এ ঘটনায় চালক, তার সহকারী ও পরিচালককে বরখাস্ত করা হয়েছে।
Published : 23 Oct 2023, 08:42 PM
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার জন্য কনটেইনারবাহী ট্রেনের চালক ও তার সহকারীকে দায়ী করছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় তিনি বলেছেন, “আমরা পেয়েছি ওই কনটেইনারবাহী ট্রেনটির চালক ও সহকারী চালক সিগন্যাল অমান্য করায় এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাদের দাঁড়ানোর কথা ছিল ভৈরব স্টেশনের আউটার সিগন্যালে।
“কিন্তু তারা সেটি না করে সিগন্যাল অমান্য করে ট্রেনটি চালিয়ে চলে আসে। একই সময় ভৈরব স্টেশন থেকে বের হয়ে ঢাকার পথে আসছিল যাত্রীবাহী এগার সিন্ধুর এক্সপ্রেস। চট্টগ্রামমুখী মালবাহী ট্রেনটির ইঞ্জিন এগার সিন্ধুরের পেছন থেকে তৃতীয় বগিতে আঘাত করে।”
সোমবার বিকাল পৌনে ৪টার দিকে ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনের আউটারে দুর্ঘটনাটি ঘটে, যাতে অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে।
কোনো স্টেশনের আউটার হচ্ছে ট্রেনগুলোকে অপেক্ষায় রাখার জায়গা। অন্য ট্রেনকে জায়গা দিতে আউটার এলাকায় ট্রেন থামার সংকেত বাতি (সিগন্যাল) আগেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।
সেই সংকেত বাতি জ্বলেনি, নাকি কনটেইনার ট্রেনের চালক সংকেত দেখতে পাননি- এমন প্রশ্নের উত্তরে রেল কর্মকর্তা নাজমুল বলেন, “এটা তো তদন্তের বিষয়। তিনি সিগন্যাল দেখেননি, না অন্য কোনও কারণ ছিল- এসব খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি কাজ করবে।”
রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জানান, এগার সিন্ধুর যখন ঢাকার দিকে যাচ্ছিল, তখন এটার পেছনের অংশে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি।
“সেখানে একটা সাইড কলিশন হয়েছে। যার ফলে হতাহত আছে। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সেখানে কাজ করছে। আমাদের উদ্ধারকারী ট্রেন ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে।"
এ ঘটনায় কনটেইনারবাহী ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার), সহকারী লোকো মাস্টার ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান।
তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা তদন্তে তারা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। একটিকে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে এবং অপরটিকে ও পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর বাইরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তরফে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, উদ্ধারকৃত লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। লাঙ্গ শনাক্তে ফিঙ্গার প্রিন্ট প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে পুলিশের সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, মালবাহী ট্রেনটি এগার সিন্ধুর ট্রেনের পেছনের দুটি বগিতে আঘাত করে বলে প্রাথমিকভাবে তারা জেনেছেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টা নাগাদ ১৭ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, উদ্ধারকাজ চলছে।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ জানান, দুর্ঘটনায় আহত এ পর্যন্ত ৭০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ২১ জনকে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত একই পরিবারের দুই শিশুসহ ছয়জনকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
তারা হলেন- জীবন মিয়া (৪০), তার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৩৫), তাদের মেয়ে তন্নিমা (১৫), দুই ছেলে জিয়াদ (১০) ও সোয়াদ (৮) ও ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী আবুল কাশেম (৫৫)।