“আরেকটু না জেনে উত্তর দেওয়ার মত তথ্য আমার কাছে নেই”, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
Published : 09 Jul 2023, 03:01 PM
আমেরিকান একটি ওয়েবসাইট বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর দিলেও এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বলার মত কোনো তথ্য নেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে।
এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের সাইবার ইউনিটগুলো কাজ শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, যদি কেউ এ কাজ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তার আগে জানতে হবে ‘ঘটনাটি কী ঘটেছে।’
জাতীয় শোক দিবস সামনে রেখে রোববার সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আমরা রেডি হয়ে রয়েছি এটা জানার জন্য। আমাদের সাইবার ইউনিটগুলো ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে, আরও তথ্য জানান জন্য।”
এনআইডি সার্ভার থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ডিটেইল (বিস্তারিত) জেনে উত্তর দিতে হবে, এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ডিটেইলটা নেই। আপনি যে রকম শুনেছেন, আমরাও ঠিক সেরকমভাবেই শুনছি। এটি আরেকটু না জেনে উত্তর দেওয়ার মত তথ্য আমার কাছে নেই।”
এনআইডির কার্যক্রম এখনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসেনি বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, “আনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও সেই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। এখনও এই কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের হাতে রয়েছে।
“যে ঘোষণাটা (এনআইডির নিয়ন্ত্রণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনা) দেওয়া হয়েছে, আইনি কিছু জটিলতা রয়েছে। সেগুলো শেষ করে খুব শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আসবে। আমরা তখন থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে পারব।”
বাংলাদেশের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ‘লাখ লাখ নাগরিকের তথ্য ফাঁসের’ খবর
তথ্য ফাঁস নিয়ে কী তথ্য
বাংলাদেশে সরকারি একটি ওয়েবসাইট থেকে লাখ লাখ নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর দেয় একটি আমেরিকান ওয়েবসাইট।
টেকক্রাঞ্চের ওই খবরে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের সম্পূর্ণ নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরসহ ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত হয়ে আছে ইন্টারনেটে।
টেকক্রাঞ্চ জানিয়েছে, আকস্মিকভাবে বাংলাদেশি সাইট থেকে নাগরিকদের তথ্য ফাঁসির বিষয়টি বুঝতে পেরে এক গবেষক ‘বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিমের (বিজিডি ই-গভ সার্ট) সঙ্গে যোগাযোগও করেন।
ভিক্টর মার্কোপোলোস নামে ওই গবেষক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ‘বিটক্র্যাক সাইবার সিকিউরিটি’র হয়ে কাজ করেন।
তিনি ঘটনাচক্রে ২৭ জুন লাখ লাখ বাংলাদেশির তথ্য ইন্টারনেটে উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়টি ধরতে পারেন।
বাংলাদেশ সরকারের কোন ওয়েবসাইট থেকে তথ্যগুলো উন্মুক্ত হয়েছে, তা প্রকাশ করেনি টেকক্রাঞ্চ। তবে তারা যাচাই করে দেখেছে, উন্মুক্ত হওয়া তথ্যগুলো ভুয়া নয়।
বাংলাদেশে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রত্যেক নাগরিককে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র দেয় সরকার। প্রতিটি পরিচয়পত্রই অনন্য (ইউনিক)। এই পরিচয়পত্র দিয়ে নাগরিকরা ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জমি কেনা-বেচা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলো পেয়ে থাকেন।
ইসিতে ভোটারদের ছবি, আঙুলের ছাপসহ অন্তত ৪০টির তথ্য সম্বলিত তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষিত রয়েছে। নানা ধরনের নাগরিক সেবা দিতে অর্ধ শতাধিক সংস্থার সঙ্গে ইসির চুক্তি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট কয়েকটি তথ্যের ‘ভেরিফিকেশন সার্ভিস’ চালু রয়েছে।
জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্য ভাণ্ডার ‘অত্যন্ত সুরক্ষিত’ বলে দাবি করেছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় ১২ কোটি ভোটারের নাগরিক তথ্য সংরক্ষণে আমাদের ডেটাবেইজ অত্যন্ত সুরক্ষিত। বিভিন্ন ধরনের হ্যাকিং প্রবণতা রোধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ ও সতর্কতা রয়েছে।”
‘কাউকে ছাড় নয়’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আগে তো আমাকে আইডেন্টিফাই করতে হবে যে ঘটনাটি কী ঘটেছে, কতখানি ঘটেছে, কতখানি ফাঁস হয়েছে। সেগুলো তো আমরা অবশ্যই দেখব।
“যদি দেখি কেউ এর সঙ্গে যুক্ত আছে, কেউ এর সঙ্গে সহযোগিতা করেছে, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। সেই জায়গাটিতে আমরা কাউকে ছাড় দেই না। আগে পুরো বিষয়টি জেনে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।“
এনআইডি সার্ভারের নিরাপত্তায় ত্রুটি ছিল কিনা, সেই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আগে দেখতে হবে কী ফাঁস হয়েছে, প্রটেকশন কী আছে। (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অর্পণ হতে যাচ্ছে, আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবই, সেখানে কোনো ফাঁক-ফোকড় থাকবে না। যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আমরা অবশ্যই নেব। আমরা অবশ্যই নিরাপত্তা রক্ষা করব।”