আয়কর নির্ধারণে কর কর্মকর্তাদের ‘অবাধ’ ক্ষমতা থাকছে না

এজন্য একটি ‘গাণিতিক ফর্মুলা’ অনুসরণের বিধান রেখে আয়কর আইন ২০২৩ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2023, 05:50 PM
Updated : 23 Jan 2023, 05:50 PM

আয়কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তারা এখন থেকে আগের মত ‘অবাধ’ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নিজের ইচ্ছামত কর বাড়াতে বা কমাতে পারবেন না- এমন বিধান রেখে আয়কর আইন ২০২৩ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

পাশাপাশি আয়কর বিবরণী দাখিলের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কমিয়ে সেগুলো সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত নতুন এ আইনে।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইনের খসড়াসহ এটুআই’কে প্রকল্প থেকে সংস্থায় রূপান্তরের আইনের খসড়াও নীতিগত অনুমোদন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

সভায় নতুন আয়কর আইনের পাশাপাশি ‘এটুআই’কে একটি সরকারি সংস্থা (এজেন্সি টু ইনোভেট) হিসেবে গঠনের আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা বলে জানান তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রস্তাবিত আইনে রিটার্ন দাখিলের কাগজপত্র সহজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে সেগুলো সহজতর করার বিষয়ে খসড়ায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

“বিদ্যমান আইনে কেবলমাত্র উৎসে কর কর্তন সংক্রান্ত ২৯টি রিটার্ন ও বিবরণী দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে তা ১২টি করা হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।

কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে কর কর্মকর্তাদের বর্তমান ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব বিষয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, “ডিসক্রিয়েশনি পাওয়ারের বিষয়ে অন্তত ২০টি ক্ষেত্রে, আগে অফিসারের নিজের ক্ষমতা বলে, তিনি যেটা যৌক্তিক মনে করবেন সেভাবে হবে। এখন গাণিতিক ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে। ওই ফর্মুলায় যে রেজাল্ট আসবে, সেটাই হবে নির্ধারিত ট্যাক্স। অফিসার নিজে ইচ্ছা করলেই বাড়াতে বা কমাতে পারবেন না।”

এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আমার ওপর কত ট্যাক্স ধার্য হবে, আগে আয়কর কর্মকর্তা সেটা কিছুটা ডিসাইড করতেন। আয়কর কর্মকর্তার কাছে যেটা যৌক্তিক বলে মনে হত, সেটা উনি করতে পারতেন। এতে আপিলের সংখ্যা বেড়ে যেত। আমাকে করতেন, আমি মানতাম না, আমি তখন আপিলে চলে যেতাম।

“এখন যেটা করা হয়েছে ওই কর্মকর্তার সাবজেক্টিভ জাজমেন্টের ওপর নয় বরং একটা ফর্মুলা করা হয়েছে সেখানে অবজেক্টিভ ইনফরমেশনগুলো দেবেন, ফর্মুলা আপানাকে ক্যালকুলেট করে দেবে। এতে হয়রানির সুযোগ কমে যাবে।”

বর্তমান আয়কর আইনের মূল আইনটি ১৯২২ সালের জানিয়ে তিনি বলেন, পরে ১৯৮৪ সালে একটা অধ্যাদেশ করা হয়, সেটা দিয়েই এখন পরিচালিত হয়ে আসছে।

 “মন্ত্রিসভার একটা সিদ্ধান্ত ছিল সামরিক শাসনের সব আইন এবং ইংরেজিতে যেসব আইন আছে, সেগুলো পরিবর্তন করে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন করা। সে কারণে আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে এ আইনের খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে।

“আইনটি আজকে নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা পর্যালোচনা করে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “মূলত আমাদের বিদ্যমান যে আইনটি আছে ইংরেজিতে, ওটাকে বাংলায় করা হয়েছে। সহজবোধ্য করা হয়েছে। ভাষা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। বিশেষ করে যেখানে জটিলতা বেশি ও অস্পষ্টতা ছিলো, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।”

মন্ত্রি পরিষদ সচিব বলেন, “আমরা এখন আইসিটি নির্ভর হয়ে যাচ্ছি ইনকাম ট্যাক্স পদ্ধতিতে, সেটাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের চেষ্টা করা হয়েছে। এটি খুব বড় একটা আইন। সম্ভবত ৩৪৮টি ধারা রয়েছে। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন ধাপে, অভ্যান্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে তা শেয়ার করেছে, তাদের সঙ্গে মিটিং করা হয়েছে। এমনকি ওয়েবসাইটে দিয়ে মন্তব্যও নেওয়া হয়েছে।”

কর ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে যাতে তুলনা করা যায় সে চেষ্টার পাশাপাশি করজাল বাড়াতে আইন সংশোধনের এমন পদক্ষেপ বলে জানান তিনি।

এটুআই এখন ‘এজেন্সি টু ইনোভেট’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব জানান, “এটুআই প্রথমে ছিল একসেস টু ইনফরমেশন, তারপর অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট, এখন এসে বলছি এজেন্সি টু ইনোভেট। এটি আগে ছিল প্রকল্প। এখন এজেন্সি হিসেবে গঠনের জন্য আইনের খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভা আইনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।

“যে এজেন্সি গঠিত হবে তা তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে সরকারের একটা পলিসি তৈরি বা ইনোভেশনকে উৎসাহিত করবে- এরকম একটা পরিবেশ তৈরির জন্য সহযোগিতা দেবে। এজেন্সিটি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক উদ্ভাবনী সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করবে।”

এজেন্সি পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বোর্ডের সভাপতি হবেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী। আর একটি থাকবে নির্বাহী কমিটি, সেখানে ওই বিভাগের সচিব সভাপতি হবে। এছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যে রকম সাংগঠনিক কাঠামো থাকে সেভাবে পরিচালিত হবে।”

বর্তমানে এটুআইর জনবল একটি প্রকল্পের মধ্যে আছে, তারা স্থানান্তরিত হবেন কি না- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আইনের মধ্যে জনবল স্থানান্তরের বিষয়ে কোনো কিছু নাই। চাকরির শর্তাবলী প্রবিধান দিয়ে নির্ধারিত হবে বলে উল্লেখ রয়েছে।”

বিদ্যমান জনবলের কী হবে? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, প্রথমে একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করতে হয়। জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির অনুমোদনের পর সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয়।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী এজেন্সি ‘অনেকখানি স্বায়ত্বশাসিত’ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে যারা চাকরি করবেন, তাদের কাঠামোটা ভিন্ন। তারা বেসরকারি খাতের সাথে ক্লোজলি কাজ করবেন। তাদেরকে কীভাবে উৎসাহিত করা যায়। যেকোনো আইডিয়াকে কীভাবে কার্যকর করা যায় সেক্ষেত্রে তারা সর্বাত্মক সহায়তা করবেন। যিনি চাকরি করবেন আর যিনি পরামর্শক হিসেবে থাকবেন তার বেতন ভিন্ন হবে।”