ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানের এ আহ্বান আসে।
Published : 26 Oct 2022, 04:46 PM
ব্যবসায়ীদের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের ‘দেশ ও মানুষের কথা’ ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার গণভবনে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধানের এ আহ্বান আসে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০০৯ এ সরকার গঠনের পর, আমাদের ব্যবসায়ীরা সে যে দলেরই হোক, আমরা কিন্তু ওখানে দল বাছতে যাইনি। যে দলেরই হোক, যাতে তারা ব্যবসাটা ব্যবসায়ী হিসেবে করতে পারে, সেই পরিবেশটা কিন্তু আমি সৃষ্টি করে দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “এখানে কোন হাওয়া ভবনও নেই, আর পিএমওতে (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে) কোনো উন্নয়ন উইংও নাই, যে হাওয়া ভবনে এক ভাগ দিতে হবে, উন্নয়ন ভবনে এক ভাগ দিতে হবে বা অমুক জায়গায় দিতে হবে। এই যন্ত্রণায়তো আপনাদের ভুগতে হয় না এখন আর। এটাতো আপনারা নিশ্চয় স্বীকার করবেন। সেই যন্ত্রণা থেকে তো সবাই মুক্ত।”
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন প্রফিটের ব্যাপারে চিন্তা করেন। আগে তো একটা বড় অংশ হাওয়া হয়ে যেত। এখন আর সেই হাওয়া হওয়ার ব্যবস্থাটা নাই। সেখান থেকে সবাইকে মুক্ত রেখেছি। তো সেটাই মাথায় রেখে যদি মনে করেন যে– না, দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে...।”
আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদ ক্ষমতায় থাকায় যে ধারাবাহিকতা তৈরি হয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এতদিন এই ১৪ বছর একটানা ধারাবাহিকভাবে আপনারা লাভজনক ব্যবসাটা করে গেছেন। … করোনার সময়… প্রণোদনা দিলাম, বিশেষ প্রণোদনা, আমার কাছে কেউ এসে দাবি করেননি। কেউ বলে নাই। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার একটা টিম খুব ভালো কাজ করছিল– যে কোথায় কি করা যেতে পারে। আমার অর্থনীতির চাকাটাকে চলমান রাখতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারীর মধ্যে পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশযখন তাদের কারখানা বন্ধ রেখেছিল, বাংলাদেশে তার সরকার তখন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
“শ্রমিকদের বেতন, এই যে গার্মেন্টস, তার বেতন তো আমি দিয়ে দিলাম সব। প্রণোদনা প্যাকেজ করলাম, বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করলাম।”
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, “এখন একটু যখন অপজিশন মাঠে নেমে গেছে, হঠাৎ ব্যবসায়ী মহলে আবার একটু শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে, অথবা কারো আশার প্রদীপ জ্বলে উঠছে, যদি আবার হাওয়া ভবন খুলতে পারে তাহলে কি সুবিধা পাবে…।’
শেখ হাসিনা বলেন, “১৪টা বছর আমরা সরকারে; আমি জানি না ব্যবসায়ীরা এটা উপলব্ধি করে কি করে না? এত নিশ্চিন্তে ব্যবসা করার সুযোগ তো আর পান নাই।”
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “ক্রাইসিসটা তো বাংলাদেশের না, ক্রাইসটা তো ইন্টারন্যাশনাল, এটা মাথায় রাখতে হবে। আজকে যেসব জায়গা থেকে আমরা সার, গম, খাবার পণ্য আনি, সব জায়গায় সমস্যা।”
মেগা প্রজেক্ট এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকারের সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “হ্যাঁ সমালোচনা… মেগা প্রজেক্ট, তারপর বিদ্যুৎ নিয়ে সমালোচনা, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কেন আনলাম, সেটা নিয়ে সমালোচনা। সেখানে নাকি টাকা মেরেই খেয়ে দিলাম। যারা ওরকম টাকা খেয়ে অভ্যস্ত, টাকা খাওয়ার বিষয়টা বোঝে ভালো। কিন্তু আমরা যদি তখন এটা না আনি, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারতাম না।
“আমরা বলেছিলাম, বিদ্যুৎ ঘরে ঘরে দেব, আমরা দিয়েছি। কিন্তু এখন যে ক্রাইসিস, সেটা তো বাংলাদেশের না, এটা তো…। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবাই এই ক্রাইসিসে ভুগছে।’
দেশের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্রাজিল থেকে সয়াবিন ও চিনি আমদানির চেষ্টার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেন।
দুর্ভিক্ষের শঙ্কার কথা বলায় যারা সমালোচনা করছেন, তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি কিন্তু আগাম কিছু কিছু কথা বলি। অনেকে মনে করেন, আমি কেন বলি? কই থেকে বলি? এটা হচ্ছে আমার একটা ধারণা, অর্থাৎ দীর্ঘদিনের একটা অভিজ্ঞতা।
“যখন ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধটা হল, সারা বিশ্বে এটার অর্থনৈতিক ধাক্কাটা আসলো। শুধু আমাদের ওপর না, পুরো ইউরোপ, আমেরিকা, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে ডেভেলপড কান্ট্রির ওপরে এর প্রভাব আরো ব্যাপকভাবে পড়ল। তখন আমি বললাম যে আগামীতে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা হতে পারে। এখন তো সবাই সে কথাই বলছে, কালকে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এ কথাটাই বলছে, বলছে যে বিরাট ক্রাইসিস সামনে। এটা যে শুধু আমরা বলছি তা নয়।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যেটা আশঙ্কা করি, আমি পাবলিকের কাছে সরাসরি বলি। আমার এখানে লুকানোর কিছু নেই। জনগণ ভোট দিছে ক্ষমতায় আছি, না দিলে থাকব না। কিন্তু জনগণের জন্যই তো কাজ করতে এসেছি।”
গণভবনের এই সভায় শেখ হাসিনা তেল, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য দেশের সকল নাগরিকের কাছে ‘যথাযথ মূল্যে’ সরবরাহ করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মধ্যে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, টি কে গ্রুপের এমডি মোস্তফা হায়দার, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের অমিতাভ চক্রবর্তী, সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেডের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, এস আলম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী সালাউদ্দিন আহমেদ, দেশবন্ধু গ্রুপের এমডি গোলাম রহমান, মেঘনা গ্রুপের এমডি মোস্তফা কামাল ও এসিআই লিমিটেডের এমডি আরিফ দৌলা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।
অন্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংকরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান এবং আওয়ামী লীগের শিল্পও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।