বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নাই। আমরা তার ফিরে আসাকে স্বাগত জানাই, আমরা খুব খুশি যে, উনি ফিরে আসছেন। নতুন কিছু নাই।”
Published : 30 Nov 2023, 08:54 PM
জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং শ্রম অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন স্মারক নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাদের ওই বৈঠক হয়। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওই বৈঠকে আরও ছিলেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে বৈঠকের একটি ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করতে আজ রুটিন বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এবং পররাষ্ট্র সচিব মোমেন।”
রুটিন বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, সরকার ও দূতাবাসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি। তবে, ফেইসবুক পোস্টে হ্যাশট্যাগ ডিপ্লোম্যাসির পাশাপাশি হ্যাশট্যাগ ডেমোক্রেসিও উল্লেখ করা হয়েছে।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও এটাকে ‘নিয়মিত বৈঠক’ হিসাবে বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, “মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছুটিতে গিয়েছিলেন, ছুটি থেকে ফিরে আসছেন। ফিরে এসে আমাদের সহকর্মীদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করেছেন। এটা স্বাভাবিক নিয়মিত বিষয়।
“সো, এটা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নাই। আমরা তার ফিরে আসাকে স্বাগত জানাই, আমরা খুব খুশি যে, উনি ফিরে আসছেন। নতুন কিছু নাই। আমাকে যারা যেটা ব্রিফিং করেছেন, তারা বলেছেন রুটিন ব্যাপার।”
নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাকে যারা ব্রিফ করেছেন, তা এ বিষয়ে আলোচনার কথা কিছু বলেননি।”
শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় বেশ তৎপর রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস। নির্বাচন ঘিরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্তকারীদের ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আনছে দেশটি।
বিরোধীদল বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার মধ্যে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিনটি প্রধান দলকে চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। ওই আহ্বানে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্মারকে ‘দুশ্চিন্তা নেই’
ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি আর ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কার্যকর করা এক নতুন স্মারকে সই করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
ওই স্মারকের আওতায় শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকারের রক্ষক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে হুমকি দিলে, ভয়ভীতি দেখালে ও আক্রমণ করলে ‘নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক দণ্ড, ভিসা বিধিনিষেধের’ মত অস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।
১৬ নভেম্বর ওই স্মারকের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার বক্তব্যে বাংলাদেশি শ্রম অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের উদাহরণ টেনেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশি গার্মেন্টসকর্মী ও অ্যাক্টিভিস্ট কল্পনা আক্তারের মত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে চাই আমরা; যিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার পক্ষে ভূমিকা রাখার কারণে এখনো তিনি বেঁচে আছেন।”
সামগ্রিকভাবে প্রেসিডেন্টের ওই স্মারক নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তবে, ওই স্মারক প্রকাশের পর ওয়াশিংটন দূতাবাস থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি চিঠি বুধবার প্রকাশ্যে এলে এ নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়।
ওই চিঠিতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (বাণিজ্য) লিখেছেন, স্মারকটি একটি বৈশ্বিক নীতি হলেও “বাংলাদেশ এর অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হতে পারে এমন বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে।”
চিঠিতে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের প্রভাব ফেলতে পারে ওই স্মারক। এবং সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের এটাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।”
শ্রম অধিকার ক্ষুণ্নের কারণ দেখিয়ে এটাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যবহার করার সুযোগের কথাও তুলে ধরা হয় ওই চিঠিতে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, গার্মেন্টস খাতের সবাই বেসরকারি খাতের, আর যারা কেনে, তারাও বেসরকারি কোম্পানি। সুতরাং তারা সরকারের কারণে কেনে না; কেনে সস্তা, মানসম্পন্ন ও ভালো পণ্য এবং সময়মত সরবরাহ পেলে।”
সেভাবেই দুদেশের বেসরকারি খাত কাজ করবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখন কি হবে না হবে আমি জানি না। আমাদের ডায়নিমিক বেসরকারি খাতের উপর আমার বিশ্বাস আছে।
“আমি এটাও বিশ্বাস করি আমেরিকায় সরকার বললেই জিনিস বন্ধ হবে না। কারণ, ওখানে বেসরকারি খাত যারা এগুলো কেনে, তারা সরকারকে অনেক সময় পাত্তাই দেয় না।”
চীনা পণ্যের ওপর বহু রকম বাণিজ্য বিধিনিষেধ যুক্তরাষ্ট্র আরোপ করলেও দেশটিতে ঘরোয়া পণ্যের দোকানে প্রায় সব কিছু পূর্বএশিয়ার দেশ থেকে যাওয়ার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, “কারণ ব্যবসায়ীরা ঠিকই কিনে নিয়ে যায়। সুতরাং ওগুলো নিয়ে অত দুশ্চিন্তার কারণ নাই।”
ওয়াশিংটন দূতাবাসের চিঠি প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মোমেন বলেন, “আমাদের দেশে এটা দুঃখজনক, দেশের প্রতি ভক্তি নাই… দেশপ্রেমের অভাব আছে, ডকুমেন্ট ওগুলো প্রকাশ করে দিয়েছেন আপনাদের সম্মানিত সহকর্মীরা, মিডিয়া। এটা দুঃখজনক। এটা অন্য দেশে হয় না। ওই দেশের লোকের দেশের প্রতি মতত্ববোধ অনেক বেশি। আমাদের এখানে বাহবা পাওয়ার অনেক কিছু করে।”
তিনি বলেন, “অনেক সময় এগুলো গোপনীয় থাকে। আমাদের দেশে গোপনীয়তা আর থাকে না। তাতে অনেক সময় দেশের ক্ষতিহতে পারে, যিনি প্রকাশ করে দেন তার সেই মনমানসিকতা নাই, সেই দেশপ্রেমটাও নাই।”
চিঠির বিষয়ে নিজের ধারণা নেই দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমি দেখি নাই চিঠিটা, আমার কোনো আইডিয়া নাই। আমি যেটা শুনেছি, এটা কমার্স মিনিস্ট্রিকে দিয়েছে। তারা এটা দেখভাল করবে। আমরা কিছু জানি না। যদি দুনিয়ার সব শ্রমিকের জন্য ভালো অবস্থান সৃষ্টির জন্য কোনোউদ্যোগ নিলে আমরা সাধুবাদ জানাব।”