুক্তি আছে। আবার সেটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাব, সেটা নিয়ে কোনো অসুবিধা নাই। আমরা এলএনজি আমদানি করব, তাদের কাছ থেকে এবং বাইরে অন্যান্য দেশের সাথেও চুক্তি করছি।

“তবে হ্যাঁ, আমাদের বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সবাইকে অনুরোধ করব, আজকে আমার সবার কাছে অনুরোধ, বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। ইংলেন্ডে ১৫০ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, আমরা কিন্তু তা বাড়াইনি। আমরা ভর্তুকি দিয়ে দিচ্ছি। এলএনজি অতিরিক্ত দামে আনি, তার পর ভর্তুকি দিয়ে কম দামে দিচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা অন্তত কমাতে হবে। নিজেদেরও কিন্তু লাভ হবে, বিল কম আসবে। আমি নিজেও কিন্তু সব সময় এগুলো মেনে চলি। জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল এবং বিদ্যুত– এগুলো ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। গ্রামে গ্রামেও চাহিদা বেড়েই যাচ্ছে, সবাইকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।”

সেই সঙ্গে সবাইকে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “আমরা আমাদের যত অনাবাদী জমি আবাদ করব, আর সবাইকে আমি বলছি যার যেখানে জমি, সেখানে কিছু উৎপাদন করার জন্য। নিজের চহিদাটা নিজে পূরণ করুণ। আমি গণভবনে সবজি থেকে শুরু করে হাঁস মুরগির খামার, গরু ছাগল আমার কিন্তু সবই আছে। আমরা আগে নিজেরা করি, পরে মানুষকে বলি।”