মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার আগের মতই বলেছেন, তার দেশ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা জনগণের মাধ্যমেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।
Published : 14 Nov 2023, 11:32 AM
নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে প্রধান তিন রাজনৈতিক দলকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর চিঠির প্রসঙ্গ এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। আগের মতই বলেছেন, তার দেশ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা জনগণের মাধ্যমেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের নিঃশর্ত সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে দূতিয়ালির দায়িত্ব।
বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো এই মুহূর্তে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে সরকারের অবস্থান হল, উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হওয়া ওই ব্যবস্থা ফেরানোর সুযোগ নেই।
দুই পক্ষের অনড় অবস্থানে দেশ আবার এক দশক আগের মত টানা অবরোধের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে, জনমনে বাড়ছে শঙ্কা।
এ অবস্থায় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ডোনাল্ড লুর চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সোমবার পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। তার প্রশ্ন ছিল, বিরোধী দলের অধিকাংশ নেতা যখন কারাগারে, তখন কীভাবে সংলাপ সম্ভব?
ম্যাথু মিলার ওই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে বলেন, সাংবাদিকরা আবারও তাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে টানার চেষ্টা করছেন। তবে তিনি আগের মতই সেরকম কিছু করা থেকে বিরত থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অবস্থানের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষ নেবে না। আমরা কোনো দলকে অন্য দলের চেয়ে বেশি সমর্থন দিই না। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন দিয়ে যাব।”
গত সপ্তাহে দিল্লিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের (টু প্লাস টু) বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়েও পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থান বৈঠকে ‘স্পষ্টভাবেই’ তুলে ধরেছেন তারা।
সেই প্রসঙ্গ ধরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, দিল্লির বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছিল। ভারত এবং চীন এ বিষয়ে বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে। তারা একে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ অভিহিত করেছে। ওই বৈঠক নিয়ে মুখপাত্র কোনো ধারণা দিতে পারেন কি না।
জবাবে মিলার বলেন, ভারতে অবস্থানকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন যা বলেছেন, এর বাইরে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না।
আরেক প্রশ্নকারী ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ ও ঢাকাকে গাজার মত আরেকটি ‘উত্তপ্ত স্থান’ হিসেবে বর্ণনা করেন। তার প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কেন ভারতের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়।
মিলার তার উত্তরে বলেন, আগেও বহুবার তিনি এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেছেন। যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
“আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা জনগণের মাধ্যমেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।”
আরও পড়ুন
সমঝোতার চেষ্টায় সাদা পতাকা হাতে দূতিয়ালিতে যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের নির্বাচন: যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘অবস্থান স্পষ্ট করেছে’ ভারত