কোভিডে দূরশিখন: বেশি ঘাটতিতে সিলেটের শিক্ষার্থীরা, কম বরিশালে

শহরের শিক্ষার্থীরা গ্রামের শিক্ষার্থীদের চেয়ে খুব ভালো করতে পারেনি বলে এনসিটিবির এ গবেষণায় উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 06:01 PM
Updated : 17 May 2023, 06:01 PM

চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৭০ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী কোভিড মহামারীকালে টেলিভিশনের সম্প্রচারিত দূরশিখন (টিভি ক্লাসে) কার্যক্রমে কখনই অংশ নেয়নি বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

এছাড়া ৭৬ দশমিক ৫ ভাগ শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন এবং ৮৪ দশমিক ২ ভাগ শিক্ষার্থী কখনই রেডিওর মাধ্যমে দূরশিখন কার্যক্রমে অংশ নেয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এ গবেষণা পরিচালনা করে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এ সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়।

এতে দেখা গেছে, মহামারীকালীন বিদ্যালয় বন্ধের কারণে সব শ্রেণি ও বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন।

গবেষণাটিতে পাওয়া অঞ্চলভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিখনঘাটতি সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীদের। বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা সব শ্রেণি ও বিষয়ে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

গবেষণার ফলাফলের প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের শেখা ও ঘাটতির সার্বিক চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।

এ গবেষণা প্রতিবেদন ঢাকার একটি হোটেলে গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়। সেসময় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহমদ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (প্রাথমিক) এ কে এম রেজাউল হাসান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

গবেষণায় দেশের প্রতি বিভাগের ১০ উপজেলার প্রতিটি থেকে তিনটি করে মোট ২৪০টি বিদ্যালয়ের ১৮ হাজার ৮৩৮ জন শিক্ষার্থীর উপর তথ্য নিয়ে বিষয়ভিত্তিক শিখন অবস্থা যাচাই করা হয়েছে।

গবেষণাটিতে শিক্ষার্থীদের শিখন অবস্থা যাচাই করা হয়েছে জন্য দুই দিনের অভীক্ষার (মূল্যায়ন) মাধ্যমে। প্রথম দিন বাংলা ও গণিত এবং দ্বিতীয় দিন ইংরেজি, প্রাথমিক বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়।

অভীক্ষা শেষে সব উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা রিসোর্স সেন্টার অফিসে এনে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়।

সেই সঙ্গে শিখনঘাটতির কারণ খুঁজতে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা জানা হয়েছে জরিপ, দলীয় সাক্ষাৎকার, অংশীজনের সাক্ষাৎকার ও নথি পর্যালোচনার মাধ্যমে।

গবেষণায় উঠে এসেছে স্কুল বন্ধ থাকাকালীন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাড়িতে কোনো ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ছিল না, পঞ্চম শ্রেণির ক্ষেত্রে এই না থাকার হার ৯৫ দশমিক ১ শতাংশ।

আবার চতুর্থ শ্রেণির ৫৩ দশমিক ২ শতাংশের স্মার্টফোন ছিল না, পঞ্চম শ্রেণির ক্ষেত্রে যার হার ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ। চতুর্থ শ্রেণির ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাসায় ছিল না কেবল সংযোগসহ টেলিভিশন। চতুর্থের ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ ও পঞ্চমের ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশের বাড়িতে ছিল না রেডিও।

গবেষণার ফলাফল বলছে, যেসব শিক্ষার্থীর বাসায় এসব ডিভাইস ছিল তাদের পরীক্ষার ফলাফলও তুলনামূলকভাবে ভাল।

গবেষণায় দেশের প্রতি বিভাগের ১০ উপজেলার প্রতিটি থেকে তিনটি করে মোট ২৪০টি বিদ্যালয়ের ১৮ হাজার ৮৩৮ জন শিক্ষার্থীর উপর তথ্য নিয়ে বিষয়ভিত্তিক শিখন অবস্থা যাচাই করা হয়েছে।

গবেষণাটিতে শিক্ষার্থীদের শিখন অবস্থা যাচাই করা হয়েছে জন্য দুই দিনের অভীক্ষার (মূল্যায়ন) মাধ্যমে। প্রথম দিন বাংলা ও গণিত এবং দ্বিতীয় দিন ইংরেজি, প্রাথমিক বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে মূল্যায়ন করা হয়।

অভীক্ষা শেষে সব উত্তরপত্র সংশ্লিষ্ট উপজেলা রিসোর্স সেন্টার অফিসে এনে বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষক দ্বারা মূল্যায়ন করা হয়।

সেই সঙ্গে শিখনঘাটতির কারণ খুঁজতে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা জানা হয়েছে জরিপ, দলীয় সাক্ষাৎকার, অংশীজনের সাক্ষাৎকার ও নথি পর্যালোচনার মাধ্যমে।

গবেষণায় উঠে এসেছে স্কুল বন্ধ থাকাকালীন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাড়িতে কোনো ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ছিল না, পঞ্চম শ্রেণির ক্ষেত্রে এই না থাকার হার ৯৫ দশমিক ১ শতাংশ।

আবার চতুর্থ শ্রেণির ৫৩ দশমিক ২ শতাংশের স্মার্টফোন ছিল না, পঞ্চম শ্রেণির ক্ষেত্রে যার হার ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ। চতুর্থ শ্রেণির ৪৯ দশমিক ৬ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণির ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর বাসায় ছিল না কেবল সংযোগসহ টেলিভিশন। চতুর্থের ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ ও পঞ্চমের ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশের বাড়িতে ছিল না রেডিও।

গবেষণার ফলাফল বলছে, যেসব শিক্ষার্থীর বাসায় এসব ডিভাইস ছিল তাদের পরীক্ষার ফলাফলও তুলনামূলকভাবে ভাল।

সিলেটের শিক্ষার্থীরা সবার পেছনে

গবেষণাটিতে অঞ্চলভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শিখনঘাটতি সবচেয়ে বেশি সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীদের। বরিশাল বিভাগের শিক্ষার্থীরা সব শ্রেণি ও বিষয়ে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

তবে শহরের শিক্ষার্থীরা গ্রামের শিক্ষার্থীদের চেয়ে খুব ভালো করতে পারেনি। দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা শহরের শিক্ষার্থীদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো ফলাফল করেছে।

অন্যদিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে শহরের শিক্ষার্থীরা অল্প ব্যবধানে গ্রামের শিক্ষার্থীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

সব বিষয় ও শ্রেণিতে সমতল অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা পাহাড়ি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে। সমতলের চেয়ে পিছিয়ে আছে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও।

শিখনঘাটতি মেটাতে চার সুপারিশ

>> একটি চাহিদাভিত্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য ‘প্রতিকারমূলক শিখন প্যাকেজ’ তৈরি ও বাস্তবায়ন। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা তৈরি এবং তা বাস্তবায়ন কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার দিতে হবে বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের আবশ্যকীয় শিখন যোগ্যতায়। এক্ষেত্রে ২০২০ ও ২০২১ সালে যেসব শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল তাদের পুরো প্রাথমিক শিক্ষা জীবনকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

>> এ প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের নতুন শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশলের ওপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এজন্য একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।

>> কোভিডকালীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। তাদের শিখনক্ষতি ও শিখনঘাটতির বিষয়টি বিবেচনা করে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্যও এরূপ একটি গবেষণা পরিচালনা এবং তথ্যভিত্তিক প্রতিকারমূলক শিখন কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।

>> শিখন পুনরুদ্ধার কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের শিখনঘাটতি চিহ্নিতকরণে বিদ্যালয়ভিত্তিক চলমান মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে চিহ্নিত শিখনঘাটতি পূরণে প্রস্তুতকৃত প্রতিকারমূলক শিখন প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।