প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অনেক সময় সংঘাতের নানা ঘটনা ঘটে, এই অ্যাপ ব্যবহারে তা কমে আসবে বলে আশা করছেন সিইসি।
Published : 12 Nov 2023, 01:47 PM
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হলে নির্বাচনী ‘বিধি ভঙ্গের সংস্কৃতি ও অনাচার’ দুটোই কমে আসবে বলে আশা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রোববার ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ উদ্বোধন করে প্রার্থী ও ভোটারদের অনলাইন পদ্ধতি ও অ্যাপ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি।
তার কথা হল, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অনেক সময় সংঘাতের নানা ঘটনা ঘটে, এই অ্যাপ ব্যবহারের ফলে সেটি 'কমে আসবে'।
“মননোয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে শো ডাউন করা হয়। এই শো ডাউন কালচার বা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও সংস্কৃতি কিন্তু এখানে সংকটও হয়ে থাকে।
“এই সংকটে নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ হতে পারে। অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। মনোনয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে অনেকে বাধাপ্রাপ্ত হন। সাবমিশন করার পর চাপ প্রয়োগ করা হয় নমিনেশন প্রত্যাহার করার জন্য। এই যে অনাচারগুলো হয়, অনলাইন সিস্টেমে অনাচারগুলো কমে আসতে পারে। অনলাইন সাবমিশনের ফলে পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও পরিশুদ্ধ হতে পারে।”
অ্যাপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নিবন্ধিত দলের উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে হাবিবুল আউয়াল বলেন, অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) হল সব প্রার্থীর জন্য। আর স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপটি সাধারণ মানুষের জন্য।
অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ‘চালু করা হলেও রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রচলিত পদ্ধতিতে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থাও রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
এই অ্যাপ ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচার চালানোর জন্যও তাগিদ দিয়েছেন সিইসি।
গত ১ নভেম্বর নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়ে গেছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদকে সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আসতে পারে তফসিল। তফসিল ঘোষণার আগে ‘অনলাইন নমিনেশন সাবমিশন সিস্টেম (ওএনএসএস) ও স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ’ সবার জন্য উন্মুক্ত করল কমিশন।
সিইসি বলেন, “প্রযুক্তির যে পরিবর্তন ৫০ থেকে ৬০ বছরে যা হয়েছে এটা অবিস্মরণীয়। প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে যদি না পারি তবে পিছিয়ে যাব। … অনলাইনে সাবমিশন সিস্টেম ব্যবহার খুবই সহজ। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। এটা অনেক আধুনিক হবে।”
অনলাইন ভোটিং প্রসঙ্গে সিইসি জানান, ঘরে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা এখনও পৃথিবীর কোথাও চালু হয়নি। তবে ভারত চেষ্টা করছে ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে ভোট নেওয়া যায় কি না।
“ভারত সফল হলে আমরাও প্রবর্তন করতে পারব। তবে কবে চালু হবে তার নিশ্চিয়তা এখন দিতে পারছি না।”
অ্যাপ নিয়ে চার নির্বাচন কমিশনার যা বললেন
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেন, অতীতে দেখা গেছে, যখন মনোনয়নপত্র জমা দেন প্রার্থীরা, তখন শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন।
“এতে তাদের শক্তি প্রদর্শিত হত। তারা প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলেন।”
অ্যাপের বৈশিষ্ট্য জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, “ দুই ব্যাপার দেখা যাবে অ্যাপে। প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গ করতে দেবে না। এছাড়া আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বল প্রয়োগ করা হয়। এই অ্যাপের ফলে আর কেউ এরকম সুযোগ পাবে না।”
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ও ভোটারদের অনলাইন পদ্ধতি ও অ্যাপ ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে আহসান হাবিব বলেন, স্মার্ট ইলেকশন অ্যাপ চালুর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রায় যুক্ত হল।
নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, “আমরা জানি এবং মানি, আমরা চাই বা না চাই, আমাদের প্রত্যেকের জীবন এখন প্রযুক্তি নির্ভরশীল। প্রযুক্তিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমরা যখন এখানে কমিশনার হিসেবে যোগ দিই, তারপর থেকে যতগুলো ইলেকশন হয়েছে, প্রায় সবগুলোতেই মনোনয়ন সাবমিশনের দিন থেকে আচরণবিধি ভঙ্গটা শুরু হয়ে যায়।“
এই অ্যাপের ফলে ভোট ‘অনেক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক’ হবে বলে মনে করেন রাশেদ সুলতানা।
তিনি বলেন, “মনোনয়ন সাবমিশন করতে এসে বিভিন্ন শোডাউন করে। কিন্তু আইনে বলা আছে, মনোনয়ন জমার সময় শোডাউন করা যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি এই অ্যাপের ফলে ভোট অনেক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হবে এবং সাধারণ জনগণ এটাকে খুব ভালোভাবে নেবে। ”
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, গত কমিশন অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু সেটা খুব একটা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
“সেটা আজকে বাস্তবায়ন হলো, সেজন্য খুব ভালো লাগছে।“
মো. আনিছুর রহমান বলেন, আগে সশরীরে মনোনয়ন জমা দিতে এসে অনেক লোকসমাগম হত এবং ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার’ শিকার হতে হত।
“এসব কারণেই একটা অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। নতুন অ্যাপ অধিকতর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার টুল হিসেবে ব্যবহার হবে। এই কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সবকিছু স্বচ্ছভাবে করে আসছে।“
অ্যাপে কি মিলছে
নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান জানান, অ্যাপটির মাধ্যমে একজন ভোটার ঘরে বসে তার ভোটার নম্বর জানতে পারবেন। পাশাপাশি তার ভোটার এলাকা, নির্বাচনী আসন, ভোটকেন্দ্রের নাম জানা যাবে। এতে ভোটকেন্দ্রের ছবি, ভোটকেন্দ্রের ভৌগলিক অবস্থান ম্যাপসহ দেখা যাবে।
এর মাধ্যমে বিভাগওয়ারী আসনগুলোর তথ্য, যেমন: মোট ভোটার, মোট আসন, আসনের প্রার্থী, প্রার্থীদের বিস্তারিত তথ্যও (হলফনামা, আয়কর সম্পর্কিত তথ্য, নির্বাচনী ব্যয় ও ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী) থাকবে।
এর মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য জানা যাবে এবং সমসাময়িক তথ্যাবলী নোটিস আকারে প্রদর্শিত হবে।
প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর চলমান ভোটিং কার্যক্রমের তথ্য এবং শেষ পর্যন্ত কত ভোট পড়ল, সেই তথ্যও অ্যাপে থাকবে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।
আহসান হাবিব খান জানান, নির্বাচনী ফলাফলের সার্বিক অবস্থা, যেমন গণনা এবং ফলাফল বিশ্লেষণ নামে অপশনের মাধ্যমে একজন ভোটার আগের নির্বাচন এবং বর্তমান নির্বাচনের ফলাফলের ‘গ্রাফিক্যাল বর্ণনাও’ পাবেন।
এক ক্লিকে ভোটের সব তথ্য: প্রস্তুত স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ