মিতুর স্বামী বাবুল আকতার, তার বাবা ও ভাই এ মামলার আসামি ছিলেন। তাদের সবাই বিভিন্ন সময়ে অব্যাহতি পেয়ে গেছেন।
Published : 18 Jan 2024, 02:21 PM
চট্টগ্রামের মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকাণ্ড নিয়ে ‘মিথ্যা ও অসত্য তথ্য’ প্রচার করার অভিযোগে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা মামলায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাবেক সাংবাদিক ও ইউটিউবার ইলিয়াস হোসাইনের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আদালত।
তবে মিতুর স্বামী বাবুল আকতারের ভাই মো. হাবিবুর রহমান লাবুকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এ মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত বিদেশে অবস্থানরত ইলিয়াস হোসাইনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর জন্য ২৮ এপ্রিল দিন ধার্য করে দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নজরুল ইসলাম শামীম।অন্যদিকে লাবুর অব্যাহতি চেয়ে শুনানি করেন আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম।
মামলার আদ্যোপান্ত
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মিতুকে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন ৬ জুন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছিলেন সে সময় পুলিশ সুপার পদে থাকা বাবুল আক্তার। কিন্তু মিতু হত্যার ঘটনায় ২০২১ সালের ১২ মে বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
মিতু হত্যা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুলের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে বাবুলের করা মামলায় তিনিসহ সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআই গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।
চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে বর্তমানে মিতু হত্যা মামলার বিচার চলছে।
এদিকে ওই মামলায় ‘স্বীকারোক্তি আদায়ে’ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ২০২২ সালে পিবিআই প্রধান বনজ কুমারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছিলেন বাবুল আক্তার।
সেই আবেদন আদালত খারিজ করে দেওয়ার পর ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কারাগারে থাকা বাবুলের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
বাবুল ছাড়াও তার বাবা মো. আবদুল ওয়াদুদ মিয়া, ভাই হাবিবুর রহমান এবং ইউটিউবার ইলিয়াস হোসাইনকে আসামি করা হয় সেখানে।
মামলায় বলা হয়, “বাবুল আক্তার, তার ভাই ও বাবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় কথিত সাংবাদিক ইলিয়াছ হোসাইন বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় গত ৩ সেপ্টেম্বর তার ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে ‘স্ত্রী খুন, স্বামী জেলে: খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব’ শিরোনামে ৪২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করেন।
“ওই ভিডিওতে বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্যের মাধ্যমে তদন্তাধীন মিতু হত্যা মামলার তদন্তকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাসহ তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে প্রচার করা হয়।”
পিবিআই প্রধান তার মামলায় বলেছিলেন, “দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উসকানি, বাংলাদেশ পুলিশ এবং পুলিশের বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পিবিআই ও বিশেষ করে আমার মান-সম্মান ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছে আসামিরা। যার জন্য দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ৯ এপ্রিল চারজনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
গত ২৫ জুলাই আদালত মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করলেও অভিযোগে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ না থাকায় বাবুল ও তার বাবাকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়। ইলিয়াস ও লাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন রাখে।
বৃহস্পতিবার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে লাবুও অব্যাহতি পাওয়ায় চার আসামির মধ্যে কেবল ইলিয়াসের বিচার শুরুর আদেশ হল।