“তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে ইসির কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কিছু নেই,” বলছেন ইসি সচিব।
Published : 13 Jun 2023, 09:04 PM
রাজশাহী ও সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী প্রত্যাহারের ঘোষণা নিয়ে ভাবনার কিছু দেখছে না নির্বাচন কমিশন।
ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলছেন, “ভোটের দুদিন আগে এসে যদি বলে প্রত্যাহার করছি, সেটা রাজনৈতিক বিষয়। তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে ইসির কাজ প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কিছু নেই।”
বিএনপির বর্জনের মধ্যে সোমবার খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
কিন্তু ভোট চলাকালে বরিশালে হাতপাখার প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা হলে দুই সিটির ভোটের প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দেয় দলটি।
ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করিম জানান, ২১ জুন অনুষ্ঠেয় রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচন থেকেও প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন তারা।
রাজশাহীতে ভোট বর্জনের ঘোষণা হাতপাখার প্রার্থীর
সিলেটে ভোটের মাঠ ছাড়ার ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের
হাতপাখার ফয়জুলের ওপর হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ ইসির
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম দাবি করেন, সিটি নির্বাচন ‘অংশগ্রহনমূলক’ হচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলনের ঘোষণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এটা রাজনৈতিক দলের ‘রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত’; এখানে ইসির করার কিছু নেই। অংশগ্রহণমূলক ভোটের জন্য কমিশন ‘সব সময় প্রস্তুত’ রয়েছে।
“সিলেট-রাজশাহীতে অনেক প্রার্থী রয়েছে। সিলেটে এক ওয়ার্ডে ১৯ জন পযন্ত প্রার্থী রয়েছে। তারা (ইসলামী আন্দেোলন বাংলাদেশ) মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, প্রতীক পেয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পর কেউ প্রত্যাহার করলে, বর্জন করলে কমিশনের কী করার আছে? প্রতীক তো থাকবে ব্যালটে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাহার করলে তখন দেখা যেত।”
তারপরও নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলা যাবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, “নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারছি না। কোনো দল অংশ নেবে কি নেবে না-এটা দলের রাজনৈতিক এখতিয়ার, এটা তারা ফায়সাল করবেন। ইসির কাজ হচ্ছে সবার জন্যে একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখা।”
২৪ ঘণ্টার মধ্যে বরিশালে অনিয়মের প্রতিবেদন চায় ইসি
নির্বাচন কমিশন বলছে, হাতপাখার প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি। তার ওপর হামলা হয়েছে, সেটা ফৌজদারি বিষয়। সেজন্য কমিশন নির্বাচন নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন-পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
কমিশনের জনসংযোগ পরিচালক শরীফুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘কিছু অনিয়মের কথা’ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের ওপর হামলা, লাঠি নিয়ে বিক্ষোভ, বরিশাল নগরীর কাউনিয়া ব্রাঞ্চ হাফিজিয়া মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রে বুথে ঢুকে ভোটারকে নৌকার এজেন্টের ‘নির্দেশনা দেওয়া’ এবং প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এসেছে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে।
“সে বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বরিশালের জেলা প্রশাসক, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ১৪ জুনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে।”
ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, “বরিশাল ও খুলনায় ভোটার, প্রার্থীসহ সবাই বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব সময় বেশি হয়ে থাকে। তার কারণ হচ্ছে, মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা রয়েছেন। তাতে ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকে।”
খুলনায় ভোট পড়েছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি, আর বরিশালে ৫০ শতাংশের বেশি।
ইসি সচিব বলেন, “আমরা মনে করি, ভোটার উপস্থিতি বরিশাল ও খুলনায় আরও একটু বেশি হলে আরও ভালো হত।”
এনআইডি সেবা: সরকারের সিদ্ধান্ত ‘মেনে চলবে’ ইসি
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু থেকে ইসির হাতে থাকলেও এখন তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করার জন্য নতুন একটি আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। এ বিষয়েও ইসি সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা।
উত্তরে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে ইসিকে কিছু দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। সেখানে এনআইডির বিষয়টি নেই।
“আইনে বলা আছে, নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে যখন ছবি-সমৃদ্ধ ভোটার তালিকা হয়েছে, তার উপজাত হিসেবে এনআইডি দেওয়া শুরু হয়। তার দায়িত্ব দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনকে।
“রাষ্ট্র আবার সেই আইন সংশোধন করে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিচ্ছে। এতে নির্বাচন কমিশনের কোনো বক্তব্য নেই। নির্বাচন কমিশন সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে চলছে, চলবে।”
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ আইন পাস হলে দেশের সব নাগরিককে জন্মের পর একটি স্বতন্ত্র আইডি নম্বর দেওয়া হবে। এই আইডি নম্বরই হবে যে কোনো ব্যক্তির পরিচিতি নম্বর।
খুলনা-বরিশালে বাড়ল ইসির সন্তুষ্টি, সামনে এবার রাজশাহী-সিলেট
মন্ত্রিসভার সায়: স্বরাষ্ট্রে আসছে এনআইডি, সবার হবে ‘স্বতন্ত্র আইডি’