প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি এবং সৌহার্দ্য স্থাপন করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।”
Published : 07 Dec 2022, 01:31 PM
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বকে যে দুর্দশার দিকে ঠেলে দিয়েছে, সে কথা তুলে ধরে আবারও সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকতে ২৮ দেশের নৌবাহিনীর অংশগ্রহণে নৌ মহড়ার উদ্বোধনে তার এই আহ্বান আসে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, সংঘাত নয়, সমঝোতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যুদ্ধ করার জন্য নয়। আমাদের লক্ষ্য শান্তি এবং সৌহার্দ্য স্থাপন করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।”
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রথমবারের মত কক্সবাজারে এই আন্তর্জাতিক নৌ মহড়ার (আইএফআর) আয়োজন করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ তিন দিনের এ মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ-২০২২’ শীর্ষক এ মহড়ায়, যার প্রতিপাদ্য ‘সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধুত্ব’।
এ অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বঙ্গোপসাগরে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ কজওয়ে জেটিরও উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে স্বাধীনতার পর দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “যে পররাষ্ট্রনীতি তিনি (বঙ্গবন্ধু) ঘোষণা করেছিলেন, তা ছিল সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’। জাতি হিসেবে আমরা সর্বদা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। সেই নীতি মেনেই আমরা সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি।
“বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে আমরা এই নীতিমালাই মেনে চলি। আমাদের নিকট প্রতিবেশী এবং আঞ্চলিক সব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধ যে মানবজাতির জন্য কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষ তা দেখেছে। আর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যে ভয়াবহতা, যে বিভৎসতা, সেটাও সবাই দেখছে।
“আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমি আন্তর্জাতিক মহলেও সকলের কাছে এই আহ্বানই জানিয়েছি, এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। কোন সমস্যা থাকলে শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিকট অতীতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন আমরা দেখাতে সক্ষম হয়েছি। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার– এই দুটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সমুদ্রসীমার বিরোধ ছিল, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দুটি দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও তার সমাধান করেছি। আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি নিয়ে সমস্যা ছিল, সেই সমস্যাও ভারতের সঙ্গে আমরা সমাধান করেছি।”
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্র সীমা আইন করে গিয়েছিলেন, পরে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে সরকারে এসে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।
“ভারতের সাথে যে স্থল সীমানা, সেটাও জাতির পিতা ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে গিয়েছিলেন এবং সংবিধানও সেই মোতাবেক সংশোধন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরই আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সেটা সমাধান করি। বন্ধুত্বপূর্ণভাবে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায়, এটাই আমরা বিশ্বাস করি। কাজেই শান্তি আমাদের সমৃদ্ধি এনে দেয়।”
বর্তমান সময়ে ভারত মহাসাগরের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব যে বৃদ্ধি পেয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই এ সমুদ্র পথে চলে। অবাধ বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্বার্থেই সমুদ্রকে নিরাপদ রাখতে হবে, চলাচল নিরাপদ রাখতে হবে। সামুদ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও অনুসন্ধানের বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।”
সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতেই কক্সবাজারে সমুদ্র গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সমৃদ্ধ অর্থনীতি কেবল তখনই সম্ভব, যখন আমরা সমুদ্রে একটি নিরাপদ এবং সুরক্ষিত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারব। আর সে লক্ষ্যে আমরা সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় পরিকল্পিত সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গুণগত উন্নয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের নৌবাহিনীকে আমরা আধুনিকায়ন করছি।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক ভৌগোলিক সীমানার মাধ্যমে আমাদের সকল দেশ বিভক্ত হলেও বন্ধুত্বের সেতু বন্ধনে সমুদ্র উপকূলীয় সকল দেশের সঙ্গে আমরা একই সূত্রে গাঁথা। অর্থাৎ বিশাল জলরাশি প্রকৃতপক্ষে আমাদেরকে এক করেছে। ‘সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধুত্ব’– এই উপজীব্যকে ধারণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আয়োজিত ‘আইএফআর- ২০২২’ ইভেন্টটি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে বলে আমি বিশ্বাস করি, যা সকল সমুদ্রতীরবর্তী দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
এ মহড়ায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে এ আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।