“একটি ডাব দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, গত দেড়-দুই মাসে বাংলাদেশে নতুন একটা ডাব আবিষ্কার হয়েছে, তার নাম ‘ডেঙ্গু ডাব’।”
Published : 29 Aug 2023, 04:48 PM
দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কারণে ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেছেন, “ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের জন্য ডাক্তাররা রোগীদেরকে ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, কারণ ডাবে পটাশিয়াম আছে। কিন্তু ডেঙ্গুর কারণে ডাবের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
“একটি ডাব দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, গত দেড়-দুই মাসে বাংলাদেশে নতুন একটা ডাব আবিষ্কার হয়েছে, তার নাম ‘ডেঙ্গু ডাব’...। এটা সত্য যে আমাদের এখানে এখন দ্রব্যমূল্য অস্থিতিশীল, অনেক পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু ডাবের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটা যুক্তিও আমি দেখি না।”
ডাবের অতিরিক্ত দাম নিয়ে দেশে আলোচনার মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে ডাব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সোমবার বৈঠকে বসেন মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান। সেখানে দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের যুক্তি শুনে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি।
সফিকুজ্জামান বলেন, “আমি কোনোদিন চিন্তা করি নাই, ডাব নিয়াও আমাকে বসতে হবে। ডাব এখন আমাদের ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। নিউজে ডাবের দাম নিয়া আলোচনা হচ্ছে।”
ব্যবসায়ীরা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সুযোগ নিয়ে ডাবের দাম বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ডাবের সঙ্গে যারা জড়িত, প্রতিটি ব্যক্তি এই (ডেঙ্গুর) সুযোগ নিচ্ছেন। আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে। আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়েছি। গত বৃহস্পতিবার রাতে আমরা গোপন অভিযান করেছি, কেউ টের পায়নি। এই এক অভিযানেই কিন্তু ডাবের রহস্য বের হয়ে গেছে।”
গত ২৪ অগাস্ট রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এবং শনিবার ও রোববার মিরপুর বেড়িবাঁধ, যাত্রাবাড়ীসহ অন্যান্য এলাকায় গোপন অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে দেখা যায়, সবচেয়ে ভালো মানের ডাবের পাইকারি মূল্য ৭০ টাকা। কোনো কোনো ডাব ৪০ টাকায়ও বাজারে আসে।
ভোক্তা অধিকার দপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “আপনারা (ব্যবসায়ী) বলবেন, পরিবহনে খরচ আছে। কিন্তু সেটা তো শুধু আজকে না, অনেকদিন ধরেই আছে। কিন্তু যে ডাবটা কারওয়ান বাজারে সর্বোচ্চ ৭০ টাকায় ঢুকছে, সেই ৭০ টাকার ডাব কেন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে? কেন কারওয়ান বাজারে ১৪০ টাকায় ডাব বিক্রি হচ্ছে? যে ডাব কারওয়ান বাজারে ১৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়, সেই ডাব তো হাসপাতালের সামনে হবে ২০০ টাকা।”
ডাবের দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বৈঠকে জানান, টানা তিন মাস পর্যন্ত খরা থাকায় গাছে ডাব ফলেনি। এছাড়া, শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ডাবের পরিমাণ কম থাকায় দাম সবসময়ই বেশি থাকে।
দামবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বৈঠকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দুষেছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারী ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ডাব বিক্রি করছে তাদের কাছে। পাইকারদের বক্তব্য, দাম বৃদ্ধির জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরাই দায়ী।
পরস্পরের এই দোষারোপ প্রসঙ্গে সফিকুজ্জামান বলেন, “আপনারা যে যুক্তি দেখিয়েছেন, তা প্রত্যাশিত অজুহাত। খুচরা বলবে পাইকারি দায়ী, পাইকারি বলবে মোকাম। এগুলা শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত।
“অভিযান থেকে ডাবের যে তথ্য পেলাম, তাতে ধারণা করা যায়, প্লাস-মাইনাস করে ডাবের দাম ১০০ টাকার মাঝেই থাকবে। এটা করলে ডাবের দাম ৭০-৮০ শতাংশ কমে যাবে। আর শুধু কারওয়ান বাজার আর যাত্রাবাড়ী না, আজ থেকে সারা বাংলাদেশে ডাবের দাম চেক করা হবে।”
খুচরা বিক্রেতারা ডাব কেনার উৎস দেখাতে পারেননি এবং পাইকারি আড়তেও ক্যাশ মেমো দেওয়া হয় না বলে জানান তিনি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “আপনার আইনকানুন মেনে ব্যবসা করেন। যে ছেলেটার লাইসেন্স নাই, সে ডাব বিক্রি করে ৫ হাজার টাকা লাভ করছে। ডাব বিক্রি করছে ২০০ টাকায়। কেন, এখানে কি ডাব জাহাজে ইমপোর্ট করে আনতে হয়? ডলারে পেমেন্ট করতে হয়? বা গাছ কি খুব যত্ন করে লাগাতে হয়? ডেঙ্গুকে পুঁজি করে এটা করছেন আপনারা।
“আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আমি চাই একটা সিস্টেমে আসুক সব। বড় বড় আড়তেরও তো একটা ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। আর বিক্রয় রশিদ রাখুন সাথে।”
ব্যবসায়ীদের নিয়ম মেনে রশিদ রেখে ডাব বিক্রি করার পরামর্শ দিয়ে ব্ঠৈকে অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, “আপনারা নিয়মের মধ্যে না এলে তদারকি চলতে থাকবে।”
আরও পড়ুন-