ছেলের কাঁধে ভর করে ভোট দিতে এসে জলিল বলেন, “শরীলডায় কুলায় না। আগে রাইত-দিন এইহানে ভ্যান বাইসি।”
Published : 07 Jan 2024, 01:52 PM
রাজধানীর সায়দাবাদ বাস টার্মিনালেই জীবনের প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জলিল শিকদার; যৌবনে চালিয়েছেন ভ্যান, ছিলেন কুলিদের সর্দার, আর এখন পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী।
অসুস্থতায় ঘরে পড়ে থাকায় পরিচিতজনদের সঙ্গে তার দেখা নেই বহুদিন, খোঁজও নেয়নি তেমন কেউ; এমন অবস্থায় রোববার ঘর থেকে বের হয়ে পুরনো অনেককে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না তিনি।
একসময় শরীরে যে জোর ছিল, সবার সঙ্গে দাপিয়ে চলার শক্তি ও সামর্থ্য ছিল, ভোটের দিনে পরিচিত মুখগুলোকে পেয়ে সেই স্মৃতিচারণ করলেন জলিল।
ছেলেদের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর মৃধাবাড়ি এলাকার বাসায় থাকেন তিনি। রোববার ছেলে সবুজ শিকদারের কাঁধে ভর দিয়ে সায়দাবাদ টার্মিনালের পাশেই রিজাউল করিম চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসেন স্বাধীনতা আন্দোলনের এই যোদ্ধা। ছেলের কাঁধে ভর করেই কোনোরকমে ওঠেন তিন তলায়। এরপর নিজের ভোট দেন।
আট বছর আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর তার বাম হাত ও পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এখন হাঁটতেই পারেন না। ফলে চাইলেও বাসা থেকে বের হওয়ার উপায় নেই।
জলিল ভোটকেন্দ্রে এসেই পুরনো লোকজনকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দেন অনেককে। চোখের পানি তখন গড়াচ্ছিল গাল বেয়ে; একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙেই পড়েন এই বৃদ্ধ।
জলিলের পুরনো সঙ্গী সালাউদ্দিন সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, “কাইন্দেন না। আল্লায় বাঁচাইলে আগামীবার একলগে রিকশায় কইরা ভোট দিতে আমু।”
লোকজনের ভিড়ে অনেকে এগিয়ে আসেন, হাত মেলান একসময়ের জলিল সরদারের সঙ্গে।
এখন কথা বলতে গেলেও জড়িয়ে যায় জলিলের। তবুও বললেন, “শরীলডায় কুলায় না। আগে রাইত-দিন এইহানে ভ্যান বাইসি।”
জানালেন, একাত্তরে ৯ নম্বর সেক্টরে মেজর জলিলের অধীনে যুদ্ধ করেছেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন কাঁধে।
মুক্তিযোদ্ধা জলিলের শরীর আর চলনে যে তেজ ছিল, সেই কথা স্মৃতিচারণ করলেন তার পূর্ব পরিচিত আব্বাস উদ্দিন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কী তাগদ আছিল হ্যার শইল্যে, ভারি ভারি বোঝা মাথায় তুইল্যা ফালাইত। সবাই কইত জলিল সরদার।
“অনেকদিন ধইরা অসুস্থ, বাড়িতেই থাকে। অনেকদিন পর পুরান লোকজন দেইখা কান্না থামাইতে পারে নাই।”