বহুল আলোচিত বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পের টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস থেকে উত্তরা হাউজ বিল্ডিং অংশের ঢাকামুখী দুটি লেইন সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার সকালে ওই দুই লেইনের উদ্বোধন করে বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তি কমাতে আপাতত আংশিক খুলে দেওয়া হল।
“এ প্রকল্প শেষ হলে দুর্ভোগ কমবে। প্রকল্পটি দৃশ্যমান হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিল না। যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল অন্তহীন। অনেক যাত্রী বিমানের ফ্লাইটও মিস করেছেন।”
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিআরটি প্রকল্পের পুরো কাজ শেষে আগামী বছরের মে মাসে শেষ হবে। জুনে তা উদ্বোধন হতে পারে।
“একটি লাইন আমরা খুলে দিয়েছি ঢাকামুখী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমরা ইনশাআল্লাহ আগামী মে থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহে বিআরটি উদ্বোধন করব। আরেকটি বর্ষা হয়ত আমাদের সহ্য করতে হবে।”
এ প্রকল্প সদরঘাট পর্যন্ত নেওয়ার প্রস্তাব ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সে প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আগামী বছরের শেষে অথবা ২০২৩ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন। এ কারণে এ সময় বড় কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে না।… এর মধ্যে গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তার কাজ শেষ পর্যায়ে। এখানে ২৩টি সেতু প্রধানমন্ত্রী এক দিনে উদ্বোধন করেছেন।”
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমীন উল্লাহ নূরী, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেনসহ কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক এ এস এম ইলিয়াস শাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "চালু হওয়া এই অংশ দিয়ে আপাতত ঢাকামুখী যানবাহন যাবে। বিআরটির ডেডিকেটেড বাস এলে তখন অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি বিআরটির বাসও চলবে।"
‘গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট’ প্রকল্পের (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) আওতায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে গাজীপুর থেকে শাহজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত।
বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের শিববাড়ী পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে আবদুল্লাহপুর থেকে টঙ্গীর চেরাগআলী পর্যন্ত ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার উড়াল সড়ক ও ৬টি উড়ালসেতু রয়েছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে টঙ্গী চেরাগ আলী মার্কেট পর্যন্ত এলাকার সড়কের কাজ করছে। বাকিটা হচ্ছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে।
সড়কের প্রধান করিডোরের সঙ্গে সংযোগের জন্য বিভিন্ন অংশে ১১৩টি সংযোগ সড়ক, ২৫টি বিআরটি স্টেশন, ঢাকা বিমানবন্দর ও গাজীপুরের শিববাড়ী এলাকায় দুটি বাস টার্মিনাল থাকছে।
বাস স্টপেজে প্রবেশ ও বের হওয়া এবং পথচারী পারাপারের জন্য ৩০টি আন্ডারপাস, নতুন সড়কের দুপাশে উচ্চ ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৪১ কিলোমিটার ড্রেন ও ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাতও থাকছে এ প্রকল্পের অধীনে।
চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে উড়াল সড়ক ও নিচের সড়ক নির্মাণের কাজ পেয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি), জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো–পারেটিভ। আর গাজীপুরে বিআরটির ডিপো নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে দেশীয় কোম্পানি সেল-ইউডিসি।
আরও খবর