প্রধানমন্ত্রীর আনা এই সাধারণ প্রস্তাবের ওপর ৬৩ জন সংসদ-সদস্য মোট ১০ ঘণ্টা ২৩ মিনিট আলোচনায় অংশ নেন।
Published : 10 Apr 2023, 07:09 PM
জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা আনা সাধারণ প্রস্তাব সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বসা সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরুর পর গত ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ ধারায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তির এই মাহেন্দ্রক্ষণে সংসদের অভিমত এই যে, ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সংসদীয় গণতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দুরূপে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন এবং আশা আকাঙ্খার সফল বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা রাখবে এবং এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হবে সুসংহত, শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে, সকলের জন্য সাম্য ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে, সংবিধানের এ অঙ্গীকারসমূহ পূরণে আমরা সকলে একযোগে কাজ করাব, গড়ে ভুলব আগামীর সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা- এই হোক আমাদের প্রত্যয়’।”
সংসদের বিশেষ ও ২২তম অধিবেশনের শেষ দিনে সোমবার সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, বিরোধী দলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ওই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলেন, দেশের গণতন্ত্র অব্যাহত থাকলে উন্নয়ন টেকসই হয়। গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হলে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে আমাদের গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত করতে হবে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে দেশের সকল দল, মতের ঐকমত্য প্রয়োজন।”
সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, “বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন এবং তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে কৃষি ও কৃষকের সাফল্য আজ দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে।”
বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেন, “সংসদের ৫০ বছরে অনেক ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এসেছি। এখন অনেক পরিপক্ক ও ম্যাচিউরড সংসদ বলে আমি দাবি করছি। সেই প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের একটি সংশোধনী হওয়া আবশ্যক।
তিনি মত দেন, সরকার গঠনের সময়কাল, সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এবং বাজেট পাস– এই তিনটি বিষয় বাদে সংসদ সদস্যদের নিজের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা দেয়া উচিত।
“যাতে করে সরকারি দলের সদস্যরাসহ সকল সদস্যরা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনা এবং এলাকার মতের প্রতিফলন ঘটিয়ে ভোট দিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”
কোনো দলের যদি এক তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে, তাহলে তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে অবস্থান নিতে পারবেন এমন বিধান ভারতের মত বাংলাদেশেও করার প্রস্তাব দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
‘উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একসঙ্গে চলে’– রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে করে জি এম কাদের বলেন, “যে দেশে ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কেন্দ্রীক উন্নয়ন হয়, সেদেশকে গণতন্ত্রহীন বলা যায়। অনেকেই উন্নয়নকে গণতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন। কিন্তু উন্নয়ন কখনোই গণতন্ত্রের বিকল্প হতে পারে না। উন্নয়নের বিষয়ে বলা হচ্ছে স্থিতিশীলতা উন্নয়নের সহায়ক।
“উন্নয়ন অর্থ অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়। অনেকে এই বিষয়টিকে ভুল করেন। অবকাঠামোগত উন্নয়ন উন্নয়নের সহায়ক মাত্র। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে দেশ ও জনগণের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়ন।”
প্রধানমন্ত্রীর আনা এই সাধারণ প্রস্তাবের ওপর ৬৩ জন সংসদ-সদস্য মোট ১০ ঘণ্টা ২৩ মিনিট আলোচনায় অংশ নেন।
বিশেষ অধিবেশন সমাপ্ত
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এ অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।
এর আগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণের অডিও-ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
৬ এপ্রিল থেকে ৫ কার্যদিবস পর্যন্ত অধিবেশন চলার সোমবার জাতীয় সংসদের এই বিশেষ অধিবেশন শেষ হল।
জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে ডাকা এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গত ৭ এপ্রিল সংসদে স্মারক বক্তৃতা দেন।
এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ২০টি ও অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ৪৪৯টি প্রশ্নসহ মোট ৪৬৯টি প্রশ্ন ছিল। ৭১ বিধিতে মনোযোগ আকর্ষণের নোটিস ছিল ৩৬টি।
অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য আটটি সরকারি বিলের নোটিস পাওয়া গেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তিনটি রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়।