রাষ্ট্রদূতরা সীমা ছাড়ালে ব্যবস্থা: শাহরিয়ার আলম

“যদি কেউ, কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আবারও সে ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন, যেটা আমরা মনে করব যে, তাদের বাউন্ডারিকে, লাইনকে ক্রস করে ফেলছে, আমরা অবশ্যই সেটাকে আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেব,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2023, 03:53 PM
Updated : 5 June 2023, 03:53 PM

রাষ্ট্রদূতরা দায়িত্বের সীমার বাইরে গিয়ে কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। 

সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “একটা ফেইজ গেছে, আজকে থেকে মাস ছয়েক আগে; যদি কেউ, কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আবারও সে ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন, যেটা আমরা মনে করব যে, তাদের বাউন্ডারিকে, লাইনকে ক্রস করে ফেলছে, আমরা অবশ্যই সেটাকে আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেব।” 

নির্বাচন কমিশনে গিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতের নির্বাচনী রোডম্যাপ চাওয়া এবং বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। 

গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় জাপানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকির মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। 

ওই অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমি শুনেছি পুলিশ কর্মকর্তারা আগের রাতে ব্যালট বক্স ভর্তি করেছেন। অন্য কোনো দেশে এমন দৃ্ষ্টান্তের কথা শুনিনি। এভাবে ব্যালট বক্স ভর্তির ঘটনা যাতে পুনরায় না ঘটে। এখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া দরকার, এটাই আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করি।” 

ওই বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে রাষ্ট্রদূত ইতোকে তলব করে সরকারের অবস্থান তুলে ধরার কথা সে সময় জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। 

ইতো নাওকির উত্তরসূরী হয়ে আসা ইওয়ামা কিমিনোরি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, নির্বাচনের মত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি মন্তব্য করতে চান না। তবে রাজনৈতিক দল ও অন্যদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবেন। 

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সিইসি হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ইওয়ামা কিমিনোরি। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এটি কমিশনের সঙ্গে আমার প্রথম সৌজন্য সাক্ষাৎ। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেগুলো জানতে চেয়েছি। কিন্তু বৈঠকের বিষয়ে তারাই ব্রিফ করবেন।” 

বৈঠকের আলোচনার বিষয় তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেছিলেন, “উনি আমাদের নির্বাচনের রোডম্যাপের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। সিইসি মহোদয় গত সেপ্টেম্বরে ঘোষিত রোডম্যাপের বিষয়ে তাকে ব্রিফ করেছেন। এটাই ছিল মূল বিষয়।” 

এরপর রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি জাপানি রাষ্ট্রদূত। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছিলেন, “বাংলাদেশের সার্বিক নির্বাচনী ব্যবস্থা, বর্তমান মানবাধিকার যেগুলো নিয়ে আজকে সবার কনসার্ন, স্বাভাবিকভাবে তাদেরও কনসার্ন থাকার কথা, তারা জানতে চাচ্ছে, বাংলাদেশে কী হচ্ছে, আগামীতে কী হতে যাচ্ছে, আগামী দিনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে...। এটা তারা বোঝার চেষ্টা করছেন।” 

মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের চিঠিতে ‘তথ্যের ঘাটতি’ 

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধাদানকারী ব্যক্তিদের উপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ছয় সদস্যের লেখা চিঠিতে ‘অতিরঞ্জন’, ‘তথ্যের ঘাটতি ও অসামঞ্জস্য’ রয়েছে বলে মনে করছেন শাহরিয়ার আলম। 

২৫ মে লেখা ওই চিঠিতে ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীকে নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, “আমরা চিঠিটা পেয়েছি, কালেক্ট করতে পেরেছি, লাইক এনি আদার কমিউনিকেশন্স, এখানে অনেক অতিরঞ্জন আছে, এমনকি তথ্যের বড় ধরনের ঘাটতি আছে, আপনারা নিজেরাও লাইন বাই লাইন দেখলে বুঝতে পারবেন, ইনকনসিসটেন্সি আছে।” 

তবে, চিঠির লেখক ছয় কংগ্রেস সদস্যের পাশাপাশি ‘বাংলাদেশের এসব বিষয় নিয়ে আগ্রহী অন্যদের কাছে’ সরকার যোগাযোগ করবে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, “গঠনমূলকভাবে আমরা বলেছি যে, এসব সদস্যদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। শুধু তাই নয়, এসব বিষয় নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে, বা যে বিষয়গুলোর অবতারণা করা হয়েছে, যাদের আগ্রহ আছে, এ বিষয় নিয়ে আমরা সকলকে আমরা আমাদের অবস্থান জানাব, অনেকটা রেগুলার বেসিসে।” 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশেও কিন্তু রাজনীতিবিদেরা সংসদ সদস্যরা, বিশেষ করে অন্য সংসদ সদস্যরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু বলেন, কেউ হয়ত লেখেনও, আমরা সেটা জানি না। হয়ত আমার বিরুদ্ধেও বলেন বা লেখেন। সেটা সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের ওপর নির্ভর করে তিনি এটাকে আমলে নেবেন কি-না। 

“বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যে জায়গায় আছে, কয়েকদিনে আমি ব্যাখ্যা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, সেখানে এই চিঠি, এই রকম চিঠি অতীতেও এসেছিল। ভবিষ্যতেও আরও বেশি এখানে আসতে পারে। যেটি বললাম, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের অ্যাক্টিভিটিজ আরও বাড়বে।”