২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় থেকে নির্বাচন কমিশন এনআইডি সেবা দিয়ে আসছিল।
Published : 12 Jun 2023, 05:33 PM
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধনের কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিতে নতুন একটি আইন করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে সরকার।
এ আইন পাস হলে দেশের সব নাগরিককে জন্মের পর একটি স্বতন্ত্র আইডি নম্বর দেওয়া হবে। এই আইডি নম্বরই হবে যে কোনো ব্যক্তির পরিচিতি নম্বর।
এখন বাংলাদেশে এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম নিবন্ধনের নম্বর, পাসপোর্টের নম্বর সব আলাদা। এতে একজনের অনেকগুলো নম্বর বহন করতে হচ্ছে। নতুন আইন হলে সেই জটিলতার অবসানের পথ খুলবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০২৩’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “এই আইনের আওতায় এখন আমাদের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন পরিচালিত হবে। তাদের এ সংক্রান্ত একটি অফিস থাকবে। অফিসে একজন নিবন্ধক থাকবেন এবং নিবন্ধকের মাধ্যমে এই কাজটি করা হবে।
“(নতুন আইন পাস হলে) যে কোনো নাগরিক জন্মের পরপরই নাগরিক সনদ বা একটি নম্বর পাওয়ার অধিকারী হবেন। এটি অপরিবর্তিত হবে। এটি জন্মের সাথে সাথে নিতে পারবেন। এটা কোনো সময় পরিবর্তন করা যাবে না।”
এনআইড কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এলে নির্বাচন কমিশনের কাজ শুধু ভোটার তালিকা প্রণয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কিনা, এ প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “হ্যাঁ। নির্বাচন কমিশন ১৮ বছরের বেশি বয়সীদেরে নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে। এখানে যে এনআইডি থাকবে বা এনআইডিপ্রাপ্ত যে জনসংখ্যা থাকবে তাদের মধ্য থেকে এই নাম্বার ব্যবহার করে তারা সেটি করতে পারবে।”
এনআইডির ডেটাবেইজ কীভাবে স্থানান্তর করা হবে, সেই প্রশ্নে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের খসড়া অনুযায়ী এ কাজের জন্য নতুন একজন নিবন্ধক থাকবেন। এনআইডি সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়ে তার দপ্তরে স্থানান্তরিত হবে।
এনআইডি নিয়ে মানুষের ভোগান্তি দূর করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এনআইডির ভুল থাকলে কীভাবে সংশোধন হবে, সেগুলো সহজ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে জনবল লাগবে তারা তা নেবেন। সেভাবে অর্গানোগ্রাম তৈরি করবেন।
যাদের এখনও জন্ম নিবন্ধন বা এনআইডি হয়নি, তাদের বিষয়টি কী হবে, এ প্রশ্নে মহাবুব হোসেন বলেন, “তারা এখন থেকে (নতুন আইন হলে) নতুন নম্বর নেবেন। সব জায়গায় এ নম্বরটি ব্যবহার হবে। এ নম্বরটি পেয়ে গেলে আর কোনো নম্বর লাগবে না।”
তবে বর্তমানে যে এনআইডি নম্বরগুলো আছে, সেগুলো চলমান থাকবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, এ আইনের অধীনে একটি নিবন্ধকের অফিস থাকবে। নিবন্ধকের অফিস নিবন্ধনের কাজটি করবে। সেজন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি দরকার তা সরকার দেবে।
জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে নিবন্ধকের অফিস থাকবে কিনা, সেই প্রশ্নে মাহবুব হোসেন বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি যখন দাঁড়াবে তখন তারা বিধি দ্বারা ঠিক করে নেবেন। যদি তারা মনে করে প্রত্যেক জায়গায় অফিস দরকার তা তারা করবেন।”
বাংলাদেশে ২০০৭ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সময় জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) তৈরি করা হয়। তখন থেকে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে আসছে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন।
২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিও পায়। পরে স্মার্ট এনআইডিও ইসির ব্যবস্থাপনায়ই হয়। এখন নানা ধরনের সেবা পেতে নাগরিকদের এনআইডি প্রয়োজন হয়।
২০২১ সলে সরকার এনআইডি কার্যক্রম ইসির হাত থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তখনকার কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এর বিরোধিতা করে। কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি সেভাবে বিরোধিতা না করলেও ইসি কর্মকর্তাদের আপত্তি রয়ে যায়।
এর মধ্যেই ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদন পায়। সোমবার তা চূড়ান্ত অনুমোদন পেল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য… সব নাগরিকের একটি ইউনিক নম্বর থাকা দরকার। এতদিন হয়ত বিভিন্ন ধাপে নম্বরগুলো দিয়েছি। যেটা নিয়ে এখন অনেক সময় কনফিউশন তৈরি করছে। এখন প্রত্যেক নাগরিকের একটি নম্বর থাকবে, যেটি তার আইডেন্টিটি হবে। সেটার ভিত্তিতে তার সমগ্র জীবনে, আমাদের যেমন সিআরভিএস তথ্য আছে, সেগুলো আপডেট করবে। এটা আস্তে আস্তে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করব।”
নতুন আইন জাতীয় সংসদে পাস হলেই কার্যকর হবে না জানিয়ে মাহবুব হোসেন বলেন, “আইনে একটি বিধান রাখা হয়েছে যে সরকার নির্ধারিত তারিখ থেকে কার্যকর হবে। অর্থাৎ আইনের গেজেট প্রকাশ হলেই হবে না, সরকার যেদিন থেকে কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করবে, সেদিন থেকে কার্যকর হবে।”
অন্যান্য আইন
এদিন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট আইন, ২০২৩ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৬১ সালের একটি অধ্যাদেশের আলোকে এ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই অধ্যাদেশের অধীনেই পরিচালিত হচ্ছে। আগের অধ্যাদেশকে এখন আইনে রূপান্তর করা হচ্ছে।
মাহবুব জানান, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন, ২০২৩ এর খসড়াতেও নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
“২০১০ সালে যখন এ আইন করা হয়, তখন ওই আইনের আওতায় বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছিল, যেগুলো অন্য আইনে ছিল। ওই আইনগুলো পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় পরিবর্তিত অংশটুকু বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইনে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে।”
মন্ত্রিসভা জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এটিকে আইনের কাঠামোর মধ্যে আনা হচ্ছে। এখন থেকে নিজস্ব আইনে এটি পরিচালিত হবে।”
সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়াতেও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
এছাড়া ‘দ্য হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দ্য সেইফ অ্যান্ড এরভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসিইক্লিং অব শিপস, ২০০৯’ এ অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা; যা হংকং কনভেনশন নামে পরিচিত।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এটি অনুসমর্থন করা হলে এই চুক্তির আওতায় আমাদের জাহাজ ভাঙা শিল্পের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আমরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তুলনামূলক কম দামে মেয়াদোত্তীর্ণ জাহাজগুলো কিনে এখানে রিসাইক্লিং করতে পারব। লোহা বা রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উপকৃত হবে।”