পানিবণ্টনে সরকারি পর্যায়ে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দাতাগোষ্ঠীকেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ এসেছে হিন্দু কুশ হিমালয় আঞ্চলিক সম্মেলনে।
Published : 12 Oct 2022, 11:14 PM
হিমালয়ের হিন্দু কুশ অঞ্চলের অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ এসেছে ঢাকায় এক আঞ্চলিক সম্মেলন থেকে।
ওই অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্যের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নিয়ে বুধবার ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হয়েছে দুই দিনের এ সম্মেলন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পরিকল্পনা কমিশনের সহযোগিতায় ওই সম্মেলন আয়োজন করেছে জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা- জিআইজেড।
“ক্লাইমেট ডেটা: অপরচুনিটিজ ফর রেজিলিয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ‘হিন্দু কুশ হিমালয় আঞ্চলিক সম্মেলনে’ এই অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজন জড়ো হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে একটি প্যানেল আলোচনায় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের কাউন্সিলর হাসনা জসীম উদ্দীন মওদুদ বলেন, “আমাদের বহুপক্ষীয় চুক্তি নাই। আমাদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ, ভারত-নেপাল। এটা আমাদের জন্য খুব বেশি সহায়ক হবে না।
“আমি মনে করি, আমাদের পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে বহুপক্ষীয় বোঝাপড়ার দরকার। ভাটির দেশ হিসাবে আমরা এটা অগ্রাহ্য করতে পারব না। কারণ, আমাদের কৃষি, খাবার পানি ও জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনে পানি দরকার।”
এক্ষেত্রে ইউরোপে রাইন নদী এবং আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন নদীর পানিবণ্টন পদ্ধতিকে উদাহরণ হিসাবে টানেন তিনি।
হাসনা মওদুদ বলেন, “হিন্দু কুশ আমাদেরকে বড় বড় নদীর উৎসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এটাকে আমাদের মধ্যে বন্ধন তৈরি করেছে। যেমন এটা আমাদেরকে নেপালের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে।
“আমাদের মধ্যে সক্রিয় সহযোগিতা দরকার। কেবল বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নয়। পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজেরও কাজ করার রয়েছে।”
তিনি বলেন, “সরকারগুলো নিজেদের মধ্যে কাজ করবে, জনগণকেও পানির সমবণ্টনের কথা বলতে হবে। নেপাল অভিযোগ করে থাকে পানির উৎস আমাদের, কিন্তু আমরা তা পাই না। ভারত আমাদের পানি নিয়ে যায়। আসুন আমরা একসাথে কাজ করি।”
পানিবণ্টনে সরকারি পর্যায়ে প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও দাতাগোষ্ঠীকেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
প্যানেল আলোচনার মূল বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলার জন্য এই অঞ্চলের দেশ ও মানুষের মধ্যে সমন্বিত তথ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)- এর নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান।
তিনি বলেন, “আপনি যদি হিন্দুকুশ অঞ্চলে সমন্বিত জলবায়ু সম্পর্কিত তথ্যাবলি চান, সেখানে স্টান্ডার্ডাইজেশন থাকতে হবে। যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে কীভাবে অসঙ্গতিকে তুলে ধরা যায় এবং তথ্যাবলির ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হবে।”
মালিক ফিদা বলেন, “তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার এবং নির্ভরযোগ্য ও গুণগত মানের তথ্য নিশ্চিত করার জন্য তথ্য আদানপ্রদানের স্ট্যান্ডার্ড প্রটোকল থাকতে হবে।
“ইনডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মিটিরিওলজির (আইআইটিএম) আর্থ সিস্টেম মডেলের (ইএসএম) আলোকে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক উৎস থেকে তথ্য প্রাপ্তি ও ব্যবস্থাপনার নির্ভরযোগ্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থাকতে হবে।”
সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার।
তিনি বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ স্থানে রয়েছে। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি বেশি। সমন্বিত তথ্য ব্যবস্থাপনা থাকলে আমাদের জন্য ঝুঁকি মোকাবেলা ও অভিযোজন প্রক্রিয়া সহজতর হবে।”
উদ্বোধনী পর্বে অন্যদের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম সচিব নুসরাত নোমান, জিআইজেড বাংলাদেশের কর্মসূচি সমন্বয়ক ডানা ডে লা ফনটেইন বক্তব্য দেন।