সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির মাংসই ছিল: পিবিআইয়ের প্রতিবেদন

“সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির মাংসই ছিল,”  বলছে প্রতিবেদন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2024, 04:34 AM
Updated : 14 Jan 2024, 04:34 AM

রাজধানীর ‘সুলতান’স ডাইন’ রেস্তোরাঁর কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে ফেইসবুকে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির মাংসই ছিল। কুকুর-বিড়ালের মাংস থাকার বিষয়টি ছিল মিথ্যা প্রচার।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে ওই প্রতিবেদন গত  ১৯ সেপ্টেম্বর জমা হলেও খবরটি জানা যায় মঙ্গলবার।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের এসআই মো. নাজিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিবেদনে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগে কনক লায়লা ও আবদুল হাকিমের নাম এসেছে। তারা যমুনা ব্যাংকের খণ্ডকালীন কর্মকর্তা ছিলেন, এখন সাময়িক বরখাস্ত।

“তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসই ছিল। কিন্তু কনক লায়লা ও আবদুল হাকিম সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে কুকুর-বিড়ালের মাংস আছে বলে অপপ্রচার চালান, যা দণ্ডনীয় অপরাধ। মানহানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।"

১৩ নম্বর মহানগর হাকিম আদালতের পেশকার মো. জাহিদ বলেন, "তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণের বিষয়ে এখনও কোনো আদেশ হয়নি। মামলায় বাদীসহ ৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।"

কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংস দেওয়ার মিথ্যা প্রচারের অভিযোগে গত ৩ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই নালিশি মামলা করেন সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ।

পরে আদালত ওই অভিযোগ তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দিল পিবিআই।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে  বলা হয়, গত ২ মার্চ সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখায় সাতটি কাচ্চি বিরিয়ানি কেনার আদেশ দেন যমুনা ব্যাংকের বনানী শাখার তৎকালীন কর্মকর্তা কনক লায়লা। সেদিন দুপুরে টাকা পরিশোধ করে তিনি খাবার নিয়ে যান।

সেদিন বেলা আড়াইটার দিকে কনক লায়লা সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার হটলাইন নম্বরে ফোন করে খাবার নিয়ে সহকারী মহাব্যবস্থাপকের কাছে অভিযোগ করেন। পরে সুলতান’স ডাইনের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক কামাল আহমেদ দুই প্যাকেট কাচ্চি বিরিয়ানি নিয়ে যমুনা ব্যাংকের বনানী শাখায় যান। তখন কনক লায়লা সুলতান’স ডাইনের কর্মকর্তা কামালের কাছে অভিযোগ করেন, কাচ্চিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে ‘বিড়ালের মাংস’ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, “তিনি (কনক) কামালকে হুমকি দিয়ে বলেন, র‌্যাব ডেকে ধরিয়ে দেবেন। কামালকে যমুনা ব্যাংকের নিচতলায় আটকে রাখা হয়। তখন তার কাছে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন আবদুল হাকিম। এক পর্যায়ে সুলতান’স ডাইনের লোকজন গিয়ে কামালকে উদ্ধার করেন।"

ওই ঘটনার তিনদিন পর গত ৫ মার্চ কনক লায়লা ফেইসবুকে লেখেন, ৩ মার্চ সুলতান’স ডাইন থেকে তারা সাতটি কাচ্চি আনেন। খাওয়ার সময় মাংসের হাড় দেখে তার সন্দেহ হয়, কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংস খাওয়াচ্ছে কি না।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “সুলতান’স ডাইনের কাচ্চিতে খাসির মাংসের পরিবর্তে কুকুর-বিড়ালের মাংসের ব্যবহার নিয়ে কনক লায়লার ফেইসবুক পোস্টের সূত্র ধরে সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে এবং হইচই পড়ে যায়। এ নিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বার্তা বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে পিবিআই।

পিবিআই বলছে, সুলতান’স ডাইনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আশরাফুল আলমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তারা। আশরাফুল তাদের বলেছেন, তাদের কাচ্চি বিরিয়ানিতে যে খাসির মাংস দেওয়া হয়, তার ওজন ছয় থেকে নয় কেজি। বেশি ওজনের খাসির মাংস সেদ্ধ হয় কম। তাই সুলতান’স ডাইন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে, বেশি ওজনের খাসির মাংস কাচ্চিতে দেওয়া যাবে না।

রেস্তোরাঁটির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গত মার্চে তদন্ত করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ওই তদন্তে সুলতান’স ডাইনের কাচ্চি বিরিয়ানিতে খাসির মাংসের বদলে অন্য প্রাণীর মাংস দেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ না মেলার কথা জানানো হয়। অন্য প্রাণীর মাংস ব্যবহারের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় সুলতান’স ডাইনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয় অধিদপ্তর।

(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)