মা এরিকো নাকানো ও বাবা ইমরান শরীফের দুটি আপিল আবেদনের ওপর রোববার শুনানির দিন ধার্য ছিল; বেঞ্চের সব সদস্য না থাকায় শুনানি এক সপ্তাহ পেছানো হয়।
Published : 21 Apr 2024, 01:07 PM
সন্তানদের জিম্মা নিয়ে জাপানি মা ও বাংলাদেশি বাবার আবেদনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়েছে।
রোববার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী সপ্তাহে দিন রেখেছে।
মা এরিকো নাকানো ও বাবা ইমরান শরীফের দুটি আপিল আবেদনের ওপর রোববার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেঞ্চের সব সদস্য উপস্থিত না থাকায় শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হয়।
নাকানোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এবং ইমরান শরীফের আইনজীবী আখতার ইমাম এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আখতার ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেঞ্চের সব বিচারপতি না থাকায় আগামী সপ্তাহে শুনানি করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।”
বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফ জাপানে অবস্থানকালে ২০০৮ সালে জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোকে বিয়ে করেন। টোকিওতে এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন মেয়ের বাবা-মা হন।
দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি বিচ্ছেদের আবেদন করেন নাকানো। এরপর স্কুলবাসে করে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্টপেজ থেকে ইমরান বড় দুই মেয়েকে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান বলে নাকানোর ভাষ্য।
ওই বছর ২৮ জানুয়ারি সন্তানদের জিম্মা চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন নাকানো। আর ইমরান ২১ ফেব্রুয়ারি বড় ও মেজ মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে থেকে যায় জাপানে।
মেয়েদের ফিরে পেতে করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন নাকানো। তিনি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলে বিচারক।
কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস ধরে শুনানির পর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হাই কোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছিলেন মা নাকানো। পরে আপিল বিভাগ ওই বছর ১৫ ডিসেম্বর এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দিলেও বাবা তা না মানায় বিচারকরা উষ্মা প্রকাশ করেন।
পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেয়।
এরপর আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেয়, দুই মেয়ে কার জিম্মায় থাকবে তার নিষ্পত্তি পারিবারিক আদালতে হবে এবং তার আগ পর্যন্ত দুই শিশু তাদের মায়ের কাছেই থাকবে।
২০২২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই রায় দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগ থেকে মামলাটি পারিবারিক আদালতে যায়।
পরের বছর ২৯ জানুয়ারি ইমরান শরীফের করা মামলা খারিজ করে দিয়ে দুই শিশুকে মা নাকানো এরিকোর জিম্মায় রাখার সিদ্ধান্ত দেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান।
ওই রায় চ্যালেঞ্জ করে ঢাকার জেলা জজ আদালতে আপিল করেন ইমরান শরিফ। ১৬ জুলাই তা খারিজ হয়ে গেলে তিনি যান হাই কোর্টে।
এ বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট সিদ্ধান্ত দেয়, বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা ও ছোট মেয়ে সোনিয়া থাকবে তাদের মা নাকানো এরিকোর কাছে। আর মেজ মেয়ে লাইলা লিনা থাকবে বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে। তবে বাবা ও মা দুজনই চাইলে তাদের সব সন্তানের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন।
রায়টি সম্প্রতি প্রকাশ হওয়ার পর বাবা ও মা পৃথক আপিল আবেদন করেন। ইমরান শরীফ বড় মেয়েকে তার কাছে চেয়ে এবং এরিকো মেজ মেয়েকে চেয়ে লিভ টু আপিল আবেদন করেন।
এর মধ্যে ইমরানের করা একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদনও ছিল; যেখানে বলা হয়, মেয়েকে যেন দেশের বাইরে না নেওয়া হয়।
ওই আবেদনের ওপর ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত শুনানির জন্য গত ১৫ এপ্রিল ঠিক করে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। কিন্তু এর মধ্যে বড় মেয়েকে নিয়ে মা নাকানো এরিকো জাপানে চলে যান।
ওইদিন ইমরান শরীফের আইনজীবী রাশনা ইমাম বলেছিলেন, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তার পরও বড় সন্তানকে নিয়ে এরিকো চলে গেছেন। এ কারণে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে।
সেই আদালত অবমাননার আবেদন এবং লিভ টু আপিলের ওপর রোববার শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
নাকানোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলছেন, গত ৯ এপ্রিল দুপুর ১টায় আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছিলেন। এ আদেশ হওয়ার আগে বেলা ১১টার দিকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে তারা দেশত্যাগ করেন।