নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা: প্রধানমন্ত্রী

রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উপর জোর দিচ্ছেন শেখ হাসিনা।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 04:13 PM
Updated : 8 March 2023, 04:13 PM

শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা এখন নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এটা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে বলে রোহিঙ্গাদের তাদের স্বভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এখন জরুরি বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধলেছেন তিনি।

কাতার সফরে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের এমন অবস্থা তুলে ধরেন বলে বুধবার বাসস জানিয়েছে।

স্বল্পোন্নত দেশগুলো নিয়ে জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বুধবারই দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। এদিনই কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে এক রোহিঙ্গা নেতা খুন হন।

তার দুদিন আগে শরণার্থী শিবিরে আগুন লেগে পুড়ে যায় ১২ হাজার রোহিঙ্গার ঘর, যার পেছনে নাশকতা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক নিক ক্লার্ক আগুনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কক্সবাজারের পরিস্থিতি জানতে চান।

শেখ হাসিনা তখন বলেন, “আসলে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) মাদক, অস্ত্র ও মানবপাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িত। তারা একে অন্যের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।”

মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানরা দীর্ঘকাল থেকেই বাংলাদেশে আসছে। ২০১৭ সালের আগে ৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সে বছর মিয়ানমারে দমন অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসেই এই সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, “মিয়ানমারে যখন রোহিঙ্গা নিপীড়ন শুরু হয়, রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়, তখন আমরা তাদের কষ্ট অনুভব করেছি। আমরা সীমান্ত খুলে দিয়েছি, আমরা তাদের আসতে দিয়েছি। আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের সবার আশ্রয় ও চিকিৎসারও ব্যবস্থা করেছি।”

কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসান চরে নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর কাছে ভাসান চর নিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “ভাসান চর আসলেই থাকার জন্য ভালো জায়গা... আমরা সেখানে শিশুদের জন্য ভালো থাকার ব্যবস্থা করেছি। সেখানে আবাসন সুবিধা ভালো এবং অন্যান্য সব সুবিধার ব্যবস্থাও করেছি।”

শরণার্থী রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় রয়েছে। সম্প্রতি সেই ক্যাম্পগুলোতে অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে।

Also Read: রোহিঙ্গা শিবিরে সাড়ে ৫ বছরে ১৩২ খুন

সম্প্রতি সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত জেলা পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১৩২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে শেষ সাত মাসে ঘটেছে ৩২টি খুন।

নিজ দেশে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হয়ে তাদের আশ্রয় দিলেও এখন তারা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রত্যাবাসনে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পাশাপাশি আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কথা বলতে শুরু করি। আমরা তাদের বলি, আপনারা তাদেরকে (রোহিঙ্গা) ফিরিয়ে নিন। দুর্ভাগ্যক্রমে তারা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না।

“ঢাকা সমস্যা সমাধানে আলোচনায় নিয়োজিত থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, কিন্তু এটা সত্যিই খুব কঠিন।”

ইউক্রেইন যুদ্ধ ও সেখানকার শরণার্থী সংকট বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট থেকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যুদ্ধ (ইউক্রেইনে) পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পুরো ফোকাস (দৃষ্টি) এখন যুদ্ধ এবং ইউক্রেইন থেকে আসা শরণার্থীদের দিকে, যা (রোহিঙ্গা) পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।”

বাসস জানিয়েছে, আল জাজিরা সাক্ষাৎকারের একটি সংক্ষিপ্ত অংশ এরইমধ্যে সম্প্রচার করেছে, পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার আগামী ১১ মার্চ শনিবার সম্প্রচার করা হবে।